প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, সম্পদ
৩ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৩৫
প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর পালিত হয় ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস’। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৯২ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতার প্রসার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নতি সাধন নিশ্চিত করা। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিবন্ধিতা বলতে স্বাভাবিক ক্ষমতার অভাবকেই বুঝায়। এটি কোন রোগ নয়। তাই যাদের স্বাভাবিক কাজের ক্ষমতা নাই তাদের প্রতি করুনা নয়, প্রয়োজন সহযোগিতার মনোভাব পোষন। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ প্রতিবন্ধী। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ‘অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা’ নিশ্চিতকরনে আইন প্রণয়ন করে। এভাবে আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তারাও বড় অবদান রাখতে পারবে। তাই তাদের কাজের জায়গা ও সুযোগ আমাদের ঠিক করে দিতে হবে। ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা খুব অপ্রিয় শোনায়। তাই বর্তমানে তাদের ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী’ বলা হয়। কারন এই বিশাল জনগোষ্ঠী নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে অলিম্পিকের মত বিশাল পরিসরেও। তাই শুধু সরকার নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের অক্ষমতা না দেখে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে হবে। তারা বোঝা নয় বরং সহযোগিতা পেলে তারাও দেশের সম্পদে রূপান্তরিত হতে পারে। এজন্য ব্যক্তি ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন জরুরি। বর্তমান সরকার ১০ টি লক্ষ্য নির্ধারন করে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরি উভয় জায়গায় প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সরকারের টার্গেট আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে অন্তত তিন হাজার প্রতিবন্ধীর চাকরি নিশ্চিত করা। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের প্রতি সদয় হলেও সঠিক কাউন্সেলিং ও কার্যকারিতা না থাকায় অধিকাংশ প্রতিবন্ধীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ এ মহলকে এগিয়ে নেওয়া দেশ ও জাতির কর্তব্য। মনে রাখতে হবে প্রতিবন্ধীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব না। সচেতন নাগরিকরা যদি তাদের কাজে লাগাতে পারে তাহলে তারা দেশের বোঝা নয়, বরং সম্পদে পরিণত হবে।
লেখক- শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়