Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: বাঙালির বিজয়ের পরিপূর্ণতা


১০ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:১৭

স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশে ফিরে আসার দিন আজ ১০ জানুয়ারি। পাকিস্তানের কারাগারে দীর্ঘ কারাবাস শেষে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের আজকের দিনটিতে স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেই দিন থেকে জাতির জনকের ফেরার দিনটি ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। মহান মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে জাতির পিতার প্রত্যাবর্তনের এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আসছে। ৯ মাসের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে তার দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পরিপূর্ণতা লাভ করে।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের শাসন-শোষণ ও অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জীবনের একটা বড় সময় শেখ মুজিবকে বার বার জেল, জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করতে হয়।

পাকিস্তান ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা বাঙালির সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়েই শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা এবং ভুষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে।আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।

২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালাতে শুরু করে। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পর পরই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শুরু হয় বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। এ সময় বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি রেখে তার উপর নির্যাতন চালানো হয়। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার নানা পরিকল্পনা তৈরি করে। জেলের মধ্যে অত্যাচার নির্যাতনই শুধু নয়, তাকে ফাঁসির মঞ্চেও নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ও তার অদম্য সাহসের কাছে শেষ পর্যন্ত হারমানে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনী।

এদিকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই বাঙালি জাতি বঙ্গন্ধুর আদর্শে ও নির্দেশিত পথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যত দিন যেতে থাকে যত রক্ত ঝরতে থাকে, স্বদেশের মাটিকে হানাদারমুক্ত করতে বাঙালি ততোই মরীয়া হয়ে ওঠে। মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হন ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারান। এতো রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে বিজয় এলেও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় বাঙালির অর্জিত বিজয় পূর্ণতা পায়নি। বিজয়ী বাঙালি জাতি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে তাদের নেতার ফিরে আসার।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে থাকে। বাঙালির পাশাপাশি বিশ্বের স্বাধীনতা ও শান্তিকামি মানুষও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে অবশেষে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু সোজা লন্ডন চলে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফেরেন। সেদিন সারা দেশ থেকে মানুষ ছুটে আসেন তাদের নেতাকে একবার দেখার জন্য। স্বাধীন দেশে ফিরে বাঙালির ভালবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিমানবন্দর থেকে লাখ লাখ জনতার জনসমুদ্র পাড়ি দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স) দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যে বলেছিলেন, বাঙালি আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে সেই বাঙালির জন্য আমি রক্ত দিতেও প্রস্তুত। এর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু ও দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঘাতকের হাতে স্বপরিবারে জীবন দেন।

লেখক- সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর