পদ্মাসেতু জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, উপভোগ করুন
১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৩২
শেষ পর্যন্ত আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু হয়েছে। তাই বলে কি সকল নিন্দুকের মুখের নেতিবাচক অশ্লীল ভাষা বন্ধ হয়েছে? বন্ধ হয়নি, এখনও বিরুদ্ধবাদীরা নেতিবাচক কথাবার্তা বলে চলছে। যেন কুস্তিতে নিচে পড়ে হেরে বলছে আকাশতো আমিই দেখেছি। এই পদ্মাসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা কম ষড়যন্ত্র করেনি। দুর্নীতির অপবাদ ছড়িয়েছিল আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিতে। ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে পদ্মাসেতু নির্মাণের মাধ্যমে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য জাল ছিন্ন করে বর্তমান সরকার কল্পনার পদ্মাসেতুকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা গুজব ছড়িয়েছে পথে ঘাটে বাজারে বন্দরে। বলা যায় পথে ঘাটে বাজারে বন্দরে জনকোলাহল মুখরিত জায়গায় বিরুদ্ধবাদীরা যত রকমভাবে পারা যায়, তত রকমভাবেই গুজব ছড়িয়েছে। সুখের কথা হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। আসল সত্য হচ্ছে, শুভ কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিরুদ্ধবাদীদের দ্বারা যত রকম ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, বাস্তবে দেখা যায় বিরুদ্ধবাদীদের জনবিরোধী ষড়যন্ত্র কখনো সফলতার মুখ দেখে না।
বিরুদ্ধবাদীরা পদ্মাসেতুর কাজ বাধাগ্রস্ত করার জন্য গুজব ছড়িয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে চরম বিপদে ফেলেছে। এমনকি অসহায় মানুষ গুজবে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। যারা চায়নি আমাদের পদ্মাসেতু হোক, তারা এমন সব বিবেকহীন কথাবার্তা জনসমাবেশে কিংবা বলা যায় দেশের মানুষের মনের মধ্যে ছড়িয়েছে, যার জন্য সাধারণ মানুষকে চরম এক আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি থেকে তার কাজকর্মের জন্য বের হতে হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীরা মানুষের মাঝে গুজব ছড়িয়েছে পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য কচি শিশুদের মাথা প্রয়োজন। তাই পথে ঘাটে বাজারে বন্দরে স্কুলে পার্কে ছেলে ধরা বের হয়েছে ছোট ছোট বাচ্চাদের তুলে নেওয়ার জন্য। গুজব রটনাকারী ব্যক্তিরা গুজব ছড়িয়ে মানুষের মনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে, নিরীহ মানুষের দল সকল সময় আতঙ্কিত হয়ে থাকত। মানুষ ভাবত কখন কোথায় বিপদ আসে। তাই আতঙ্কিত সাধারণ সচেতন মানুষ বাড়ি থেকে কোনো প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ছাড়া বের হত না এই ভয়ে যে, যদি এলাকার বাইরে অচেনা অজানা জায়গায় গিয়ে বিপদে পড়তে হয় কিংবা যদি গণপিটুনির শিকার হতে হয়।
বিরুদ্ধবাদীরা দূর থেকে মানুষের দুর্দশা দেখে হাসত। যেন তাদের আনন্দের সীমা নেই। হয়ত মনে মনে বলত, এই তো কাজের কাজ শুরু হয়েছে। বানাও দেখি তোমাদের স্বাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। বিরুদ্ধবাদীরা হয়ত এমন কথাও মনে মনে বলত, দাঁড়াও দেখি কী করে বানাও তোমাদের আকাশ কুসুম চিন্তার ফসল পদ্মাসেতু। কিন্তু বিরুদ্ধবাদীরা কখনও ভাবেনি সৎকর্ম কোনোদিন কোথাও থেমে থাকে না। বিরুদ্ধবাদীরা হয়ত একথা ভাবত না, শুকুনের অভিশাপে কখনও গৃহস্থের গরু মরে যায় না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরুদ্ধবাদীদের সকল ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য জাল ছিন্ন করেছেন। তিনি আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের দেশের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য সামনের দিকে এগোতে থাকেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরুদ্ধবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যখন পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ শেষ করলেন, তখন বিরুদ্ধবাদীরা মনের দুঃখে উল্টাপাল্টা কথা বলতে শুরু করলেন। অনেকেই বলে থাকেন বিরুদ্ধবাদীদের কথাবার্তা অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের মতো। তাই তাদের কথা ধরে ইতিবাচক ব্যক্তিদের সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই। যখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণে মিথ্যা অপবাদ তুলে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, তখন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা হতাশাবাদীদের মতো হতাশ না হয়ে, জনগণের সাহসের ওপর বিশ্বাস রেখে নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।
যখন আমাদের পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হলো, তখন দেখা যায় বিরুদ্ধবাদীরা যত ধরনের ষড়যন্ত্র করা যায় তার সবই করতে থাকে। বিরুদ্ধবাদীদের ছড়ানো গুজবের বলি হতে হয় অনেক নিরীহ মানুষকে। রাজধানী ঢাকার এক এলাকায় এক মহিলা স্কুলে তার শিশুকে ভর্তি করতে গেলে তাকে ছেলে ধরা আখ্যায়িত করে কতগুলো অসভ্য বর্বর মানুষ গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে। তিনি যতই বলতে থাকেন আমি ছেলে ধরা নই, ততই অসভ্য বর্বর মানুষগুলো আরও মারমুখী হয়ে ওঠে এবং তার কথা না শুনে তাকে অর্থাৎ মহিলাটিকে গণপিটুনি দিয়ে প্রাণেই মেরে ফেলে। তারপরেও কিন্তু মানুষের মধ্যে বোধোদয় ঘটেনি। একশ্রেণীর মানুষ আজও সত্য মিথ্যার বিচার না করে গুজবের পিছনে দৌড়ে অঘটনগুলো ঘটিয়ে ফেলে। ষড়যন্ত্রকারীদের হাজার ষড়যন্ত্রের পরও আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণের কাজ ষড়যন্ত্রকারীরা বন্ধ করতে পারেনি। মানুষের সাহসের ওপর ভর করে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ থেকে পিছু হটেননি। বরং শত বাধার মধ্যেও পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন এবং স্বপ্নের পদ্মাসেতুকে বাস্তবে রূপ দেন। সকল ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল অবস্থার জাল ছিন্নভিন্ন করে আমাদের দেশের জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছে। শত বাধা ও ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ হওয়ায় একটা বিষয় প্রমাণ হয়েছে, আর তা হলো সৎকাজে কোনো সময় কোনো ষড়যন্ত্র বাধা হয়ে দাঁড়াতে পাড়ে না।
আমদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবতার মুখ দেখায় দেশের একুশটি জেলাকে কতটা সুখে-আনন্দে রাখবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের মন অবশ্যই হয়ে উঠবে শরতের রোদ ঝলমল করা দিনের মতো সুন্দর। সংবাদ ভাষ্যমতে, পদ্মা সেতু হওয়ায় পদ্মার চর অঞ্চলে অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাইটেক পার্ক, বিমানবন্দরসহ উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পদ্মাসেতু সংলগ্ন জাজিরার নাওডোবা এলাকায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁত শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে আধুনিক আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। ঢাকার বাইরে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রসারের জন্য পদ্মাসেতুর আশেপাশের এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন আমাদের কৃষি ও শিল্প বাণিজ্য ব্যবস্থায় পদ্মাসেতু বিরাট ভূমিকা রাখবে। এছাড়া কাজকর্মের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে মানুষের জীবনকেও সুখ ও আনন্দে ভরিয়ে তুলবে। অর্থনীতিতে সামগ্রিক উৎপাদন, সেবা, পর্যটন, শিল্প-বাণিজ্যের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গতি বৃদ্ধির ব্যাপারে আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু বিরাট ভূমিকা রাখবে। বিজ্ঞজনরা আরও বলছেন, প্রথম বছরে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে জিডিপির এক দশমিক দুই শতাংশ। যা টাকার অংকে দাঁড়াবে তেত্রিশ হাজার পাঁচশত ছাপ্পান্ন কোটি তেপ্পান্ন লাখ ষাট হাজার টাকা।
এখন প্রশ্ন হলো আমাদের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেতিবাচক চিন্তাধারা থেকে এখনো অনেক কথাবার্তা বলছেন। একজন নেতা বলেছেন পদ্মাসেতু কারো বাপের সম্পত্তি নয়। তার উত্তরে আবার আরেকজন বলেছেন, দেশের জনগণের বাপের সম্পত্তি আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। উনাদের বাপের সম্পত্তি নয়। আমরা দেশবাসী যদি দায়িত্বশীল নেতাদের মুখ থেকে দায়িত্বশীল কথাবার্তা না শুনি তাহলে আমাদের চিন্তা চেতনাকে বিষাদে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর নেতাদের কথাবার্তায় দেশের মানুষের মন যদি বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে যায়, তাহলে পাওয়ার আনন্দ আর মনের মধ্যে থাকে না। আনন্দ তখন মাটি হয়ে যায়।
তাই বলছিলাম, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আমাদের সবার জীবনেই ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। মানুষের অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। এই উন্নতির ছোঁয়া থেকে কোনো পক্ষই বাদ পড়বে না। তাই আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু নিয়ে অযথা রাজনীতি না করে কিংবা নেতিবাচক কথাবার্তা না বলে, প্রত্যেক পক্ষেরই উচিত পদ্মাসেতু আমাদের জীবনে কেমন ইতিবাচক আনন্দ নিয়ে আসবে, তা নিয়ে সেই দিকটি ভাবা।