Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফুটবলের বিকাশ ও প্রধানমন্ত্রী সমীপে কিছু প্রস্তাবনা


১২ জুলাই ২০২০ ১৪:২৫

কামরুল হাসান নাসিম

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

পরম করুণাময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকতেই হয়। আস্থাও রাখতে হয়। কারণ, আপনি সুস্থ আছেন বলে অনুমিত হয়। কোভিড-১৯ ও আজকের জনজীবন। উৎকণ্ঠায় ও স্থবিরতায় যথাক্রমে মন ও সমাজ। না, এখন স্বাধীনতার জন্য লড়াই নেই। আছে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ববোধ। আছে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। আপনিই নিয়েছেন। পারছেনও। নাবিক হতে পারার ইচ্ছে। ইচ্ছের ঘুড়ি উড়ছিল। নাটাইও আপনার হাতে। হঠাৎ করে চলে এলো এই গ্রহে আপদ। নাম ‘করোনা ভাইরাস’। প্রকৃতির বিচারের অংশ হয়ে আসতে পারে! অশুভ উদ্যোগে জৈব অস্ত্র হয়েও আসতে পারে! দুনিয়ার সব শাসকের মতো করে ভাবলেন। আপনিও নাটাইয়ের সূতা গুটিয়ে বললেন, “রঙ্গীন ঘুড়ি, একটু বিশ্রাম নাও। তুমি আবারো উড়বে ওই নীল আকাশে।”

বিশ্রামাগারের জানালায় সংগ্রামের উঁকি। পুনরায় লড়াই করতে হচ্ছে আপনাকে। এই সেদিনই রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছিলাম। জনশ্রেণির উদ্দেশ্যে বলেছিলাম, ‘তোমরা একজন শেখ হাসিনার উপরেই আস্থা রাখো। প্রকৃতিবাদী হয়ে তাই ঈশ্বরে আস্থা, নাগরিক হয়ে শেখ হাসিনায় আস্থা।’

এই ফাঁকে করোনাকালে একটু সময় করে ঝালিয়ে নিন নিজেকে। জৈব অস্ত্র হয়ে কোভিড-১৯ এসেছে কিনা! একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে কৌতূহলী মনকে জাগিয়ে তুলতে পারেন। পারেন প্রকৃতির দরবারের চিত্র দেখতে। কল্পিত স্বপ্নের জাগরণে ভেসে অতি মানবিক সত্তা হয়ে। মনুষ্য হস্তক্ষেপ, নাকি প্রকৃতির খেলা; তা নিয়ে ভাবার যৌক্তিকতা থাকলেও আপনাকে পত্র লিখতে সাহস করার পেছনেও খেলা। হ্যাঁ, ফুটবল খেলা। প্রিয় বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কিছু কথা বলাই যাক।

আপনি অবগত আছেন যে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে এএফসি ও ফিফার সদস্যপদ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। শৈশব থেকেই আপনি পারিবারিক কৃষ্টির সাংস্কৃতিক সুবোধে আপ্লুত হয়ে ফুটবলকে ভালোবেসেছিলেন। হ্যাঁ, আমরা জানি, আজকের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন কত বড় খেলোয়াড় ছিলেন! আপনিও মনে করলেন, আপন ভাইদের সাথে তাকে দেখেছি। আস্থাও রাখা যায়। নৈতিক সমর্থন দিলেন। সেই ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব তিনি নিয়ে নিলেন। দেশবাসীও মনে করলো, খুবই ভাল সিদ্ধান্ত। তিনি যে সেই আমাদের প্রিয় সালাহউদ্দীন! সাথে ঢাকার ফুটবলের আরেক গ্রেট সালাম মুর্শিদি। আর কি লাগে! সাংবাদিকতা করতে যেয়ে আমরাও খুব আশাবাদী হয়ে উঠলাম। ধরেই নিলাম, এবার ফুটবলে বিপ্লব হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিপ্লব হয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য ব্যক্তিবিশেষের টিকে থাকার ব্যঞ্জনায় বিপ্লব ধরা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সত্তর দশক হোক, আশি কিংবা নব্বই, ঠিক যে জায়গায় ফুটবল ছিল, সেখানেও আমরা এখন নেই। তখনও যে আমরা পেরে উঠতাম তা নয়। এশিয়া প্যাসিফিক, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে কিংবা দুই কোরিয়া, জাপানদের সাথে তখনও চার গোল খেতাম, এখনো খাই। কিন্তু দেশের ফুটবল নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস ছিল, উন্মাদনা ছিল। ক্লাব ফুটবলের কথাই স্মরণ করা যাক। আবাহনী বনাম মোহামেডান! কি হয়নি এই দুই ক্লাব নিয়ে! মোদ্দকথা হল, জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ফুটবলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। খারাপ হতে ভালো। ভালো হতে হতে একদিন সেরা ফুটবল খেলুড়ে দেশ হতে পারতাম।
ক্রিকেটের কথাই ধরুন। একটা সময় ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের আদর্শ মনে করে অভিজাত ঘরের চরিত্রগুলো সৌখিনতায় ডুবে যেয়ে ক্রিকেট খেলত। একদিন দেখা গেল, নোবেল-নান্নু ব্রাদার্স, জাহিদ রাজ্জাক মাসুম, জি এম নওশের প্রিন্সেরা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সেই স্বপ্ন বুননের অভিযাত্রায় অগ্রণী ভুমিকা রেখে আকরাম, বুলবুল, সুজনেরা আমাদেরকে হতাশ করেনি। ফুটবলের ব্যর্থতা ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করায়। কারণ, বিশ্ব বা এশিয়ার একটি জনপ্রিয় খেলায় আমরাও ভালো কিছু করতে চাইছিলাম। তা করা গেছে। আমাদের সংগঠক, খেলোয়াড়, দর্শক মিলেমিশে একাট্টা হয়ে ক্রিকেট নিয়ে বিপ্লব করা গেছে। সংবাদমাধ্যমগুলোও ফুটবল থেকে সরে গিয়ে ক্রিকেটের উপর গুরুত্ব দিতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ক্রিকেট চলে যায় শহর ছাড়িয়ে পল্লী জীবনের নিরন্ন শিশুর হাতের অছিলায় মনের কোণেও। তারা ব্যাট আর বল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলেই নিম্নবিত্ত ঘরে জন্ম নিয়েও আজ জাতীয় দলের চেনামুখ হয়ে অনেকেই বলছে, “আমরাও পারি।”

অন্যদিকে একাবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দেশিয় সংবাদ মাধ্যমগুলোয় ফুটবল নিয়ে না মাতবার কারণে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যায়। এমন একটা সময় ছিল, ঢাকার ক্লাব ফুটবলের খেলার সচিত্র প্রতিবেদন শেষ হতো দুই দলে কারা কারা খেললেন তা জানিয়ে। স্বভাবতই মফস্বলেও ফুটবল ভক্তদের দেশের খেলোয়াড়দের নাম জানা হয়ে যেত। যা ধরে রাখা উচিত ছিল। সংবাদমাধ্যমগুলো সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেনি। আমাদের ব্যর্থতা, উদাসীনতায় ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে।

বিজ্ঞাপন

ফুটবল সারাবিশ্বে শ্রেষ্ঠ খেলা হিসাবে সমাদৃত। আমাদের দেশেও তাই। আমরা কেবল পারিনি দর্শকপ্রিয় হয়ে স্থানীয় খেলাটায় মজে যেতে। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তৈরি করতে হয়েছে বা পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা করে দিয়েছে। কিন্তু ফুটবলের তো জনপ্রিয়তা ছিলই। আজো আছে। না থাকলে, কেন রাত জেগে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের খেলা প্রতিরাতে মানুষ দেখছে? কেন তারা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা লিওনেল মেসির মধ্যে সেরা কে; তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিনভর তর্ক করতে থাকে? এর অর্থ হলো, ভালো ফুটবল খেলতে পারলে আবারও দর্শক তৈরি হবে। টিভি সেটের সামনে প্রিয় আবাহনী, মোহামেডান কিংবা আজকের বসুন্ধরা কিংস, সাইফ স্পোর্টিং, শেখ রাসেল ও শেখ জামাল ক্লাবের খেলা দেখতে বসে যাবে। যেখানে আগে মাত্র বিশেষত দুইটি ক্লাবের সমর্থক হয়ে উদ্দীপনায় ভর করত দর্শক। আজ সেখানে শেখ রাসেল দলটিও জনপ্রিয়তা পেতে পারে।

স্বপ্ন দেখার সাধ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার ওয়ান্ডারারস, ব্রাদার্স ইউনিয়ন কিংবা অফিস নামের দলগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ ফুটবলের জন্য কত কষ্ট করে ক্লাবগুলো বেড়ে উঠেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় মিরপুরের চলন্তিকা, বাড্ডার জাগরণী ক্লাবগুলো হারিয়েই গেল। বিকেএসপি প্রতিভা খুঁজে দেয়। এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়েও বাফুফে কাজ করতে পারেনি। গেল এক যুগে শুধু বিকেএসপি নিয়ে থাকলেও পাইপ লাইনে ফুটবলার থাকত আমাদের।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের প্রত্যেককে আপনি ভালো করেই চেনেন। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অভিমান আছে। সেই অভিমান হলো, কেন ফুটবলে আমরা পেরে উঠলাম না। একজন শেখ কামাল বেঁচে থাকলে ফুটবলের এই জীর্ণ দশা থাকতো কিনা? এটি একটি বড় জিজ্ঞাসা। তাহলে শেখ কামালের আধুনিক ভাবনার প্রতি কেউ শ্রদ্ধা দেখায়নি। কেউ কাতর হয়ে বলেনি, তাকে বাঁচিয়ে রাখতেও আমাদের ফুটবলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া উচিত। তাদের তো ঘুমই হারাম করা দরকার ছিল। সালাহউদ্দিনেরা কিভাবে আরামে ঘুমাতে পারলেন? এক দুই দিন নয়। বারোটা বছর! আসলে তারা কামালের বন্ধু হতেও পারেনি। তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করেছে আপনার সাথে।

একটু খেয়াল করুন। তাবিথ আওয়াল। নতুন করে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তিনি মুলত রাজনীতিক। একজন শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য বিদেশে দূতিয়ালী করছেন বিভিন্নভাবে। কারণ, এই বিষয়টাই তিনি এখন দেখেন একটি বিশেষ দলের হয়ে। তাকে কেন সহ সভাপতি করা হল? কারণ, বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত একজন কাজী সালাহউদ্দীনের ব্যক্তিগত অর্থের প্রয়োজন হলে, তিনিই মুঠোফোনে তাবিথকে বলবেন, কিছু টাকা পাঠাও তাবিথ! আবার ক্ষমতার পালাবদল হলে তৃতীয় একটা অপশনও থাকল তার কাছে। যাতে করে সরকার বদল হোক, কিন্তু আমি সালাহউদ্দীন সভাপতিই থেকে গেলাম।

বাদল রায়দের কোনো চরিত্র নেই। তারা সময়ে সময়ে প্রভাবশালীদের টেবিলের সামনে গিয়ে বসে। যে যখন তার স্বার্থ উদ্ধার করবে, তিনি তার সাথে থাকবেন। বরং বাফুফের মধ্যে সজ্জন চরিত্রের হারুনুর রশীদ আছেন। কিন্তু তার আবার আপনার মতো করে ‘হাসিনা সৈনিক’ হওয়ার দক্ষতা দেখা যায় না। নেতৃত্বের গুনাবলী নেই। তবে তিনি ভদ্রলোক। ভদ্রলোক হিসাবে আছেন কাজী নাবিল আহমেদও। বরং নাবিল আহমেদই একমাত্র আপনার প্রতিনিধি। যার বাবা কাজী শাহেদ আহমেদকেও শ্রদ্ধা করার অযুত দিক আছে। ক্রীড়া সংগঠক কিংবা পৃষ্ঠপোষক হিসাবে তো বটেই।

বাফুফে গণতান্ত্রিক ধারায় এশিয়ান ফুটবল কাউন্সিলের পরিচালনায় পরিচালিত হবে। তা যেমন সত্য। কিন্তু গভীর বাস্তবতায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে পেরেছে তা ভাবার কারণ নেই। বাফুফেতে তাই বিভিন্ন দলের রাজনীতিক কিংবা সংগঠক থাকতেই পারে, কিন্তু তাবিথ আওয়াল কিংবা রিয়াজুল মামুনেরা তো বিদেশী শক্তি ও কালো টাকার উপর ভর করে রাজনৈতিক ‘প্রতিবিপ্লব’ করতে চায়। তারা কেন বাফুফেতে থাকবে? একটা মানুষের ব্যক্তি স্বার্থে? বাফুফের কমিটিতে কুড়ি শতাংশ রাজনৈতিক বলয় থেকে প্রতিনিধিত্ব করুক।

ফুটবলের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু করা দরকার। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল, অতঃপর বয়সভিত্তিক জাতীয় আসরগুলো করা দরকার। প্রয়োজন তৃণমূল ফুটবলের প্রসারে জেলাভিত্তিক লীগগুলো শুরু ও শেষ করা। অফিস দলগুলোকে চাঙ্গা করার দরকার। জাতীয় লীগ ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবলের আসর জমিয়ে তুলতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলকে। তবে সবার আগে প্রত্যেকটি ক্লাব তাদের পুরোনো রঙে ফিরতে পেশাদারিত্বে ফিরুক। আপনাকেই ডাকতে হবে। রাজনৈতিক মত পার্থক্য বা সংস্কৃতিকে রুখে দিয়ে বলতে হবে, এই তোমাদের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের এতো বদনাম কেন হল?
একটা সময় এই দল পরিচালনা করতেন শফিকুল গণি স্বপন। সে সময় মোহামেডানের সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই স্বপন আজ নেই কিন্তু তার পুত্র জেবেল রহমান গাণি তো আছেন। গেল নির্বাচনের আগে তাকে তো আমিই বিশ দলীয় ঐক্য জোট ছেড়ে নতুন জোটে গিয়ে নির্বাচন করতে অনুপ্রাণিত করেছিলাম। সেই তাকেই ডাকুন। বলুন, যাও জেবেল, মোহামেডানকে ঢেলে সাজাও। সালাম মুর্শিদিসহ কায়সার হামিদেরা নেতৃত্ব দিক। ফুটবলার সাব্বির, জনি, ইলিয়াসেরা হাল ধরুক মোহামেডানের। এভাবেই ঢাকাসহ জেলা দলগুলোর পরিচালনাকারীদের খুঁজে বের করে দায়িত্ব দিয়ে বলতে হবে, সেরাটা দাও।

এদিকে প্রত্যেকটি ক্লাবের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে তাদের নিজস্ব মাঠ ও ক্লাব পরিসরে আধুনিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। দেশের একশতজন শীর্ষ ব্যবসায়ীকে তিন বছরে দশ কোটি করে অর্থ প্রদান করবার আইন করে দিতে হবে। তাহলে এক বছরে জনপ্রতি তিন কোটি তেত্রিশ লক্ষের মত অর্থের যোগান তাদের দিতে হচ্ছে। একটা সময় ক্লাবগুলোও আয় করতে পারবে। তাই বলে ক্লাবের মধ্যে মদ, জুয়ার নামে ক্যাসিনো ব্যবসা করে নয়। বৈধ পন্থায় ক্লাবের আয় করার কত অধুনা পদ্ধতি আছে! এভাবে এক বছরে অর্থ তহবিল দাঁড়াচ্ছে প্রায় তিন শত ত্রিশ কোটি টাকা। ক্রীড়া মন্ত্রনালয় কি দিলো বা ফিফা কিংবা এএফসি— ফেডারেশনের কোন সংকট থাকলো না। তারা তখন উপকমিটি দিয়ে প্রত্যেকটি আসর পরিচালনা করতে পারবে। ফুটবলের স্বার্থে এখন মুলত একটা সাংস্কৃতিক ঐক্য হওয়াটা জরুরী। ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংবা জাতীয় লীগ সরাসরি বাফুফের অর্থে পরিচালিত হবে। এই দুটি আসর শেষ করতে একশ কোটি টাকা খরচ হলেও সারাদেশের ফুটবলের জন্য আরো দুইশ ত্রিশ কোটি টাকা বাৎসরিক খরচ করা যাবে। তখন ফুটবলের জোয়ার চলে আসবে। এভাবে টানা তিন বছর চলার পরে ফুটবলের জন্য বাজার তৈরি হবে। দেশি ও বিদেশী বহুজাতিক সংস্থা এগিয়ে আসবে বলে মনে করছি। আমাদের ছেলেরা এমন পর্যায়ে যাবে, তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক বিখ্যাত সংস্থা ‘দূত’ করবে। তখন তাদের জার্সি কিংবা বুটে সেই সকল প্রতিষ্ঠানের লোগো শোভা পাবে।

আমাদের জাতীয় ফুটবল দলের ফিফা র‍্যাংকিংয়ের তথ্য তুলে ধরে লজ্জায় পড়তে ইচ্ছে করছে না। বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে আধিপত্য বিস্তার করুক আগে। এরপর এশিয়া। অতঃপর ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপকে টার্গেট করে এগোতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তারা ২০৩০ সালের স্বাগতিক দেশ হলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু ঘটবে না। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে তারা ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলের পেছনেও হাঁটছে।

প্রায় দশ বছর আগে আমিই প্রথম আপনার ক্রীড়ামন্ত্রী আহাদ আলী সরকারকে কিভাবে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে ২০৩০ কিংবা ২০৩৪ সালে যেতে পারবে তার একটা রুপরেখা দিয়েছিলাম। লাভ হয় নাই। দশ বছর পার হয়ে গেছে। তবু আমি আশাবাদী, এখনও যদি আপনি উদ্যোগ নেন, ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ধরা দিতে পারে।

সবার আগে ফুটবল ফেডারেশনকে মনের মত করে সাজাতে হবে। সেই ফেডারেশনে নির্বাচন প্রক্রিয়া রয়েছে। সেটিই থাকবে। তবে আপনাকেই দুই কি তিনটি প্যানেল ঠিক করতে সব্বাইকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলতে হবে, ফুটবলের জন্য কাজ করতে হবে আপনাদের। যারা নির্বাচিত হতে পারবে না, তাদেরকেও দেশব্যাপী ফুটবলের উন্নয়নে কাজ শেষ করতে নানা ধরণের উপকমিটিতে জায়গা করে দিতে হবে। এই ধারাটি নিয়ে আসার মধ্যেই সাংস্কৃতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা পাবে। তখন সবাই একযোগে লেগে পড়বে ফুটবলের জন্য। আপনার পক্ষ থেকে একটি গোয়েন্দা উইং থাকবে। তারা কারা, কেউ জানতে পারবে না। তাদের কাজ হবে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল শুরু কিংবা শেষ হচ্ছে কিনা! এভাবে বাৎসরিক প্রত্যেকটি লীগ, আসরের খবর তাদের কাছে থাকবে। বৃহৎ স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ফুটবল বিষয়ক একজন প্রতিমন্ত্রীর নিয়োগ দিন।

উনিশ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতির উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। গেল সংসদ জাতীয় নির্বাচনের আগেও দুই বছর ধরে জরিপ করে তিনশত সংসদীয় আসনের উপর প্রত্যেকটি দলের জন্য কারা হতে পারেন যোগ্য প্রার্থী, তেমন গবেষণা প্রতিবেদন আমার নেতৃত্বেই (প্রধান গবেষণা কর্মী, কেএইচ রিসার্চ টিম) তা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পায়। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসাবে যদি তরুণ জাহিদ আহসান রাসেল এর উপর আস্থা রাখা যায়, তবে সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলকে ফুটবল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করলে নেহাত মন্দ হয় না। তিনিও একজন সুদর্শন যুবক, যার মধ্যে নেতৃত্বের গুণ ও প্রাঞ্জল উপস্থাপনার সবিশেষ দিক রয়েছে, রয়েছে জ্ঞানের বিস্তর পরিধি। সর্বোপরি তিনি ক্রীড়ানুরাগী।

অন্যদিকে ঠিক একইভাবে বাফুফে আরো তিনটি পদ সৃষ্টি করার প্রয়াসে গেলে পেশাদারিত্বের চূড়ান্ত দিক প্রতিভাত হয়। এক, ফুটবল দূত। যে পদটির জন্য শ্রেষ্ঠ সত্তা হিসাবে বিবেচিত হতে পারেন আজকের ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাহউদ্দীন। তার বৈশ্বিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দূতিয়ালি নিয়ে প্রশ্ন নেই। কাজেই ফিফা, এএফসির সাথে সমন্বয় এবং বাংলাদেশের ফুটবলকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তুলে ধরার জন্য তিনি যোগ্য নেতা হিসাবে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করার সুযোগ আছে। দুই, প্রধান পরামর্শক। এই পদটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাফুফের সাথে আছেন বিধায় অভিজ্ঞতার আলোকে এবং লেজেন্ডারি ফুটবল গ্রেট হিসাবে সালাম মুর্শিদি যোগ্য ব্যক্তি হিসাবে ধরা দিতে পারেন। তিন, ক্রিকেট বোর্ডের মতো করে একজন চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। যার ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো। তবে বাংলা ও ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয়, টিভি চ্যানেলগুলোর সাথে পরিপাটি সম্পর্ক এবং সর্বোপরি দেশব্যাপী ফুটবল পরিচালনার জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে লড়তে হবে। এই প্রক্রিয়াটির নিয়োগ প্রক্রিয়া বাফুফের নতুন কমিটি ফুটবল বিষয়ক মন্ত্রীকে নিয়ে সারতে পারবে।

এদিকে বাফুফে গঠনে দুই কি তিনটি প্যানেল ঠিক করে দিন। সভাপতি পদের জন্য যারা লড়তে চায়, লড়ুক। ক্লাব ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ততায় থাকা সংগঠকেরা কাউন্সিলর হয়েই সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসুক। হ্যাঁ, আপনি জানেন যে, প্রায় চার বছর ধরে ফুটবলের জন্য অতি মানবিক সত্তা হয়ে তরফদার রুহুল আমিন নামের একজন লড়ছেন। তাকে আপনিই ডাকুন। তিনি তো স্বপ্নবাজ চরিত্রেরই। আপনার সৈনিক, বাংলাদেশের সৈনিক হওয়ার যোগ্যতা তার মধ্যে আছে। এখন পর্যন্ত তা বলা যায়। কাজী নাবিল আহমেদ আজকের সালাম মুর্শিদির জায়গায় যেতে পারে, ভালো হয় সেটি। তবে চুন্নু, কায়সার হামিদ, রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, শফিউল আরেফিন টুটুল, সত্যজিত দাস রুপু, শেখ আসলাম, গাফফাররেরা সাবেক খেলোয়াড় হিসাবে জায়গা পাক। তবে উৎসাহ দিয়ে নির্বাচন করবার জন্য একের অধিক প্রত্যেকটি প্যানেল গড়তে আপনিই সাহায্য করুন। ফুটবলের স্বার্থে রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে ফুটবলকে বাঁচিয়ে সমৃদ্ধ করবার উদ্যোগ নিন। একে একে সবাইকে ডাকুন। প্রতিটি সংগঠকদের ডেকে উদাহরণস্বরূপ বলুন, সালাম, কিভাবে ফুটবল বদলে যাবে, জানতে চাই না। এটি তোমাদের কাজ। তখন দেখবেন, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সময় বেঁধে দিন। বলুন, এই সময়ের মধ্যে ফুটবলে বিশেষ স্থানে দেখতে চাই।
বাংলাদেশের জন্য আপনার আঁচলই এখন নিরাপদ আশ্রয়স্থল। নির্মাতা হিসাবে আমার পরিচালনায় একটি চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক পরিসরে এই বছরই মুক্তি পাবার কথা। ‘লিলিথ’ নামের সেই চলচ্চিত্রটি আপনাকে দেখানোর উদ্যোগে যাব। কারণ, চলচ্চিত্রটি সারাবিশ্বের নারীকুলের জন্য উৎসর্গকৃৎ। লিখছি উপন্যাস, সাম্প্রতিক সময়ে বলেছি, এটি সারা বিশ্বের সকল উপন্যাসকে এক পাল্লায় রাখলেও আমারটির ওজন বেশী থাকবে বলে মত আমার। আশা করছি, বাংলা ভাষায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে বই বাজারে উপন্যাসটি ধরা দিবে।

বর্তমান বাফুফের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে গেলে, আপনি হয়তো বলবেন, তুমি উপন্যাসই লিখতে থাকো। পত্র দেয়ার দরকার কি! দীর্ঘ বর্ণনা দিতে হবে তখন। শুধু বলছি, বাফুফে আজ পর্যন্ত গেল উনপঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাস সংকলন পর্যন্ত করতে পারে নাই। সেখানে কার্যকরী ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ আশা করা বৃথা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশবাসীর অভিরুচি বা পছন্দ সম্যক ধারণা দিই। কোনো সরকার আগে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকলে মানুষ সরকার প্রধানের চেহারাই দেখতে চাইত না। আপনি সেই ধারা ভাঙতে পেরেছেন। মানুষ টিভি সেটের সামনে একজন শেখ হাসিনাকে দেখতে চায়। তারা আস্থা পায় আপনার চেহারা দেখার মধ্যেই। আওয়ামী লীগ নয়, তারা শেখ হাসিনায় উন্মাতাল। এটি অর্জন, এটি প্রাপ্তি। প্রিয় মানুষ, নাটাই তো আপনার হাতেই। আজ যদি সাংস্কৃতিক ঐক্য করে ফুটবলকে সাজাতে হয়, কাল রাজনৈতিক ঐক্য করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তেমনই এক নেতৃত্ব তো আপনি।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার জন্য শুভ কামনা।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, ক্রীড়ালোক

সারাবাংলা/এসবিডিই

ক্লাব ফুটবল জাতীয় ফুটবল দল বাফুফে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর