Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের সাফল্যের আরও এক বছর


৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:২৩

মুক্তিকামী বাঙালির দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষার সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-ধ্যান-জ্ঞান এবং একনিষ্ঠ দৃঢ়তার ফসল আমাদের স্বাধীনতা।
৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, সমস্ত বাধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গঠনে কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের খাদ্য সংকট, অর্থনৈতিক সমস্যা, অবকাঠামোগত ভঙ্গুরতা ইত্যাদি নানা পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতা অত্যন্ত দৃঢ়তা এবং ধৈর্য সহকারে মোকাবেলা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে যাত্রা শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

বাঙালির অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। বাংলাদেশের মানুষের অগ্রগতির স্বপ্ন থেমে যায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। সেদিন ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুক। সঙে বাঙালির সকল স্বপ্ন, আশা ও আকাঙ্ক্ষা। তারপরই এদেশের অন্ধকার ও উল্টোপথে যাত্রার শুরু। সেদিন ভাগ্যক্রমে আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা স্বামীর সঙ্গে ছিলেন জার্মানিতে ও তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাও। তারপর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের দীর্ঘ ২১ বছরের কঠোর সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষার শেষে ১৯৯৬ সালে জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন করে কাজ শুরু করেন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার অর্থনীতি, শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন দিগন্তের সূচনা করে যা এ দেশের অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপ্রিয় মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’এর সাথে তুলনা করত কিন্তু শেখ হাসিনা তার দক্ষ নেতৃত্বে এই দুর্নামটি দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। সাথে বাংলাদেশকে সমালোচকদের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু সেই অগ্রযাত্রা আবার থমকে যায় ২০০১ সালে।

বিজ্ঞাপন

বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আবার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয় এবং ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চতুর্থ মেয়াদে জনগণের রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃতে গত ১২ বছর অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, অর্থনীতি, বাণিজ্য, জনশক্তি রফতানি, শিল্প, বিদ্যুৎ গ্যাস, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য সেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, যুব, ক্রীড়া, নারী উন্নয়ন, মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদসহ নানা সূচকে গত এক যুগে বাংলাদেশ দারুণ উন্নতি করেছে। খাদ্য-ঘাটতির দেশ থেকে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তর হয়েছে কৃষির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে। শেখ হাসিনা সাহস ও দৃঢ় মনোবলের  কারণে আজ আমরা নিজ অর্থায়নে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বর্তমান সরকার যা নগরবাসীকে মুক্তি দেবে যানজটের ধকল থেকে। দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।

সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ২০০৯ সালের ২৭টি থেকে গত ১২ বছরে ১১৩ টি বৃদ্ধি করে সর্বমোট ১৪০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ৪,৯৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (২০০৯) থেকে ২৩,৭৭৭ মেগাওয়াট এ উপনিত করে যা শেখ হাসিনা সরকারের একটি বিস্ময়কর সাফল্য। বিদ্যুতের ঘাটতিকে জয় করেছে বলেই আজ শিল্প ও কৃষির উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণ। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর কোন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। গত ১২ বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, অনলাইনে বিমান-ট্রেন-বাস টিকিট, ই-টেন্ডারিং, ই-পাসপোর্ট, ই-শিক্ষা, ই-স্বাস্থ্য, ই-কৃষি, ই-বাণিজ্য, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন, অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স, অনলাইনে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তথ্য ইত্যাদি নানাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য সারা বিশ্বে স্বীকৃত। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে, সেইসঙ্গে শিক্ষার্থী ঝরে পড়াও অনেক কমেছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর শতকরা হার ছিল মাত্র ৬১, বর্তমান সরকার তা উন্নীত করেছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। ২০০৯ থেকে গত ১২ বছরে দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য দেশে অনেকগুলো সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিগুন বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও শিক্ষাবৃত্তি সরকারের ভালো কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। টিকাদান কর্মসূচিতে ও দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম রোল মডেল হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার, জন্মহার হ্রাস ও গড় আয়ু বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য অনেক।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের হতদরিদ্র মানুষের জন্য গত ১২ বছর নানা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার।

কর্মসংস্থান, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, কৃষিতে এবং খাদ্যে স্বয়ংস্মপূর্ণতা অর্জন, প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়, মঙ্গা দূরীকরণ ও অতিমারি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও তার সরকারের সাফল্য সর্বজন স্বীকৃত। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের আর্থ সামজিক উন্নয়নের ধারাটিকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের উদার মানবিক মনভাব ও তাদের ভাসানচরে আশ্রয় প্রদান বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক স্থান করে দিয়েছে।

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা পৃথিবী যখন বিপর্যস্ত ও দিশাহারা তখন করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ায়। দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে নিয়েছেন নানান পদক্ষেপ ও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ, যার জন্য দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে, ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রশংসিত হচ্ছেন শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির সময় ২ হাজার ডাক্তার ও ৫ হজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ ছিল শেখ হাসিনার সময়পযোগী সিদ্ধান্ত। এই চরম দুঃসময়েও দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি যাতে বাঁধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য নিয়েছেন সঠিক ও নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই করোনা মহামারির ২০২০ সাল সফলতার সাথে শেষ করতে যাচ্ছে।

নানা ষড়যন্ত্র, বাঁধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগনের ভাগ্য উন্নয়ন এর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যদি বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে, দুর্নীতি বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থিতাবস্থা বজায় থাকে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশ হবে তাতে সন্দেহ নেই। এ কাজটি একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই করা সম্ভব। বর্তমান উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবাইকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে নতুন বছরে ।

লেখক- সহকারী অধ্যাপক, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কার্যকরী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে রুখে দিল নিউক্যাসেল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৮

সম্পর্কিত খবর