Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উন্নয়নের জোয়ারে শিশুশ্রম ব্যাধি


১৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:০৮

জাতীয় শিশু সনদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৮ বছরের কমবয়সী সবাই শিশু। এই বয়েস সীমায় দেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই শিশু। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষণ অনুযায়ী দেশে এখনও ১৭ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম বাদেও নানারকম কায়িক শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে এর চেয়ে আরও দ্বিগুণ শিশু। এদের বেশিরভাগ শিশুর উপর ন্যস্ত থাকে তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব।

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উপরন্তু এই শিশুশ্রম ব্যাধি আমাদের মধ্যে আরও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। গোটা দেশে শিশুশ্রম সন্দেহাতীতভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে। রিকশা-চালনা, হকারি, কুলিগিরি, আবর্জনা সংগ্রহ, পতিতাবৃত্তি, ইট-পাথর ভাঙা, মাদকদ্রব্য বহন সহ ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ ও জঘন্য কাজে শিশুদের নিয়োজিত করা হয়। আর এদের বেশিরভাগই কোনো না কোনো প্রলোভন বা ওজুহাতের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়। স্বার্থান্বেষী এক চক্র এসব শিশুদের কম মজুরিতে খাটিয়ে নেয়। এই স্বার্থান্বেষী চক্র শুধু তাদের খাটিয়েই ক্ষান্ত হয় না বরং এই শিশুদের উপর নানারকম অমানবিক শারীরিক নির্যাতনও করে।

আজ যারা শিশু, আগামী দিনে তারাই যুবক। শিশুরাই সুশোভিত ও গৌরবময় আগামীর পথনির্দেশক। শিশুশ্রম মূলত দারিদ্র্যেরই ফল। সংসারের অভাব অনটনের কারণেই শিশুরা অল্প বয়সে শ্রমিক হতে বাধ্য হয়। বেশিরভাগ শিশুশ্রমিকের জীবনের গল্প অকল্পনীয় হৃদয়বিদারক। অসচেতনতা ও শিক্ষা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকার দরুন বাবা-মা তাদের শিশু-সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় রোজগারের পথে। আর এই পথ তাদের নিয়ে যায় অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। বর্তমান করোনাকালে পুরো পৃথিবী অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। করোনাকালে দেশে অনেক মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। অনেকে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। এই সংকটে শিশুশ্রম ব্যাধি আরও মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিশুর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আমাদের দেশে শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে দায়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বেশিরভাগ অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে ব্যর্থ হয়। ফলে তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুলে পাঠানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। শিশুশ্রমের আরও একটি বড় কারণ হলো সৎমায়ের উৎপাত। শিশুদের জীবনে অমানবিক এক অধ্যায় এটি। বর্তমানে মাদকাসক্ত কিশোরদের শিশুশ্রমের দিকে ধাবিত করছে। মাদকাসক্তের দরুন তারা মাদকদ্রব্যের জন্য টাকা পেতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় তারা শিশুশ্রমের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

উন্নত ও ধনী দেশে শিশুরা সব ধরনের অধিকার পেলেও দরিদ্র দেশে তারা মানবাধিকার বঞ্চিত থেকে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। দেশের সব সেক্টরেই এক আমূল পরিবর্তন এসেছে, লেগেছে উন্নয়নের জোয়ার। পদ্মাসেতু থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট এখন বাংলাদেশ হাতে নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারকে শিশু শক্তির উন্নয়ন করতে হবে। আর এই শিশু শক্তির উন্নয়ন করতে হলে সর্বপ্রথম শিশুশ্রম রোধ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রমকে একেবারে রোধ করতে না পারলেও কমিয়ে আনা সম্ভব। শিশুশ্রমকে কমিয়ে আনতে হলে সরকারকে সর্বপ্রথম দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। সব শ্রেণীর শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দরিদ্র শিশুর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। যেসব পরিবারের শিশুরা কাজ না করলে সংসার চলবে না, এমন পরিবারকে ভাতার ব্যবস্থা করে ওই শিশুকে কাজে যাওয়া থেকে বিরত রাখা যেতে পারে। শিশুশ্রম আইনে সংশোধন এনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিশেষ করে দেশের মানুষের মানসিক পরিবর্তন দরকার। মানুষ এই শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত না করে সাহায্যের হাত প্রসারিত করলে শিশুশ্রমে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। শিশুশ্রমে উৎসাহ প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে শিশুশ্রম ব্যাধিকে সারিয়ে তুলতে শিশুশ্রমকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর