আগস্ট মাসে হোক বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বইমেলা-২০২১
৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৪৮
দীর্ঘদিন ধরে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে অমর একুশে বইমেলা। ঢাকার বইমেলার রেশ ছড়িয়ে গেছে কলকাতা থেকে নিউইয়র্ক। প্রতিবছর ঢাকায় ফেব্রুয়ারি মাসের বইমেলায় লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের মিলনমেলা ঘটে। গত বইমেলায় প্রায় ৮০ কোটি টাকার বই কিনেছেন পাঠকরা। লেখক ও প্রকাশকরা বছরের এই মাসটিতে বই প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করেন। পাঠকরাও খোলা পরিসরে ঘুরে ঘুরে সময় নিয়ে, দেখে শুনে বই কেনার সুযোগ পান শুধু বইমেলায়ই।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সারা বিশ্বকে যেমন থমকে দিয়েছে, তেমনি এর রেশ লেগেছে বইমেলায়ও। এবারের একুশ বইমেলা ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে না। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে আমলে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে অনলাইনে বইমেলা অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেওয়া হলেও লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের আপত্তি মুখে তা বাতিল হয়। এখন বছরের যে কোনো সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি বইমেলা অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে।
আমার প্রস্তাব হচ্ছে ২০২১ বইমেলা আগস্ট মাসে করা হউক। ২০২০ ছিল সরকারঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’। এই বছরে মুজিববর্ষের নানা পরিকল্পনা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। সরকার মুজিববর্ষের সময়কাল ৯ মাস বাড়িয়ে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত করেছে।
এদিকে ২০২১ সালে পালিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনেয়ে এনেছে আমাদের পূর্বপুরুষরা। এই স্বাধীনতা আর লাল সবুজের পতাকা যারা এনে দিয়েছে তাদের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। আজ নামের পাশে যুক্ত হয় একটি গর্বের পরিচয় ‘বাংলাদেশি’। যাদের জন্য আমাদের এই পরিচয় তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তী আমাদের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আমাদের স্বাধীনতার প্রেরণাকে আরও শক্তিশালী করার শপথ নেওয়ার সময় ২০২১। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম না নিলে জন্ম নিতো না স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকেও স্মরণ করার দায় আছে জাতির। জাতির এই সূর্য সন্তানকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করেছে এই দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শোকের সেই আগস্ট মাস তাকে স্মরণ করার উত্তম মাস। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীকে আমলে নিয়ে আগামী আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হউক ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বইমেলা ২০২১’।
এছাড়া আগামী মার্চ পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ চলতে পারে। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মাহে রমজান। জুন-জুলাই বাংলাদেশের বাজেটের সময়কাল। জুলাই শেষ সপ্তাহে ঈদুল আযহার পরে আগামী আগস্ট মাসেই সব বিবেচনায় বইমেলা করার উত্তম সময়।
এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য হউক, ‘শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা’। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচাসহ বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বই প্রাধান্য পাক এবারের বইমেলায়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সঙ্গে পরিচয় হক নতুন প্রজন্মের। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এই বাংলার ইতিহাসের অকাট্য দলিল। এই বই পড়লে জানা যাবে কেন আমরা ১৯৪৭-এ পাকিস্তান হয়েছি, কেন আমরা ১৯৭১ এ ছুঁড়ে ফেলেছি সে পাকিস্তানকে। কেন আমরা ভারতীয় বা পাকিস্তানি নই আমরা বাংলাদেশি। কেন ভীষণ গর্বের পরিচয় এই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের জন্য কত ত্যাগ তিতিক্ষা-সংগ্রাম। সেই স্বাধীনতা আর ত্যাগ তিতিক্ষার গল্প আরও দৃঢ় প্রত্যয়ে ছড়িয়ে এবারের বইমেলায়।
লেখক: শিক্ষার্থী