Tuesday 15 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এমন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চায় না দেশের মানুষ


১৫ জুলাই ২০২০ ২১:৩৪ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ২২:০৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবি-কথাসাহিত্যিক তারাপদ রায় লিখেছিলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি/আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে’। সত্যি তাই, আমাদের স্বাস্থ্যখাতের চূড়ান্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে। কোভিড-১৯ মহামারি দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদের সামনে তুলে এনেছে। এই আতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের যে চিত্র জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে তার একটা সমাপ্তি টানা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা টানতে পারেনি সরকার। সরকারি স্বাস্থ্যখাতে বিরাজ করছে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্টের সততার অভাব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয় বারবার বলে আসছিলো করোনা মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর পর সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ কিংবা নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগ জোরালো হয়ে ওঠে গোড়া থেকেই। চিকিৎসকদের শুরুতে তারা পিপিই দিতে পারেননি। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় বহু রকমের ঘাটতি ও রোগী ভোগান্তির কারণে চিকিৎসা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। স্মরণকালে এমন অব্যবস্থাপনা আর বিশৃঙ্খলা আর দেখা যায়নি। করোনা মোকাবিলায় একের পর এক কমিটি হয়েছে, ৪৩ টির ওপর কমিটি হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগেরই কোনো কার্যক্রম নেই। কোনো কোনো কমিটির এখন পর্যন্ত একটি বৈঠকও হয়নি।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, কীভাবে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন যে, স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই পরতে জানতেন না। তিনি তাদের শিখিয়েছেন। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের সদ্য বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিবের কাছে এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পুত্র তার পছন্দের লোকদের নিয়োগ এবং বদলি করতেন, তার নিজস্ব সুবিধার জন্য। ঊর্ধ্বতন এক সামরিক কর্মকর্তার কথা অবিশ্বাস করা যায় না এজন্য যে, তিনি এখনো চাকরিরত। তাই তিনি এমন কোনো কথা লেখার সাহস পেতেননা, যা সত্য নয়। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় সিন্ডিকেটের স্বার্থ বাস্তবায়ন না করায় তাকে সরে যেতে হয়েছে। কেনাকাটার বিষয়ে ‘উচ্চ পর্যায়ের’ অনুরোধ না রাখা কাল হয়েছে তার।

এই দুর্যোগে সাধারণ মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে চায়। কিন্তু এই সরকার করোনা পরীক্ষার জন্য টাকা নির্ধারণ করে দিলেন। যার ফলে দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ করোনা পরীক্ষা করতে পারছেনা। অনেকে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেও সিরিয়াল পায়নি। আবার গুরুতর অবস্থায় করোনা পরীক্ষা করতে পারলেও কারো কারো ক্ষেত্রে সেই রিপোর্ট মৃত্যুর পরও পাওয়া যায়নি। আর যারা টাকা দিয়ে করেছেন, তাদের পরীক্ষা না করে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। আর এসব বিষয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। আমরা দেখেছি, এই দুর্যোগে সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি সেক্টর কিভাবে দুর্নীতিগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, আমাদের টাকা দিয়েই তারা চলেন। সাধারণ মানুষকে তারা জিম্মি আর অসহায় করে রেখেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার মাসুল দিতে হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত থেকে শুরু করে সরকারকে। তারা যেমন স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে পারছেন না বরং নিজেরাও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে মানুষের মনে সন্দেহ জাগছে, তেমনি তারা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারছেন না। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এ পরিস্থিতি পাল্টানো সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের হয়েছে আজ ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা।

দুই.

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতে মাস্কসহ সুরক্ষা সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি বলেছে, সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা অনুসরণ না করে স্বাস্থ্যখাতের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কেনাকাটা করা হচ্ছে এবং তাতে অনেক জিনিস বাজার মূল্যের কয়েকগুণ বেশি দামে কেনার মতো অনিয়ম হচ্ছে। সংস্থাটি আরও বলেছে, মহামারির সময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্যখাতের এক শ্রেণির কর্মকর্তার সহায়তায় কেনাকাটায় অনিয়ম দুর্নীতি করার চিত্র তাদের গবেষণায় ফুটে উঠেছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া স্বাস্থ্যখাতের সব কেনাকাটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে করা হচ্ছে। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর পর পরই গত মার্চ মাসে সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার থেকে সরবরাহ করা এন-নাইনটি মাস্ক এবং পিপিইসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রীর মান নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতাল থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল যে, প্যাকেটে এন-নাইনটি লেখা থাকলেও নিম্নমানের মাস্ক এবং পিপিই দেওয়া হয়েছে। তখন ব্যাপক আলোচনার মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত করলেও তার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। উপরন্তু সরবরাহকৃত এন-নাইনটি ফাইভ মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালককে ওএসডি এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের পরিচালককে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক পদে বদলি করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুদকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক দল পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি বেশি হয়। কিন্তু এই ১১টি খাতে দুর্নীতি এখনও বিদ্যমান রয়েছে।

তিন.
সম্প্রতি একটি ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে, তা হলো, অস্তিত্বহীন রিজেন্ট হাসপাতাল নামক একটি ভুয়া হাসপাতালের সঙ্গে অবৈধ চুক্তি করে সেই ভুয়া হাসপাতালকে আকাশচুম্বী অবৈধ মুনাফার ব্যবস্থা করে দেওয়া। ওই ভুয়া হাসপাতালটি গত ছয় বছর ধরে লাইসেন্সবিহীনভাবে মহাদাপটের সঙ্গে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। যে হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়ন করেনি অর্থাৎ তা লাইসেন্সবিহীন, যাকে আইনগতভাবে মোটেও ‘হাসপাতাল’ বলা যায় না। করোনা চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। তার পাশে বসা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। পেছনে দাঁড়ানো সাবেক স্বাস্থ্যসচিব, বর্তমান স্থানীয় সরকার সচিব, জননিরাপত্তা সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা। গত ২১ মার্চের এমনই একটা ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, গত ২১ মার্চ মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে কভিড-১৯ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। এর পরপরই উপস্থিত সচিবেরা যখন বের হয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন, তখন মন্ত্রী তাদের বসতে বলেন। এ সময় চা-নাশতা দেওয়া হয়। এরপরই মহাপরিচালকের কক্ষে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ঢোকেন। পরে মন্ত্রীর অনুরোধে অন্য সচিবদের উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

অথচ মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় এখন এ বিষয়ে কিছু জানে না বলছে। মন্ত্রী জাহেদ মালেক একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতাল বা মোহাম্মদ সাহেদের প্রতারণার দায়ও আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি তো ওই লোককে চিনিই না।’ এ যেন ভুতের মুখে রাম রাম। বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটিরই সার্থকতা যেন প্রমাণ করলেন মন্ত্রী। এদিকে করোনা পরীক্ষায় প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে আগেই জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন গ্রেফতার হওয়া জেকেজির আলোচিত চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। ইতিমধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদও গ্রেফতার হয়েছে। দেখা যাক, কেঁচে খুড়তে কেউটে বেরিয়ে আসে কিনা!

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অবৈধ চুক্তির ভিত্তিতে ওই হাসপাতাল করোনামুক্ত সনদ প্রদান করত বহু পয়সার বিনিময়ে। অপরাধমূলক এ কর্মকান্ডে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু রোগী, অন্যদিকে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি। ইতালি সরকার বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে ফেরা শতাধিক বাঙালিকে ফেরত পাঠিয়েছে। কারণ তাদের অনেকেই করোনা আক্রান্ত ছিলেন, অথচ প্রত্যেকের সঙ্গেই ছিল কোভিড-১৯ মুক্ত সনদ। এ ধরনের ভুয়া সনদ যে শুধু রিজেন্ট নামক ভুয়া হাসপাতালই দিত তা নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশীর্বাদে আরও অনেক হাসপাতালই এ ধরনের ভুয়া সনদ দিয়েছে। এর ফলে শতাধিক বাঙালি ইতালিতে ফিরতে পারেনি তাই নয়, এর প্রতিক্রিয়া আরও সম্প্রসারিত হতে পারে, মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বর্হিবিশ্বে আমাদের শ্রমবাজার ও রফতানি বাণিজ্য।

ইতালিতে নতুন করে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগে বাংলাদেশিদের উপর ক্ষোভ বাড়ছে ইতালির বিভিন্ন শহরে। ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে নিরীহ বাংলাদেশিদের নিগৃহীত হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য একটি দুঃখজনক ঘটনার সূত্রপাত বাণিজ্যিক রাজধানী মিলান শহরে ১১ জুলাই ইতালিতে করোনা ইস্যু নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষেপেছেন বাংলাদেশিদের উপর! এক বাংলাদেশিকে পানিতে নিক্ষেপ, আরেক জনকে গাড়ী চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের অবহেলার কারণে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর পরও এবং সে হাসপাতালটি অপরাধমূলকভাবে লাশ জিম্মি করে রাখার পরও স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারেনি। না পেরেছে হাসপাতালটির লাইসেন্স বাতিল করতে। অথচ ১৯৮২ সালের আইন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ ক্ষমতা দিয়েছে। সম্প্রতি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল এবং চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ভুতুড়ে বিল করার মতো অপরাধের পরও স্বাস্থ্য অধিদফতর এদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেনি এবং এদের লাইসেন্সও বাতিল করেনি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট করতে হয়েছে, দুদকে ইয়াদিয়া জামানসহ কয়েকজন অ্যাডভোকেটকে নালিশ দায়ের করতে হয়েছে।

চার.
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মিঠু সিন্ডিকেটের’ বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এক ফেসবুক লাইভে তিনি এ কথা বলেন। সেই ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ‘মহা আজগুবি’ বিভাগ বলে মন্তব্য করেছেন।

স্বাস্থ্যখাতের ‘মাফিয়া ডন’ বলে খ্যাত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসছেন। এই করোনাকালেও তার দৌরাত্ম্য থেমে নেই। কিন্তু তিনি বরাবরই থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তার লাগামহীন দুর্নীতি ও জালিয়াতির তদন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। চার বছর ধরে এ বিষয়ে টু-শব্দটি নেই। এমনকি দুদকের সুপারিশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষিত ‘কালো তালিকাভুক্ত ১৪ ঠিকাদারের’ মধ্যেও তার নাম নেই। চুনোপুঁটিদের ‘কালো তালিকায়’ রেখে কার ছত্রছায়ায় বারবার বেঁচে যাচ্ছেন মিঠু, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। টাকার পাহাড় গড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেরানি-স্টেনোগ্রাফার আবজাল হোসেনের গডফাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। আবজালের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে স্বাস্থ্যখাতের সর্বত্রই মিঠুর নাম বেরিয়ে আসছে। এই মিঠুকে দুটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়। একটি ঢাকার শ্যামলীতে, আরেকটি রংপুরে। বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকা ও অনিয়মের কারণে রংপুরের মেডিক্যাল কলেজটির কার্যক্রম ইতিমধ্যে স্থগিত রাখা হয়েছে।

গণমাধ্যম থেকে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিএমএসডি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ওষুধ প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নার্সিং অধিদফতর, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে আছে মিঠুর এজেন্ট। তারা মিঠুর হয়ে কাজ করে। স্বাস্থ্যখাতে মিঠু মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত। কোনো কর্মকর্তা তার নির্দেশমতো কাজ না করলে তিনি আর সেই পদে বহাল থাকতে পারেন না। আমেরিকায় বসেই মিঠু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ঠিকাদারি প্রায় সব কাজ তার ২০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন। শুধু তাই নয়, মালামাল সরবরাহ না করেও বিল উত্তোলনের মতো ভয়ঙ্কর জালিয়াতির অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্যখাতের যে নাজুক অবস্থা ধরা পড়েছে, সে জন্য অনেকেই ‘মিঠু সিন্ডিকেট’কে দায়ী করেন।

একটি গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, মিঠুর উত্থান ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তখন পদচারণা তার খুব একটা ছিল না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টুকটাক ব্যবসা করতেন। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে নাটকীয় উত্থান ঘটে এই মিঠুর। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের আশীর্বাদ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দখলে নেয় মিঠু সিন্ডিকেট। এ সময় তার সিন্ডিকেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ নিয়ে আকাশছোঁয়া অবস্থানে চলে যান মিঠু। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও মিঠুর উত্থান তাতে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। একসময় তিনি দেশের স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া হয়ে উঠেন।  শোনা যায় তার বনানীর অফিস কার্যত হয়ে উঠে স্বাস্থ্য বিভাগের সাব অফিস।

পাঁচ.
স্বাস্থ্যখাতে দুর্বৃত্তায়ন এখন চরম আকার ধারণ করেছে। কিছুতেই যেন তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মন্ত্রী কিংবা মহাপরিচালক এক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি আমরা কোনোভাবেই আশা করি না। সমাজের দুর্বৃত্তপরায়ণ মানুষগুলো বরাবরই রাষ্ট্রের যেকোনো সামাজিক-রাজনৈতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে থাকে যারা এই দুর্যোগের সময়টাকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দুর্বৃত্তায়নের জন্য কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের কাছে থাকে তাদেরও এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা দরকার। এবার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় শুরু থেকেই একটি দুর্বৃত্তচক্র সক্রিয় হয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘাড়ে ভর করেছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের পুরনো দুর্বৃত্ত চক্রগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ঢুকে পড়েছে এ খাতের নানা পর্যায়ে। সাহেদ-সাবরিনাদের মতো প্রতারকরাও এই সুযোগ নিয়েই ঢুকে পড়েছে স্বাস্থ্যখাতে। যারা তাদের জায়গা করে দিয়েছে তারা এর দায় এড়াতে পারেন না।

একটা খবরে পড়েছি, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ও নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন। আর আমাদের দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখনও বড় গলায় কথা বলেই যাচ্ছেন। যেভাবে সরকারের মন্ত্রীরা লাগামছাড়া কথা বলছে, এটা তো জলের মতো স্বচ্ছ স্বাস্থ্যখাতে দিন দিন অব্যবস্থাপনা তো চরম আকার ধারণ করছে। আঙুল দিয়ে দেখানোর পরও ব্যর্থতার দায় নিতে চায় না, খোদ সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সরিয়ে অন্য কাউকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবার নিলর্জ্জের মতো প্রধানমন্ত্রীর সামনেই বড় গলায় স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির পক্ষে কীর্তন গাইলেন, সেই দেশে কীবা আশা করা যায়! এমন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চায় না, মন্ত্রী চায় না, এমন স্বাস্থ্য মহাপরিচালকও চায় না দেশের মানুষ।

ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা করার অপরাধে বিভিন্ন সংগঠন থেকে ওঠা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিটা যৌক্তিক বলে মনে হয়। তাই এ দাবির সঙ্গে আমিও সংহতি প্রকাশ করছি।

প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় তার মহানুভবতায় এদের ডেকে বলবেন, ‘আপনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে একটি সাহসী পদক্ষেপ নেবেন। দায়িত্বে না থেকেও জনগণের সেবা করা যায়। জনগণের সেবা করুন’। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশে আসলে কিছুই হয় না।

হাবীব ইমন : সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর

জাহিদ মালেক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মো. সাহেদ রিজেন্ট প্রতারণা রিজেন্ট হাসপাতাল রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাবরিনা স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যান মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবীব ইমন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর