আসুন শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই
৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৫০
শীতকাল আবার কারো কারো জন্য আনন্দেরও বিষয়। শীত মানেই কুয়াশা-মোড়ানো ভোরে চুলোর পাশে বসে পিঠা খাওয়া। ঝরা পাতা জড়ো করে জ্বালিয়ে আগুন তাপানো। গল্পের আসরে বসে ধুমায়িত চা-কফির উষ্ণ স্বাদ। দীর্ঘ রাতে লেপ-কম্বলের ওম লাভের আনন্দ। কিন্তু যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের জন্য শীত মানে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় কয়েক দিন ধরে তীব্র শীত পড়ছে। কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও শ্রমিকরা। গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে দুস্থ মানুষ। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক টুকরো শীতের কাপড় তাদের জন্য যেন শত আরাধনার ধন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও নেই শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
সারাদেশে এবার জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। বলাবাহুল্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শীতের প্রাবল্যের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। কোথাও খুব শীত পড়ে কোথাও মাঝারি কোথাও আবার এই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সেই অর্থে শীতের দেখাই নেই। তবে এবার কিন্তু দেশজুড়ে শীতের প্রকোপ একটু বেশি বলা যেতে পারে। উত্তর ভারতে যা শীত পড়ে পূর্ব ভারত সেই তুলনায় অতটা জবুথবু হয় না। এই ডিসেম্বরে দিল্লি হরিয়ানায় শীতের দাপটে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে। রাজধানী দিল্লিতে কুয়াশার দাপটে বিমান পরিবহন, বাস, রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। শুধু সাধারণ মানুষের কথাই বা বলি কেন দেশের মানুষের কাছে শীতকাল যতটা না আনন্দ নিয়ে আসে তার থেকে উত্তুরে হাওয়ায় থাকে দুঃখের নিঃশ্বাস। কেননা দেশের বেশিরভাগ মানুষই বসবাস করে দারিদ্র্য সীমার নিচে যারা বছরভর পরনের কাপড় জোগাড় করতে হিমশিম খায়। তাদের কাছে শীতের পোশাক বাহুল্য বইকি। তবুও প্রকৃতির নিয়মে শীত আসে আর এই দরিদ্র মানুষরাও ঠিক একরকমভাবে বেঁচে যায়। যারা লড়াই করে টিকে থাকতে পারে না তাদের জন্য মৃত্যুই নিয়তি। তবুও বিভিন্ন সরকারি সংগঠন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এখন দরিদ্র মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর শীত এলেই এই সংস্থাগুলি কাজে নেমে পড়ে। অবসর সময়ে তরুণরা যখন কম্বলের ভেতর ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে সময় পার করতে ব্যস্ত, কনকনে শীতে গভীর রাতে ঠিক তখন তাদের মতোই কয়েকজন একখানা কম্বল জোগাড় করে ফুটপাতে থাকা অসহায় মানুষের শীত নিবারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটাই মানবিকতা। পাশাপাশি অনেক তরুণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে এসে কম্বল, গরম পোশাক দরিদ্র পরিবারগুলির হাতে তুলে দেন। স্টেশনে ফুটপাথে শহরের ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে যে বাচ্চাটি ফুটো থালা নিয়ে বসে ভিক্ষা করে তার গায়ে ওঠে সোয়েটার, সৌজন্যে এই তরুণ সমাজ। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই বাদ পড়ে যায় প্রকৃত অসহায়রা।
শীতের এই তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য আমরা রকমারি শীতবস্ত্র পরিধান করি। কিন্তু আপনি যে পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছেন সেই পথে বসবাসরত মানুষগুলোর দিকে কি একটু খেয়াল করেছেন? হয়তো ব্যস্ততার মাঝে খেয়াল করা হয়ে ওঠে না। চলার পথে একটু থেমে, খেয়াল করুন তাদের দিকে। দেখতে পাবেন যে, শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করার জন্য তাদের কেউ কেউ একটি চটের বস্তা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে রাত কাটানোর প্রহর গুনছে, কেউ আবার একটি পলিথিন ব্যাগকে আশ্রয় করে শুয়ে আছে, আবার কেউ শীতের তীব্রতাকে মেনে নিয়েই কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ আবার শুকনো খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে উত্তপ্ত রবির আলোর জন্য। যা তাদের জন্য একটু উষ্ণতা বয়ে নিয়ে আসবে। সময় এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার। আসুন একবার অসহায় বয়স্ক মানুষের কথা ভাবি এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। একটি কাপড় দিয়ে হলেও শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মহৎ ও পুণ্যময় কাজ।
পরিশেষে বলতে চাই, বেশী নয় শুধু আপনার এক দিনের হাত খরচটুকু বৃদ্ধ/বৃদ্ধা, মা/বাবাকে উপহার দিন। সাময়িক হলেও অন্তত এক বিন্দু হাসি আমরা ফুটাতে পারবো তাদের মুখে। এই আমার সবার প্রতি আন্তরিক অনুরোধ।
লেখক- শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়