Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা সময়ের দাবি

তারেক আল মুনতাছির
৭ জুন ২০২৫ ১৬:৩৭

ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলোর মধ্যে কোরবানি অন্যতম। প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আযহার সময় মুসলমানেরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন। এটি একদিকে যেমন ধর্মীয় উৎসব, তেমনি সমাজে সাম্য, সহানুভূতি ও ত্যাগের বাণী ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু কোরবানির এ আনন্দ অনেক সময় পরিবেশের জন্য বিষাদ বয়ে আনে, যদি আমরা যথাযথভাবে পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করি। কোরবানির পশুর রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, চামড়া ছাড়ানোর পর ফেলে রাখা অংশ, খুর, শিং, হাড়, গোবর এসব যদি সঠিকভাবে সরানো না হয়, তাহলে তা পরিবেশ দূষণ এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে।

বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। অল্পসংখ্যক খোলা জায়গা, জনবহুলতা, অপরিকল্পিত গৃহস্থালি ও যানচলাচলের ভিড়ে যেখানে পশু কোরবানি করা হয়, সেখানেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে রক্ত ও উচ্ছিষ্ট। অনেকে কোরবানির পশুর খাওয়ার অনুপযুক্ত অংশগুলো রাস্তার পাশে কিংবা ড্রেনের পাশে ফেলে রাখেন। এতে করে দুর্গন্ধ ছড়ায়, আশপাশের পরিবেশ নোংরা হয় এবং এসব স্থান থেকে দ্রুত রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। কুকুর, বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণী এসব বর্জ্য টেনে-হিঁচড়ে বিভিন্ন অলিগলিতে নিয়ে যায়। সেখানে তা পচে গিয়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে।

বিজ্ঞাপন

কোরবানির দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকদিন পর্যন্ত বর্জ্য যদি অপসারণ না করা হয়, তাহলে সামান্য বৃষ্টিতেই তা নর্দমা বন্ধ করে দিয়ে জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে শুধু পরিবেশ দূষণই হয় না নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। অনেক সময় সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার গাড়ি যথাসময়ে পৌঁছাতে পারে না কিংবা যেসব জায়গায় গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না, সেসব এলাকায় বর্জ্য জমে দীর্ঘদিন দুর্গন্ধ ছড়ায়।

অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিছুটা সহজ ও সচেতনভাবে হয়। গ্রামের মানুষ কোরবানি শেষ হওয়ার পর পশুর নাড়িভুঁড়ি, হাড় ও অন্যান্য উচ্ছিষ্ট মাঠের কোনো এক পাশে গর্ত করে পুঁতে রাখে। এতে দুর্গন্ধ ছড়ায় না এবং দীর্ঘমেয়াদে এসব উপকরণ জৈবসারে রূপান্তরিত হয়। ফলে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যায়। শহরের মানুষ চাইলে গ্রামের এই উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে। একত্রে নির্ধারিত খোলা জায়গায় কোরবানি করা হলে এবং কোরবানির স্থানে গর্ত করে বর্জ্য পুঁতে ফেলা হলে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। কোরবানির সময় পশু জবাইয়ের স্থানও বাছাই করা জরুরি। যেসব জায়গায় পানি জমে, সেসব স্থানে কোরবানি না করাই ভালো। নিম্নাঞ্চলে বা বন্যাপ্রবণ এলাকায় পশু কোরবানির সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে রক্ত বা উচ্ছিষ্ট পানিতে মিশে না যায়। সম্ভব হলে উঁচু জায়গায় কোরবানি করে, সেখানে গর্ত করে বর্জ্য মাটিচাপা দেওয়া উচিত।

পশুর রক্ত যেন চারদিকে ছড়িয়ে না পড়ে, সে দিকেও আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। একটি ছোট গর্তে রক্ত জমিয়ে পরে মাটি দিয়ে তা ঢেকে দিলে দুর্গন্ধ ছড়াবে না এবং মাছি বা কীটপতঙ্গও জমবে না। চামড়া ছাড়ানোর পর যে জায়গাটিতে কাজ করা হয়, সেটিকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবাণুনাশক ব্যবস্থা নিতে হবে। আজকাল অনেক জায়গায় দেখা যায়, প্লাস্টিকের ব্যাগে করে বর্জ্য ফেলে ডাস্টবিনে রাখা হচ্ছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ, তবে সেটি যথাযথভাবে করতে হবে। রাস্তার পাশে না রেখে নির্ধারিত স্থানেই ফেলা উচিত এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন সেগুলো কুকুর বা অন্য প্রাণী ছিঁড়ে না ফেলতে পারে।

কোরবানির আগে এবং পরে আমাদের সচেতনতামূলক প্রচার চালানো দরকার। স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক সংগঠন এবং গণমাধ্যমের সমন্বয়ে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করলে অনেকটাই সুফল পাওয়া যাবে। যেমন ২০২৩ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ঘোষণা দিয়েছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য সরিয়ে ফেলা হবে। এই প্রচেষ্টায় সাফল্য এসেছিল অনেকাংশে, তবে জনসচেতনতার ঘাটতির কারণে কিছু এলাকাতে বর্জ্য দীর্ঘ সময় থেকে গিয়েছিল। এজন্য নাগরিকদেরও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের যত বেশি সচেতনতা থাকবে, তত বেশি আমরা পরিবেশকে রক্ষা করতে পারব। এটি শুধু একটি পরিচ্ছন্নতা ইস্যু নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্বও পালন করাই প্রকৃত কোরবানির শিক্ষা।

লেখক: শিক্ষার্থী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, কক্সবাজার

সারাবাংলা/এএসজি

কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তারেক আল মুনতাছির মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর