বাইডেন ও কমলা, মার্কিন রাজনীতিতে ইসরায়েলের বিজয়ের প্রতিচ্ছবি
৯ নভেম্বর ২০২০ ১৪:২৯
“আমি সাহস করে বলতে চাই যে, আমেরিকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কামালা হ্যারিস আরেকজন দক্ষিণ এশিয়-আমেরিকান নারী যিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন একজন ইহুদিকে বিয়ে করে। আমাকে বলতে আসবেন না যে তার প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট নির্বাচিত হবার সাথে একজন ইহুদিকে বিয়ে করার কোন সম্পর্ক নেই।”
– ডেভিড বার্গম্যান (ডক্টর কামাল হোসেনের জামাতা)। এবার পুরো লেখাটি পড়ুন।
গত কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট (নির্বাচিত হয়েছেন নিশ্চিত, কিন্তু আগের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেননি, তাদের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বলে) জো বাইডেন যে আমেরিকার দ্বিতীয় ক্যাথোলিক খ্রিস্টান প্রেসিডেন্ট হবেন এটা কেউ বলছে না। কেউ এটাও বলছে না যে তিনি আমেরিকার ৪৫তম সাদা প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু প্রায় সবাই বলছে কমলা হ্যারিস হবেন আমেরিকার প্রথম কালো এবং সাউথ এশিয়ান-আমেরিকান নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট। জাঁদরেল সাংবাদিক শাহনুর ওয়াহিদের ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখে নিজের চিন্তার ব্যাপ্তি যে খুব অস্বাভাবিক নয় সেটি ভাবছিলাম আজ সকালবেলা।
আজ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু বাইরে প্রখর রোদ। আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট পূর্বমুখী হওয়ায় সকাল সকাল সূর্যের প্রখর আলো ঘরে ঢোকে। ভারী পর্দা দিয়েও সেটি পুরোপুরি ঠেকিয়ে রাখা যায় না। সূর্যের এই প্রখর তাপমাত্রা তাই ছুটির দিনের ঘুমটাকে বাড়তে দেয় না, শুরু হয়ে যায় ডিভাইস খুলে রাজনৈতিক পড়ালেখা। ঘর অন্ধকার করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে এসি ছেড়ে যৌবনের একটা বড় সময়; সময়ে-অসময়ে ঘুমানোর যে আনন্দ পেয়েছি ঢাকার গায়ে গায়ে ঘেঁষা অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে, সেই আনন্দটা এখানকার খোলামেলা অ্যাপার্টমেন্টের ৭০ ভাগ কাঁচের দেয়াল; অনেকটাই কেচে দিয়েছে।
যাইহোক, বলছিলাম কমলা হ্যারিসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, সাউথ এশিয়ান-আমেরিকান, নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট হওয়া প্রসঙ্গে। হতে পারে এই ঘটনা প্রথম বলে এত আলোচিত হচ্ছে। বারাক ওবামার সময়ও হয়েছে। ওই সময়ে বারাক ওবামা কালো, আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হওয়াতে আফ্রিকার ব্যাপক উন্নতি ও লাভ হবে এমনটা ভাবছিলেন অনেকে, তেমন কিছুই যদিও বাস্তবে হয়নি। ঠিক একইভাবে বারাক ওবামার নামের মধ্যে একটা অদৃশ্য হুসাইন গুঁজে দিয়ে মুসলমানরা ব্যাপক উৎসাহিত হয়েছিলেন। বলেছিলেন এবার আর মুসলমানদের ঠেকায় কে? কিন্তু বারাক ওবামা ইদে-চান্দে আসসালামুয়ালাইকুম বলা ছাড়া মুসলমানদের পোড়া কপালে আর কোন সোনা-হীরার চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন, এমনটা মনে পড়ে না। তবে সর্বোচ্চ সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে আমেরিকান আগ্রাসনে যে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছেন, সেটা পরিষ্কার মনে আছে। অবশ্য তাতে এমন কিছু যায় আসে না, কারণ তার মুখের বুলি চমৎকার ছিল। তিনি চমৎকার বক্তৃতা দিতে পারতেন। আমেরিকার সাম্প্রতিক যত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, তার মধ্যে বারাক ওবামা আমারও পছন্দের একজন।
পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য চমৎকার হওয়া কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটি অতীব জরুরি। একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে কিছুটা অসংলগ্নতা থাকলেও তার প্রভাব অনেক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হবার সাথে সাথেই আমেরিকার অনেক স্টেটে রাস্তায় মুসলমানদের উপর হামলা হয়েছে, হিজাব বা বোরকা পরা মুসলমান মেয়েদের গায়ে সাদা আমেরিকানরা প্রস্রাব করে দিয়েছে রাস্তাঘাটে– এমন ঘটনাও ঘটেছে। ট্রেনে-বাসে গালাগাল, হামলা হয়েছে মুসলমানদের উপর। কালোদের উপর পুলিশি নির্যাতন হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও চমৎকার কথা বলেন। ইদ মুবারক, সালামালাইকুম বলেন। কিন্তু তার বলার সাথে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বলার একটা পার্থক্য আছে। আমেরিকার শীর্ষ রাজনীতিবিদদের অনেকেই এটি করেন দেখানোর জন্য। কিন্তু কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের রীতি-নীতিতে বৈষম্য বিরোধী অবস্থানের স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়। সুতরাং ধর্ম নিয়ে নাটকে আমেরিকার শীর্ষ নেতাদের অবস্থান যেখানে ছল-চাতুরি, সেখানে কানাডার নেতাদের অবস্থানে কিছুটা হলেও আন্তরিকতা আছে।
যাইহোক, যে কারণে কানাডার কথা বলছিলাম। আমেরিকার নব-নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কমলা হ্যারিস বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর ১২ বছর বয়সে মায়ের সাথে কানাডার মন্ট্রিয়ালে চলে আসেন। এখানেই ওয়েস্ট মাউন্ট হাইস্কুল, কুইবেক থেকে তিনি স্কুল জীবনের পড়ালেখা শেষ করে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তারপর ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। কমলা হ্যারিস তার স্বামী ডগলাস ইমহফের সাথে “ব্লাইড ডেট”-এ (দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যখন রোমান্টিক রিলেশনশিপ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো দেখা করেন) পরিচিত হন ২০১৪ সালে। ডগলাস ইমহফ একজন ইহুদি এবং কমলা হ্যারিস একজন ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
জো বাইডেন একজন ক্যাথোলিক খ্রিস্টান, নব-নির্বাচিত ভাইস-প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট একজন ব্যাপটিস্ট খ্রিস্টান এবং তার স্বামী একজন ইহুদি- এই প্রসঙ্গটা এই জন্য আনলাম যে আপনি যখন কমলা হ্যারিস একজন দক্ষিণ এশীয়-আমেরিকান কৃষাঙ্গ নারী হিসেবে দেখছেন, ঠিক একই সময়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা মানুষ, গোষ্ঠী তাদের নানা পরিচয়ে একইভাবে উদ্বেলিত হচ্ছে। কমলা হ্যারিসের বাবা ছিলেন জ্যামাইকান, তাই ওই অংশে তাকে সবাই জ্যামাইকান-আমেরিকান হিসেবেই দেখে। আমরা যতই ধর্ম-বর্ণ-জাত-সূত্র মুক্ত আলোচনার অবতারণা করতে চাই না কেন, আদতে এগুলোর প্রতিটিই পারস্পরিক যোগসূত্র রেখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এটি নিঃসন্দেহে সত্য যে, জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস উভয়ে অত্যন্ত যোগ্য এবং কর্মঠ ব্যক্তিত্ব। তাদের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নিয়ে অন্য কারও কোনো প্রশ্ন থাকলেও আমার অন্তত নেই। আমি মনে করি দুজন যোগ্য মানুষ নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মিডিয়া যেখানে জো-বাইডেনকে তার মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে মূল্যায়িত করছে, সেখানে কামালা হ্যারিসকে মূল্যায়নের সময় তার নারী, সাউথ এশিয়ান এবং কালো বর্ণের বিষয়টিকে অনেক বেশি হাইলাইট করছে। আর যখন আপনি বংশ, বর্ণ এবং লিঙ্গকে হাইলাইট করবেন, তখন আপনি তার ধর্ম এবং রাজনৈতিক ও বৈবাহিক সূত্রকে অস্বীকার করতে পারবেন না।
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা ডক্টর কামাল হোসেনের সুযোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার সারাহ হোসেনের স্বামী ডেভিড বার্গম্যান আজ তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “Kamala Harris, Vice-president elect. … dare I say it, yet another successful South American Asian woman wise enough to marry a Jewish man? … Don’t tell me there is no link!”, ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায়, “আমি সাহস করে বলতে চাই যে আমেরিকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কামালা হ্যারিস আরেকজন দক্ষিণ এশীয়-আমেরিকান মহিলা যিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন একজন ইহুদিকে বিয়ে করে। আমাকে বলতে আসবেন না যে তার প্রেসিডন্ট-ইলেক্ট নির্বাচিত হবার পেছনে একজন ইহুদিকে বিয়ে করার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”
আমি ব্যক্তি ডেভিড বার্গম্যানের খুব একটা ভক্ত নই। তার বেশিরভাগ মতের সাথেই আমার দ্বিমত আছে। তার রাজনৈতিক এবং সামাজিক (যেহেতু বাংলাদেশে বাস করেন) অবস্থানের সাথে প্রায় সবসময় আমার দ্বিমত থাকলেও, তিনি নিজের অবস্থানের পক্ষে মোটামুটি বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উত্থাপন করে থাকেন (যদিও বেশিরভাগ সময় এক পাক্ষিক)। এই ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কমলা হ্যারিস একজন কৃষ্ণাঙ্গ, দক্ষিণ এশীয় নারী এই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করা সহজ, কিন্তু তিনি একজন ইহুদিকে বিয়ে করেছেন এবং তার সাথে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠতা আছে এই কথাগুলো বর্তমান অস্থির সমাজে বলা খুব সহজ নয়। ডেভিড বার্গক্যাম্প বিষয়টির অবতারণা করে আলোচনা সহজ করে দিয়েছেন অন্যদের জন্য।
ডেমোক্রেট প্রার্থী, সাদা-ক্যাথোলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জো-বাইডেনের রানিংমেট হিসেবে কমলা হ্যারিসের নির্বাচন শুধুমাত্র তার যোগ্যতার জন্য হয়েছে বলে যদি আপনি মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। ভোটের গাণিতিক সূত্রে তার বর্ণ, ধর্ম, অতীত এবং অতি অবশ্যই বৈবাহিক সূত্রে ইহুদি সংযোগ এবং ইসরায়েলের প্রতি অন্ধ সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমেরিকা ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক বন্ধুতা ঐতিহাসিক। মধ্যপ্রাচ্য, এবং ইউরোপকে সামরিকভাবে চ্যালেঞ্জ করার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা ইসরায়েলকে সব ধরণের সমর্থন দিয়ে আসছে। কমলা হ্যারিসকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করার পেছনে ইসরায়েলের শক্ত চাপ ও সমর্থন মূল ভূমিকা রেখেছে এমন বিশ্লেষণ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক জার্নালে বিরল নয়।
কামালা হ্যারিস বেশ কয়েকবার ইসরায়েলে গেছেন। ২০১৭ সালে তিনি তার ইসরায়েল সফরের সময় প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করে ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে আসেন। কমলা হ্যারিস ইসরায়েলে এবং আমেরিকায় তার একাধিক বক্তব্যে পরিষ্কার করে বলেন যে, নির্বাচিত হলে তার সরকার ইসরায়েলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং সেই সমর্থন তাদের ফিলিস্তিনের প্রতি গৃহীত কোনো পদক্ষেপের দ্বারা প্রভাবিত হবে না।
কমলা হ্যারিস ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিয়ে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থান পুরোপুরি বিপরীত। তিনি প্রকাশ্যে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিন দখলের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তাকে সম্প্রীতি দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক সাংবাদিক তার ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দিতে বললে তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে ইসরায়েল মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতি মেনে চলে।”
২০১৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়েছিল। কমলা হ্যারিস ওই বিল প্রত্যাখ্যান করেন। ইসরায়েলের মানবতাবিরোধী ভূমিকার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ শক্ত অবস্থান নিতে গেলে একজন আমেরিকান সিনেটর হিসেবে কামালা হ্যারিস তার সতীর্থদের সাথে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ান এবং অফিসিয়াল বক্তব্য দেন, “The United Nations is not the appropriate venue and should not be a forum used for seeking unilateral action, recognition, or dictating parameters for a two-state solution, including the status of Jerusalem; it is also the historic position of the United States government to oppose and veto one-sided or anti-Israel resolutions at the United Nations Security Council.”
ইসরায়েলের প্রতি অন্ধ সমর্থন এবং ফিলিস্তিনে মুসলমানদের উপর ইসরায়েলের নির্লজ্জ হামলা ও দখলদারিত্বের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোর পর কমলা হ্যারিসের দক্ষিণ এশীয়-আমেরিকান নারী ভাইস-প্রেসিডেন্টের যে গুরুত্ব তা অনেকটাই হালকা হয়ে যায়। বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলে সেটি আফ্রিকান-আমেরিকান কালো, ফিলিস্তিনি মুসলমান, সমকামী-হিজড়াসহ যে কোনো বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রতি সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া জরুরি। বিশেষত যদি সেটি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের যোগ্যতা বিষয়ক আলোচনা হয়। জনপ্রিয় সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে একটা বড় কারণ ছিল ইসরায়েলের আপত্তি। বার্নি স্যান্ডার্স বলেছিলেন, যদি ইসরায়েল ফিলিস্তিনে তাদের আগ্রাসী ও অমানবিক হামলা বন্ধ না করে তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার সরকার ইসরায়েলে শর্তহীনভাবে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেবে। তার এই মানবিক অবস্থান আমেরিকা ও ইসরায়েল কারোই পছন্দ হয়নি। তিনি নির্বাচিতও হতে পারেননি।
ফলশ্রুতিতে ঐতিহাসিকভাবেই আমেরিকায় আরেক দফা এমন প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন যারা ইসরায়েলের স্বার্থরক্ষায় কাজ করবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় জো বাইডেনের কিছুটা যৌক্তিক অবস্থানের কারণে ইসরায়েলে এমন একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট চাচ্ছিল যিনি অন্ধভাবে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করবে। যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাস্যাস্পদ নেতৃত্ব আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ, আমেরিকান মুসলিমদের ভীষণভাবে আহত করেছিল, বৈশ্বিকভাবে আমেরিকার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল; জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের নির্বাচনে সেই সংকট আপাতভাবে হলেও আমেরিকান রাজনীতি কাটিয়ে উঠবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সার্বিকভাবে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস মেধা ও মননশীলতার দিক থেকে তুলনামূলকভাবে যোগ্য; কিন্তু সারাবিশ্বে আমেরিকা ও ইসরায়েলের সাম্প্রদায়িক, অমানবিক ও উগ্র রাজনৈতিক আগ্রাসন তাদের সময় আরও বাড়লে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সার্বিক দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পমুক্ত হোয়াইট হাউজ, পত্রিকা ও টিভিতে আমেরিকার ইমেজের জন্য ভালো হবে। কিন্তু বিশ্বের দরিদ্র, বঞ্চিত ও শোষিত জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো সুসংবাদ নাও বয়ে আনতে পারে।