অপরাধ সংঘটনে নয়, চেষ্টায় বা প্ররোচনায় শাস্তি!
৯ নভেম্বর ২০২০ ১৭:১৪
অপরাধ সংঘটিত হলে শাস্তি নেই। তবে অপরাধের অপচেষ্টা কিংবা প্ররোচনায় রয়েছে শাস্তি। কি অবাক হলেন? অবাক হলেও সত্যি। বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে আত্মহত্যার অপচেষ্টা করে কেউ বেঁচে গেলে কিংবা প্ররোচনাকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত আত্মহত্যা থেকে নিরুৎসাহিত করার জন্যই এমন আইন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে আত্মহত্যার ধরন দুইটি। একটি হলো পরিকল্পিতভাবে, অপরটি আবেগতাড়িত হয়ে। আবেগতাড়িত আত্মহত্যার প্রবণতা তরুণদের মধ্যে প্রবল। বর্তমানে আত্মহত্যা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার সিংহভাগ তরুণ কিংবা নারী। কেউ আবার ফেসবুক লাইভে এসে অথবা স্ট্যাটাস দিয়ে সত্তা সিলিংয়ে কিংবা গাছের সাথে ঝুলিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে অধিকাংশ তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার ঘটনা আবেগতাড়িত। হতাশা, প্রেমে ব্যর্থ, পারিবারিক কলহ, পরীক্ষার ফল খারাপ, মাদকসহ বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয়ে জীবন বিপন্ন করে দিচ্ছে অনায়াসে। এদিকে নারীদের আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবস্থা, নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, অবমাননা, ধর্ষণ, অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা ইত্যাদি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করছে। প্রতিটি আত্মহত্যা সংঘটনের সময় ২০ জনেরও বেশি আত্মহত্যার অপচেষ্টা করছে। সংস্থার ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার প্রবণতা ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি। ৭৯ শতাংশ আত্মহত্যা মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সংঘটিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মানুষ আত্মঘাতী হবেন। আত্মহত্যার চেষ্টা চালাবেন এর কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ গুণ মানুষ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ২৫৬ জন। এ হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জনের বেশি আত্মহত্যা করছেন। যাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। অপরদিকে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ‘কোনো ইচ্ছা পূরণ না হলে বা কাজের আশানুরূপ ফল না পেলে যে মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয় তা হলো হতাশা। লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না হলে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা-ই হতাশার লক্ষণ।’ সুন্দর এ ভুবনে কে না বাঁচতে চায়? মৃত্যুই একমাত্র মুক্তির পথ নয়। তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে আত্মহত্যায় কোনো শাস্তি নেই। তবে আত্মহত্যায় ব্যর্থ হলে কিংবা প্ররোচিত করলে শাস্তি রয়েছে।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করে, তবে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচিত করবে, তার ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে। দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় আত্মহত্যা করতে গিয়ে না মরলে আত্মহত্যার অপচেষ্টা করার কারণে ব্যক্তির ১ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রচলিত সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ৩২ ধারা অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারীর রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনাদানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে শুধু সুইসাইড নোটের উপর ভিত্তি করে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। সুইসাইড নোট আদৌ আত্মহত্যাকারীর কিনা এ মর্মে আরও সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া