Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশকে যারা ছোট করে, দেশদ্রোহিতা আইনে তাদের বিচার চাই


১৫ জুলাই ২০২০ ২২:৩০

সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যার প্রভাব শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, পড়েছে বাংলাদেশের বাইরেও। এসব ঘটনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। যারা ফলে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের ব্যাপারে নানা কঠোরতা আরোপ করছে। এতে দেশের ও দেশের মানুষের ভাবমূর্তিই যে শুধু নষ্ট হচ্ছে তা নয়, এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।

সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন সাংসদ কুয়েতে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তো আছেই, আরও আছে সেদেশের বড় বড় কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার নানান অভিযোগ। তার কারণে একদিকে যেমন কুয়েতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ইমেজ সংকটে পড়েছেন, অন্যদিকে একজন বাংলাদেশি সংসদ সদস্যের এমন কাণ্ডে দেশে এবং বহির্বিশ্বে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনীতিকদের ভাবমূর্তিও। তার এসব কর্মকাণ্ডে কুয়েতে জনশক্তি রফতানিতে প্রভাব পড়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

বিজ্ঞাপন

জেকেজি হেলথকেয়ার কর্তৃক করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায়ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করা যায়, এদের উপযুক্ত বিচারও হবে। কিন্তু বাংলাদেশের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গেছে। বিশ্ব জেনে গেছে, করোনার মতো মহামারিকে নিয়েও বাংলাদেশিরা অনৈতিক ব্যবসা করতে পারে।

জেকেজি কেলেঙ্কারির আগেই অবশ্য বাংলাদেশে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির কারণে ৮ জুলাই ইতালির গণমাধ্যমে আসে বাংলাদেশের নাম। অথচ বাংলাদেশে এই করোনার আগমন ঘটেছিল ইতালি বা ইতালির মতো কোনো দেশ থেকেই। এর আগে জাপান সরকারের তত্ত্বাবধানে জাপানে নেওয়া কয়েক ব্যক্তির করোনা ধরা পড়ে। দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো শ্রমিকদের পরপর তিনটি ফ্লাইটে ধরা পড়ে করোনা রোগী। ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চেয়ে কম দোষী নয় যারা ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে যায় তারা। গুটিকয়েক লোকের সত্য গোপন রেখে বিদেশে গিয়ে করোনা শনাক্ত হওয়ার কারণে লাখ লাখ প্রবাসী অবিশ্বাস আর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এতে ক্ষতিটা ওই কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো দেশ ও জাতি।

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের বেশ আগে গুলশানে হলি আর্টিজান রেঁস্তোরায় হামলার ঘটনায় ১৭ বিদেশির মৃত্যু বাংলাদেশকে বিরাট এক ধাক্কা দেয়। ওই ঘটনার পর থমকে যায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্পের কাজ। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থান ও ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ একসময় এ ধাক্কা সামলে উঠতে সক্ষম হয়। তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড আর রানা প্লাজা ধসের ঘটনায়ও ওই সময় ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ।

এসব বড় বড় ঘটনার বাইরে একটা শ্রেণি বেশ নীরবেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে চলেছে। এরা রফতানিপণ্যে ভেজাল দিয়ে আমদানিমুখি দেশগুলোকে বাংলাদেশের প্রতি বিরূপ করে তুলছে। এ কারণে ভালো রফতানিকারকদের থেকেও মুখ সরিয়ে নিচ্ছে বিদেশি ক্রেতারা। এতে করে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।

উন্নত দেশে অভিবাসন গ্রহণের প্রত্যাশায় অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং অবৈধ অবস্থানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশিদের নাম আছে। এসব ঘটনাকে আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ মনে হলেও এরাও দেশের সুনাম কম নষ্ট করছে না।

বর্তমান সরকার দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কতিপয় দুর্নীতিবাজ বা ধান্ধাবাজের কারণে সরকারের এসব উদ্যোগের ফল হচ্ছে সেই তেলমাখা কলাগাছের অঙ্কের মতো। অর্থাৎ ১২ ইঞ্চি উপরে উঠছে তো ১০ ইঞ্চি পিছলে নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের ব্যাপারেও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা, কঠোর অবস্থান নেওয়া।

উপরে যেসব ঘটনার কথা বলা হলো এর বাইরেও দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার নানান পন্থা আছে। বেশ কিছুদিন আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, যারা বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে মহাপ্রতারক সাহেদের প্রতারণা। বিশ্বজুড়ে করোনা সঙ্কটকালে সে বাংলাদেশের অবস্থান নষ্ট করেছে।

আমরাও চাই, দেশে-বিদেশে যে যেখানে যেভাবেই দেশের সুনাম নষ্ট করুক তাদের সবার বিচার হোক। সে বিচার হোক কঠিন এবং দৃষ্টান্তমূলক। বিদেশের মাটিতে ঘটা কোনো কোনো ঘটনায় হয়তো বাংলাদেশের আইনে বিচারের বিধানই নেই। কোনো কোনো ঘটনায় হয়তো যেসব ধারায় বিচার করা যায় সেসব ধারায় শাস্তি খুবই কম। এ লেখার মূল বক্তব্য হচ্ছে, যেসব ঘটনায় দেশ ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় সেসব ঘটনায় প্রচলিত আইনে শাস্তি যা-ই থাকুক না কেন, দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণে এদের বিচার করা হোক দেশদ্রোহিতা আইনে এবং শাস্তি হোক দৃষ্টান্তমূলক।

কেলেঙ্কারি জহিরুল ইসলাম দুর্নীতি দেশদ্রোহিতা দেশের সুনাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর