ফেসবুককে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই
৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:৪৭
প্রজন্মকে ভুলপথে পরিচালিত করতে এই একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যাবহারই যথেষ্ট। সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে দেশে ধর্মীয় বিদ্বেষ-উস্কানী ছড়ানোর পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে ফেসবুকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। আপনি না চাইলেও অনেক কন্টেন্ট/ভিডিয়ো ফেসবুক আপনার নিউজফিডে চলে আসছে। কারণ এগুলো স্পন্সরড করা কন্টেন্ট যার অধিকাংশই কিছু ধর্মীয় বক্তার উদ্ভট বক্তব্য। কারও অশ্লীল ভাষার কমেন্টে রিপোর্ট করলে তারা রিভিউ দিচ্ছে ‘এটি তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে!’ অথচ বিপরীত ঘটনা দেখা যাচ্ছে মুক্ত চিন্তার অধিকারী কোনো ব্যক্তির স্ট্যাটাস কিংবা কমেন্টের ক্ষেত্রে। ইদানিং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের উপরে কেউ কোনো লেখা বা কোনো স্ট্যাটাস শেয়ার দিলে সেটা ফেসবুক নিউজফিডে খুব কম দেখায়। কিন্তু দেখা যায় সাম্প্রদায়িক কোন লেখা, ছবি বা ভিডিয়োর ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। যাদের আইডি ‘See First’ করে রাখা, তাঁদের লেখাও এখন সার্চ দিয়ে খুঁজে খুঁজে পড়তে হয়।
এরকম অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পেছনে খুব পাকাপোক্তভাবেই লেগেছে ফেসবুক। ‘টেক ডাউন’ করে দেওয়া হচ্ছে লেখনী কিংবা কমেন্ট। হটাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এত ‘ধার্মিক’ হলো কবে থেকে? আপনাদের সন্দেহ লাগেনা? আমার তো মাথা চুলকায় এসব দেখে।
তর্কের খাতিরে অনেকে বলতে পারেন, এসব তো ডিটেক্ট করে ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ দ্বারা। তো ভাই, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ন্ত্রণ করছে কারা?
ফেসবুকের এই সস্তা নীতিমালার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আমি মোটামুটি সরব। কিছুদিন আগে এধরণের একটা স্ট্যাটাস আমার টাইমলাইনে শেয়ার করেছিলাম। তাতে শেখ মুসাফির মিফতাহ নামে একজন মন্তব্য করেছেন ‘ইদানিং আমিও এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছি। দু’বছর আগে কারও একটা বাংলাদেশ বিরোধী পোস্টে ‘জামাইত্তা রাজাকার’ লিখে কমেন্ট করেছিলাম। সেই কমেন্টকে অযুহাত হিসাবে দাড় করিয়ে কিছুদিন আগে আমার আইডি ৩ দিনের জন্য রেস্ট্রিকটেড করে দেয়। ফেসবুকের এই ব্যাপারটা ক্ষুদ্র মনে হলেও ছাড় দিলে চলবেনা। অবশ্যই সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা দরকার।’ তো তাহলে কি বুঝলেন? সর্ষের ভিতরেই আসলে ভূত!
ইতোপূর্বে ফেসবুককেন্দ্রিক বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে। গুজব ছড়ানো থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকের পাতায়। এগুলোতে বিভ্রান্ত হচ্ছে সহজ-সরল, ধর্মপ্রাণ মানুষ গুলো। অথচ সবকিছু দেখেশুনেও নীরব ভূমিকা পালন করছে সরকারের সাইবার ইউনিট ও আইসিটি মন্ত্রণালয়।
আমার দেশের সরকারের উচিত বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো ফেসবুকের রিজিওনাল (বাংলাদেশ বিষয়ক) অফিসে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এটা জরুরি। এই সিদ্ধান্তে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে, তবুও ফেসবুককে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, অনলাইন অ্যাক্টিভিটিস্ট