বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম ও লজ্জাজনক ঘটনা পিলিখানা হত্যাকাণ্ড। সেদিন আমরা হারিয়েছিলাম দেশের সবচেয়ে মেধাবী, চৌকস ও দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসার সহ মোট ৭৪ জনকে। নতুন বাংলাদেশে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পুনরায় তদন্ত সাপেক্ষে এর আদ্যোপান্ত জনগণের সামনে উন্মোচন ও প্রকৃত দোষীদের বিচারের প্রত্যাশা এখন সবার৷ কী কারণে বিডিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করেছিলো, কেন হত্যাকাণ্ড ঘটলো আর কেনইবা অবরুদ্ধ অফিসারদের উদ্ধারের নির্দেশ বা বিদ্রোহ দমনের উদ্যোগ না নিয়ে কালক্ষেপণ করা হলো অফিসারদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত। শুধুমাত্র সাধারণ কিছুর দাবীর জন্য বিডিআর সদস্যরা নির্মমভাবে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে অফিসারদের হত্যা করবে এটা অবিশ্বাস্য এবং অবান্তর।
শেখ হাসিনার পিলখানায় হত্যাকান্ড ঘটার আগেরদিন রাতে পিলখানায় খাবারের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা ও গণভবন ছেড়ে নিরাপদ যায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করার মাধ্যমে ঘটনাটি আগে থেকে জানার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সেনা অফিসারসহ বিভিন্ন মহল থেকে পিলখানায় দ্রুতই অপারেশন শুরু করার জোরদাবী থাকলেও শুধুমাত্র হাসিনার জন্য সেই তৎপরতা শুরু করা যায়নি। ভুক্তভোগী, বিশ্লেষক, সামরিক ও বেসামরিক অনেকেই সরাসরি হাসিনাকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছেন।
জানা যায় যে, ১ মার্চ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জে সেনা সদস্যদের সাথে হাসিনা দেখা করতে গেলে সেখানে কিছুটা উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং সেখানে সেনা সদস্যরা হাসিনাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন ও উত্তর জানতে চান। হাসিনা যৌক্তিক কোনো উত্তর সেদিন দিতে না পেরে সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসেন। সেনাকুঞ্জের এই সভায় যেসকল সেনা সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছিলেন তাদের জীবনেও পরবর্তীতে নেমে আসে অত্যাচারের স্টিমরোলার। বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে শেখ হাসিনা ২০০ জনেরও অধিক অফিসারকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দেয়।
হাস্যকর সব কারণ দেখিয়ে অফিসারদের বের করে দেয়া হয়েছিলো। যেমন: মেজর রেজাউল করিম কে বের করা হয় ব্যারিস্টার তাপসের উপর বোমা হামলা করার অভিযোগ এনে, অথচ আসল কাহিনি ছিলো তাপসের বাসার পাসে একটা এসি বিস্ফোরণের ঘটনা যেখানে কেউ হতাহত হয়নি, মেজর রেজাউল করিমকে পাঁচ বছর জেল খাটানো হয়। জেল খেটে বের হওয়ার পরেও তাকে চাকরি বা ব্যাবসা করতে বিভিন্ন ভাবে বাধা দেওয়াসহ নানারকম হুমকি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ক্যাপ্টেন ড. খান সুবায়েল বিন রফিক ছিলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত রিপোর্টসহ তাকে শেখ হাসিনার রুমে ডেকে নেয়া হয় এবং এই রিপোর্ট হাসিনার মনমতো না হওয়ায় হাসিনা তার সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রিপোর্টে আওয়ামিলীগ এর বেশ কয়েকজন এমপি মন্ত্রীদের নাম থাকায় শেখ হাসিনা রিপোর্টটি তার মুখে ছুড়ে মেরে সেটি পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। তিনি রিপোর্ট পরিবর্তন করার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে ৩৬১ দিন আয়না ঘরে বন্দি করে রাখা ও সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করাসহ দেশ ছাড়তে বাধ্যকরা হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে এখনো অনেক ক্ষোভের পাশাপাশি বিচারের প্রত্যাশা রয়ে গেছে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও দোষীদের জনগণের সামনে নিয়ে আসার প্রত্যাশা থাকবে।
পীলখানা হত্যাকাণ্ডের পরে অকারণে যেসকল চৌকস অফিসারদের আর্মি, বিডিআর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সাথে চাকরিতে পুনর্বহাল করা এখন জনগণের প্রত্যাশা।
হাসিনা সরকারের জুলুমের শিকার, পদন্নোতি আটকে থাকা অফিসারদের যথাযোগ্য পদোন্নতি অতি দ্রুত দেয়া হোক।
দূর্নীতিবাজ, গুম, খুনের সাথে জড়িত ও হাসিনার সহোযোগি অফিসারদের অতি দ্রুত সামরিক বাহিনী ও পুলিশ থেকে বরখাস্ত করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।
সামরিক বাহিনীতে পদন্নোতি হোক কাজের সফলতা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে। যেকোনো ভাবে রাজনৈতিক নিয়োগ, পদায়ন বন্ধ করা হবে, সাম্প্রতিক সময়ে সর্বসাধারণের প্রত্যাশা এরকমই।
লেখক: কো-অর্ডিনেটর, ইন্টারন্যাশনাল পলিসি রিসার্চ সেন্টার