Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা প্রতিরোধে হোমিও ওষুধ কতটা কার্যকর?


১৭ জুন ২০২০ ১৬:৪১

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর কোন প্রতিষেধক সারাবিশ্বের কোথাও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এটি পেতে ও বাজারে আসতে আরও সম্ভাব্য এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত না হওয়ায় আবির্ভাবের শুরু থেকেই লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসার মাধ্যমে একে মোকাবেলা করা হচ্ছে। তাই করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে খোঁজা হচ্ছে নানা বিকল্প পথ।

সম্প্রতি হোমিও ওষুধ Arsenic Album-30 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় অনেকেই এই ওষুধ সম্পর্কে জানতে উদগ্রীব। তাই এই বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিতে আজকের এই লেখা।

বিজ্ঞাপন

Arsenic Album-30 কীভাবে করোনা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে?
হোমিও চিকিৎসায় genus epidemicus theory অনুযায়ী কোন সমাজ বা রাষ্ট্রে কোন মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে, সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের শরীরে যে লক্ষণ প্রকাশ পায়, সেই লক্ষণের সাথে মিল আছে এমন হোমিও ওষুধটি যারা আক্রান্ত হয়নি তাদের পূর্বেই সেবন করালে, সেটি ওই সকল মানুষের শরীরে ওই মহামারীর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। ফলে Natural immunity boost হয়ে ওই জীবাণুর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকবেন। এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক ডা. হানেমান ১৮৩১ সালে কলেরা মহামারিতে Camphor ব্যাবহার করেছিলেন ও অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন শতাব্দিতে ঘটে যাওয়া গুটিবসন্ত, হাম, অ্যানথ্রাক্স, ডিপথেরিয়া ও স্কারলেট ফিভারসহ বিভিন্ন মহামারিতে এই genus epidemicus ব্যাবহার করে হোমিও চিকিৎসায় অনেক সফলতা পেয়েছিলেন সে সময়ের চিকিৎসকবৃন্দ।

বিজ্ঞাপন

এটি কি সব দেশের জন্য একইভাবে কার্যকরী?
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া ও জীবাণুর জেনোটাইপ পরিবর্তনের কারণে ভিন্ন ভিন্ন দেশে এর লক্ষণের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হতে পারে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সবদেশেই একই ওষুধ ওই মহামারি প্রতিরোধে সমানভাবে কাজ করবে এটি সঠিক নয় বরং লক্ষণের ভিন্নতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচিত হতে পারে যার কারণে ইতালি ও ইরানসহ শীতপ্রধান অনেক দেশে Camphora-1M কে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর হিসেবে মতামত দিয়েছেন সেদেশের হোমিও চিকিৎসক সমাজ।

করোনা প্রতিরোধে কিভাবে এটি নির্দেশিত হলো?
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ভারতে হোমিও ওষুধ Arsenic Album-30 এর সাথে সেখানকার করোনার লক্ষণের মিল থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তথা করোনা প্রতিরোধ করতে এটিকে সরকারিভাবে সেবনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুজরাটে ৭৬ লাখ মানুষকে সেবন করিয়েছেন, এদের মধ্যে ২ হাজার ৬২৫ জন করোনা ঝুঁকির কাজে জড়িত ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতো যার মধ্যে মাত্র ১১ জন কোভিড পজিটিভ সনাক্ত হয়েছিল এবং বাকিদের হয়নি। এই ১১ জনের মধ্যে সামান্য মৃদু লক্ষণ দেখা দিয়েছিল ও পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ আক্রান্তের হার ও ঝুঁকি অনেক কম।

বাংলাদেশে এটির প্রয়োগ
ভৌগলিক ও পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড থেকেও এটি সেবনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের এটি সেবনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথি ইউনিভার্সিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন করে এটিকে সর্বসাধারণের মাঝে বিতরণ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এটি সেবন করছেন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় হোমিও চিকিৎসা সেবা প্রদানে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে যা আমরা গণমাধ্যমে সম্প্রতি দেখেছি।

ব্যাক্তিগত চিকিৎসার ক্ষেত্রে চেম্বারে আসা অনেক রোগীকেই Arsenic album-30 সেবন করতে দিয়েছি। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আক্রান্ত রোগীদের লক্ষণের বিবেচনায় Bryonia Alba-30 ওষুধটিও অনেককেই পর্যায়ক্রমে সেবন করতে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত তারা সবাই সুস্থ রয়েছেন। বাংলাদেশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে Bryonia Alba-30 ওষুধটি অনেকটা সফলতা দেবে বলে মনে করছি। (আরেকটি ওষুধের ট্রায়াল চলছে যা পরবর্তীতে জানানোর চেষ্টা করব)।

এটি কি শতভাগ কার্যকরী?
না, সেটা বলার এখনও সুযোগ নেই। যেহেতু গোটাবিশ্বে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন তাই এর প্রকৃত ফলাফল আসতে আরও সময় লাগবে। ভারতের নৈমিনাথ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও সুস্থদের উপর আলাদ আলাদা ভাবে ট্রায়াল চলছে এবং অনেক ভালো ফলাফল পেয়েছেন যা জি ২৪ ঘণ্টা টিভিতে অনেকবারই রিপোর্ট আকারে এসেছে। বাংলাদেশেও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আক্রান্ত ও সুস্থদের উপর হোমিও চিকিৎসায় অভাবনীয় সাফল্য মিলেছে যা গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বলা যায়, করোনা প্রতিরোধে Immunity Booster Dose হিসেবে এটি অনেকটাই কার্যকর ও এখন পর্যন্ত সফল।

পরামর্শ
কারও করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে বাসায় অবস্থান করে নিকটস্থ যেকোন রেজিস্টার্ড হোমিও চিকিৎসকের কাছে অন্য কাউকে পাঠিয়ে ফোনে বিস্তারিত জানিয়ে ওষুধ সেবন করতে পারেন। করোনা সংক্রমণসহ যেকোন ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হোমিওতে অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে। যারা হাসপাতালে ভর্তি থেকে হোমিও চিকিৎসা নিতে চান তারা ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে আইসলেশন ইউনিটে ভর্তি থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।

এছাড়া বাংলাদেশের যেসকল সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত হোমিও চিকিৎসক রয়েছেন সেসকল হাসপাতালে আলাদা আইসলেশন ইউনিট চালু করে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের উপর হোমিও চিকিৎসা আরও ব্যাপকভাবে পরিচালনা করতে পারলে এর প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ফ্রন্ট লাইনার যোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে আগ্রহি এদেশের হোমিও চিকিৎসক সমাজ। তাই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে জনসাধারনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরও হোমিও চিকিৎসক নিয়োগ প্রদানে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

ওষুধ সেবনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত সকল স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলা, নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে একান্ত জরুরি।

লেখক- বি এইচ এম এস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), পি জি টি, এক্স হাউজ ফিজিশিয়ান, সরকারী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কনসালটেন্ট, হলিস্টিক হোমিওপ্যাথি সেন্টার, দনিয়া, ঢাকা।

Arsenic Album-30 করোনা সংক্রমণ কোভিড-১৯ হোমিও ওষুধ হোমিও চিকিৎসক হোমিও চিকিৎসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর