Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আল জাজিরা, আল বিএনপি, আল জামাতি অপপ্রচার


২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:২৩

অতীতে দেশবিরোধী অপপ্রচারে সফল বিএনপি-জামাতিরা আবারও পুরানো খেলায় মেতে উঠেছে। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে নিয়ে সামরিক শাসক জিয়া ও তার সহযোগী জামাত-মুসলিম লীগ যে ঘৃণ্য অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছিল তা একটানা একুশ বছর চলেছিল। সে সময় তারা অনেকটা সফল হয়েছিল। সে সময়টা ছিল এক অন্ধকার যুগ। অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সামরিক স্বৈরাচারী শাসক জিয়া-এরশাদের নেতৃত্বে তাদের বশংবদ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নানামুখী অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল। তাদের আস্ফালনে সকল প্রগতিশীল শক্তি ছিল অসহায়। তাদের নির্লজ্জ অপপ্রচারে প্রগতিশীল শক্তি বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ও সব শুভ শক্তি ছিল তাদের আক্রমণের শিকার। কিন্তু তারা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছে, যেমনটি হয়েছিল একাত্তরে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এবারের খেলাটা ভিন্ন। যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকতে চাওয়া বিএনপি-জামাত চক্র বারবার জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে। জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত বিএনপি এখন সেই পুরনো কৌশল ঘৃণ্য অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এবার শরণাপন্ন হয়েছে বিদেশি টিভি চ্যানেলের। এই অপপ্রচারের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আছে সাজাপ্রাপ্ত এক পলাতক আসামি। সঙ্গে আছে বিভিন্ন পেশার আরও কিছু পলাতক কুলাঙ্গার ব্যক্তিবর্গ। দু-তিন জন সাংবাদিক নামধারী দেশবিরোধী লোভী এদেশীয় এজেন্ট, যারা নিজ দেশেই নানা অপকর্ম করে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পলাতক অবস্থায় বিদেশ রয়েছে। এরাই নানা ধরণের অপপ্রচারে তারেকের সহযোগী হয়ে কাজ করছে। সর্বশেষ এ চক্র বাংলাদেশ, সরকার, সেনাবাহিনীসহ স্পর্শকাতর নানা বিষয়ে অসত্য, মনগড়া, কল্পনাপ্রসূত, আজগুবি সব বিষয়ে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করতে নির্লজ্জ অপপ্রচার চালাচ্ছে। মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে বিতর্কিত বিদেশি গণমাধ্যম আল জাজিরাকে। এর আগেও যারা জামাতি-হেফাজতিদের নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছিল। যাদের কাজই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করা। এবারও এই আল জাজিরা একটি নির্লজ্জ, অসত্য, দেশবিরোধী প্রতিবেদন প্রচার করেছে।

বিজ্ঞাপন

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারকৃত কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা ইংলিশের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন নজরদারী করার প্রযুক্তি ইসরায়েল থেকে আমদানি করেছে। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি ) প্রচারিত এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিকসিক্স নামের একটি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের তৈরি এই যন্ত্র দিয়ে ওয়াইফাই, সেলুলার এবং ভিডিও নজরদারী করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে পূর্ব ইউরোপীয় দেশ হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের কাছে দুই জন ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর চারজন বাংলাদেশী গোয়েন্দাকে প্রশিক্ষণ দেয়।

এই প্রতিবেদন প্রচারের পর বিবিসি বাংলা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ. কে. আবদুল মোমেনের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি ইসরাইল থেকে সরঞ্জাম ক্রয়ের কথা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইল থেকে আমরা কিছু ক্রয় করিনি এবং আমাদের সঙ্গে ইসরাইলের কোনো সম্পর্কও নেই’।

অন্যদিকে এই প্রতিবেদনের কড়া প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবাদলিপিতে বলেছে, কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরায় “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনটি বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক মদদপুষ্ট।

প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণে জামায়াতের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করা হয়নি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি আল জাজিরার রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক প্রচারণার প্রতিচ্ছবি। এর প্রধান ভাষ্যকার ডেভিড বার্গম্যানকে মুক্তিযুদ্ধে সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা চ্যালেঞ্জের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’।

‘এটি লক্ষণীয় যে, আল জাজিরার অভিযোগের মূল ‘উৎস’ হলেন একজন কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধী, যাকে আল-জাজিরা নিজেই ‘মানসিক রোগী’ বলে দাবি করেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগসাজশের ছিটেফোঁটা প্রমাণও নেই। মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ কোনো ব্যক্তির কথার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেলের পক্ষে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’। বলা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকজন দণ্ডিত পলাতক আসামি এবং নিন্দিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের সঙ্গে প্রতিবেদনটি মিলে যায়। সংগঠনটি বহুবার আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী দল এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে, বিশেষ করে আল জাজিরার সঙ্গে’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কড়া বিবৃতি তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে। কিন্তু এই অপপ্রচার কেন? বৈশ্বিক মহামারির এই সময় দেশকে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সমস্যা কোভিড-১৯ এবং তার প্রতিকারের জন্য যখন দেশে ভ্যাকসিন চলে এসেছে এবং এর সঠিক প্রয়োগ শুরু হয়েছে ঠিক তখনই কেন এই নির্লজ্জ অপপ্রচার! যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া বিএনপি-জামাত চক্র ও তাদের পলাতক দণ্ডিত আসামিরা বিদেশ বিভূঁইয়ে বসে সরকার পতনের নীলনকশার অংশ হিসেবেই এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সারা পৃথিবীব্যাপী উগ্র, সাম্প্রদায়িক, ফ্যাসিস্ট স্ব স্ব দেশবিরোধী শক্তির মিলিত অপপ্রচারের ফ্যাক্টরি আল জাজিরা। যারা বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এই ধরণের ‘খ্যাপ’ প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পকাশ করে বিভ্রান্তি তৈরি করে। আর তাদের এসব ফেক প্রতিবেদন তৈরিতে মালমসলা সাপ্লাই দেয় বা এসব বায়বীয়, কল্পনাপ্রসূত দেশবিরোধী মিথ্যাচার প্রতিবেদন তৈরির হোতা ইলিয়াস-কনক-দেলোয়ার জানোয়ারেরা। ওরা বিদেশে বসে তারেক গংদের টাকা খেয়ে দেশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। ওরা দেশদ্রোহী, ওরা কুলাঙ্গার, ওরা বিএনপি- জামাতের এজেন্ট, খালেদা- তারেকের পেইড প্রোডাক্ট।

আল জাজিরা ও তাদের এদেশীয় এজেন্ট বা এদেশীয় এজেন্টরা আল জাজিরার উপর ভর করে এর আগেও অনেক অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল। হেফাজতের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সেই সময়েও কল্পিত নানা ধরণের অপপ্রচার চালিয়েছিল এই আল জাজিরা, যার ন্যূনতম সত্যতা সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। একইভাবে সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে জামাত-বিএনপির নেতৃত্বাধীন তারেকের এই চক্রটি বার বার সরকার, সরকার প্রধান শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সেনাবাহিনী, সেনা প্রধানসহ স্পর্শকাতর অনেক বিষয়েই দেশবিরোধী নানা ধরণের অসত্য অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এই অপপ্রচারে বিদেশিদের কাছে হয়তো সাময়িকভাবে কিছুটা দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে সহায়তা করেছে, কিন্তু শেষ বিচারে এই মাতৃভূমির প্রতি যে অবিচার তারা করেছে সেটাও তাদেরকে একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড় করবে। মনে রাখতে হবে, এই দেশটা সবার। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের, দেশের মানুষের বিরোধিতা করা, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, ক্ষমতায় যেতে দেশবিরোধী অসৎ পথ অবলম্বন কোনো দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর কাজ নয়। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করে, দেশে ফিরে আইনের মোকাবিলা করে সঠিকপথে নেতৃত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাই সঠিক পথ। জিয়া এরশাদের পথ অবলম্বনের দিন শেষ। ষড়যন্ত্রের পথে না হেঁটে জনগণের মন জয়ে চেষ্টা করুন। রাজনীতিতে ক্ষমতায়ই শেষ কথা নয়। ক্ষমতায় থাকতে আপনাদের হাওয়া ভবন খোয়াব ভবনের শাসন দেশবাসী দেখেছে। যার ফল এখনও আপনারা ভোগ করছেন। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, লুটপাট, দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি, খুনখারাবীর যে মহা-উৎসব শুরু করেছিলেন তা এদেশের জনগণ বার বার আপনাদের প্রত্যাখ্যান করে দেখিয়ে দিয়েছে।

হেফাজতি-জামাতিদের শাপলা চত্বর নিয়ে অপপ্রচার,পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে অপপ্রচার, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে অপপ্রচার সব অপপ্রচারই যখন মাঠে মারা গেছে, তখন শুরু হয়েছে ভিন্ন ধরনের অপপ্রচার। এই অপপ্রচারও সফল হবে না। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র চক্রান্ত পরাজিত হবে। এসব অপপ্রচার উপেক্ষা করে বিশ্বের দরবারে বুকটান করে মাথা উঁচু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে যেভাবে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশাল্লাহ তা অব্যাহত থাকবে।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

আল-জাজিরা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর