Monday 01 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতির ক্রান্তিকালে দেশ ও জনগণের পাশে দাঁড়াবে বিএনপি

সর্দার এম জাহাঙ্গীর হোসেন
১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৪১

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে ঘিরে দলটিতে চলছে নানা আয়োজন। পঁচাত্তরের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে দলটির জন্ম সেই দলটি তার ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করছে এমন একটি সময়ে যখন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ফের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার ধাওয়ার মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। তার দল আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত। গণহত্যার দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দলটির নেতারা। এই অবস্থায় দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশার চাপ এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার ভেতর দিয়ে খুবই সজাগ দৃষ্টি রেখে পথ চলতে হচ্ছে বিএনপিকে।

বিজ্ঞাপন

শেখ মুজিব হত্যার পর ১৯৭৭ সালে আবির্ভাব হয় মহান স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায় বিচার, নিরাপত্তা বাহিনীতে শৃ্ঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনেন। দেশে বিরাজ করতে থাকে শান্তি শৃঙ্খলা। গড়ে উঠে শিল্প কারখানা। জনগণের বেকারত্ব সমস্যা দূর হয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেন তিনি। এতে খুব দ্রুতই শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটতে থাকে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে। সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি পেতে থাকে।

রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। যা এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব কম সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সেনা ছাউনিতে গড়া একটি রাজনৈতিক দলের জন্য বিএনপিই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র দল যেটি তার প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পরও দোর্দন্ড প্রতাপে টিকে রয়েছে। কেবল টিকেই থাকেনি বরং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ভোটাধিকার-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দলটি কালের সকল প্রশ্নকে উতরে এসেছে অত্যন্ত সততার সঙ্গে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এবং বিএনপির নেতৃত্বে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, তৈরি পোশাকের বিশ্বব্যাপী বাজার সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে সৌদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়। রেমিটেন্স প্রবাহ তরতরিয়ে বাড়ে। যা দেশের রিজার্ভকে শক্তিশালী করে। কৃষিতে বিপ্লব সাধিত হয়। শিক্ষা, শিল্প-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিসহ সকল দিক ও বিভাগের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়। দেশের রাজনৈতিক সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করে।

পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যার মধ্যে দিয়ে দেশে আবারো স্বৈরশাসকের আবির্ভাব ঘটে। ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদ। তার দীর্ঘ ৯ বছর অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সঙ্কটের আবর্তে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্কটময় মুহূর্তেও জাতির সামনে হাজির হয় বিএনপি। রাজপথে গড়ে ওঠে আন্দোলন। যার নেতৃত্বে ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম করে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়। ফল হিসেবে বাংলাদেশ পায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৯৯১ সালের ওই নির্বাচনে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে দেশ সেবার সুযোগ পায় বিএনপি। দেশে আবারো বইতে শুরু করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ। সাধারণ মানুষ ফিরে পায় তাদের কথা-কর্ম ও চিন্তার স্বাধীনতা।

২০০১ সালের নির্বাচনে আবারো জনগণের ভোটে বিএনপি সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। যদিও এই সময়ের মধ্যে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি বিএনপিকে উৎখাতে কম ষড়যন্ত্র করা হয়নি। কিন্তু দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে যে দল রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাদের কোনো অপশক্তিই হঠাতে পারে না। তারাও পারেনি। যদিও বিএনপি শাসনকালের শেষে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে দেশে জারি হয় সেনা শাসন। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। বিএনপির ওপর চলে নিপীড়নের স্টিম রোলার। সেই থেকে চব্বিশের ৫ আগস্ট পর্ন্ত ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অন্ধকার যুগ। হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমল। যেই সময় দেশ থেকে হারিয়ে যায় গণতন্ত্র, বিলুপ্ত হয় ভোটাধিকার, নির্বাচন হয়ে ওঠে তামাশা মাত্র। আর এর বিপরীতে যারাই কথা বলেছে তাদের ওপরও অমানবিক নির্াতন চালানো হয়। গুম-খুন, হামলা-মামলায় জর্জরিত করা হয় গণমানুষের দল বিএনপিকে।

মিথ্যা বানোয়াট মামলায় কারাগারে পাঠানো হয় আপোসহীন নেত্রী, তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। নির্মম নির্াতন করে বিদেশে যেতে বাধ্য করা হয় বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে।

ক্ষমতার দম্ভে পাগল হয়ে যান শেখ হাসিনা। অবশেষে তার সেই দম্ভের অবসান ঘটে চব্বিশের ৫ আগস্ট। এদেশের মুক্তকামী মানুষের ছত্রিশ দিনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি। তার এই পলায়ন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মন্ত্রী থেকে মসজিদের ইমাম, ছাত্র নেতা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর-এক সঙ্গে এতো মানুষের পলায়ন শেখ মুজিবের দল আওয়ামী লীগের মুখে চুনকালি লেপে দেয়। এই পলায়ন চরম লজ্জা আর অপমানের।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পলাতক ফ্যাসিস্টরা বসে নেই। বসে নেই বাইরের শত্রুগুলো। এই অবস্থায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্ন সামনে এলে আবারো বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে বিএনপি। কেননা এই দলের প্রতিটি কর্মীই শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদী চেতনাকে লালন করে রাজনীতি করেন। তাদের কাছে ব্যক্তির চেয়ে দল আর দলের চেয়ে বড় দেশ। ৪৭তম জন্মদিনে প্রিয় এই দলটির জন্য রইলো অফুরন্ত শুভ কামনা।

লেখক: সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক (চায়না), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি

সারাবাংলা/জিএস/এএসজি

বিএনপি মুক্তমত সর্দার এম জাহাঙ্গীর হোসেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর