Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান একটি নাম, একটি ইতিহাস


১৫ জুন ২০২০ ২৩:১৯

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান একটি নাম, একটি ইতিহাস। পৌরসভার কমিশনার থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। সিলেটের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র অমর হয়ে থাকবেন রাজনীতি আর জনপ্রতিনিধির তালিকায়। ২০০৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জন্ম ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি। ৬৯ বছর বয়সে ২০২০ সালের ১৫ জুন তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটে ও প্রবাসে শোকের ছাঁয়া নেমে এসছে। ২০০৩ সালে থেকে টানা ১০ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করে ২০১৩ সালের এই দিনে তিনি মেয়রের পদ থেকে বিদায় নেন।

বিজ্ঞাপন

সদা হাস্যজ্জ্বল, সরল প্রকৃতির অমায়িক ব্যবহার দিয়ে তিনি জয় করে নিয়েছিলেন সাধারন জনগণসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের হৃদয়। বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন আর জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর কর্মজীবন দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘জনতার কামরান’।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর পৌর চেয়ারম্যান থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, এরপর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। সর্বশেষ দুটি সিটি নিবার্চনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন কামরান।

মহামারি করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালীন সময়ে সবাইকে কাঁদিয়ে সোমবার (১৫ জুন) পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন সিলেটের সবার প্রিয় রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটের আরেক নক্ষত্রের পতন হলো। প্রিয় নেতার শোকে কাতর সিলেটবাসী। স্বাভাবিক সময়ে জানাজায় যেখানে লাখো মানুষের ঢল নামতো। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হিসেবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হয়তো সীমিত আকারে জানাজা পড়তে হবে।

বিজ্ঞাপন

সিলেট পাইলট স্কুলে ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি কামরানের। ছাত্র রাজনীতি থেকে শহর, নগর থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পৌঁছেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। দলের জন্য প্রশংসিত নেতৃত্ব দিয়ে পৌঁছান শেকড় থেকে শিখরে। দীর্ঘ তিন দশক পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মহানগর আওয়ামী লীগের মুকুট হারান কামরান। পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে নির্বাহী সদস্য করা হয় কামরানকে।

১৯৬৯ এর উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান তিনি। সেই থেকেই সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝখানে প্রবাসে থাকায় একবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান।

বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় দুইবার কারাবরণ করতে হয় এই নেতাকে। ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন।

১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন কামরান।

২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। দীর্ঘ তিন দশক সিলেটের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও দলের প্রয়োজনে পুরো সিলেট বিভাগ চষে বেড়িয়েছেন কামরান। প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের পক্ষে সরব ছিলেন তিনি। ভোট চেয়েছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে। দীর্ঘ সময় ধরে সিলেটে আওয়ামী লীগের সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সাথেও তার সুসম্পর্ক ছিল।

সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল কামরান মাথায় সাদা টুপি, মুখে কালো গোঁফ। কখনো চোখে সাদা চশমা পড়া লোকটি ছিলেন সিলেটের মানুষের অতি আপনজন। যেকোন প্রয়োজনে, যেকোন সময় মানূষ তাঁর কাছে যেতে পারতো। বলতে পারতো সুখ-দুঃখের কথা। মেয়র না হয়েও তিনি জনতার মেয়র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মহানগরের নেতৃত্ব হারালেও একটি মিনিটের জন্য তিনি থেমে থাকেননি। অংশ নিয়েছেন প্রতিটি কর্মসূচিতে, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ও পাশে ছিলেন প্রিয় নগরবাসীর।

মূলত স্থানীয় রাজনীতি থেকে অবসর আর তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আসমা কামরান ২৭ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তিনি কিছুটা পড়েন। পরবর্তীতে ৫ জুন তিনি নিজে আক্রান্ত হলে দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়েন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে সিলেট থেকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সিএমএইচে স্থানান্তর করে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু সুস্থ হয়ে তার প্রিয় ‍সিলেটে ফেরা হলো না।

লেখক: সভাপতি, বৈদেশিক সংবাদদাতা সমিতি, সিলেট (ওকাস)

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর