শিবিরের নৃশংসতার ইতিহাস; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব-১)
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:২৪
প্রথম পর্ব
হত্যা, রক্তপাত, চোখ উপড়ে ফেলা, সাইকেলের স্পোক কানের ভিতর ঢুকিয়ে মগজ বের করে ফেলা আর রগ কর্তনের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা। ১৯৭৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা চত্বরে এক সভার মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে। শিবির হত্যা ও রগকাটার রাজনীতির বর্বরতায় ছাত্রলীগসহ অপরাপর ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের বাধাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।
প্রথমে মসজিদ কেন্দ্রিক প্রচার-প্রচারণা চালালেও পরবর্তীতে সশস্ত্র অবস্থান নিতে থাকে জামায়াতে ইসলামীর এই ছাত্র সংগঠন। আশির দশকের শুরু থেকে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে রক্তাক্ত করে তোলে মতিহারের সবুজ চত্বর। সংঘর্ষ, হামলা-গুপ্ত হামলায় শিবিরের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একের পর এক প্রাণ বলি হতে থাকে। একপর্যায়ে শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
রাজশাহীতে শিবির প্রথম নির্মম এবং বর্বর হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় ১৯৮৮ সালের ৩১ মে। সেদিন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জামিল আকতার রতনকে চার হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। শত শত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সামনে এমন নির্মম ঘটনার জন্ম দিয়ে স্বরূপে হাজির হয় ছাত্রশিবির। একের পর এক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকে রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরেও থেমে থাকেনি শিবিরের বর্বরতা। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রায় শতাধিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। আর ২০১০ সাল পর্যন্ত শিবিরের বর্বরতায় ছাত্রলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সংগঠনের ২৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। আহত হয় সহস্রাধিক মেধাবী শিক্ষার্থী। এ সময় শিবিরের কাছে টার্গেটকৃতদের আহত করার অভিনব কৌশল ছিল হাত-পায়ের রগ কাটা। একেবারে মেরে না ফেলে হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে ভয়ানক ত্রাসের জন্ম দেয় তারা। জানা গেছে, এক দশকে শিবির প্রতিপক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য করেছে।
১৯৮২ সালের ১১ মার্চ প্রথমবারের মতো শিবির ক্যাডাররা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৩ বাসভর্তি বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এই হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে শিবিরের বহিরাগত চারজন কর্মী মারা যায়। শিবিরের হামলায় মারা যায় ছাত্রলীগের নেতা মীর মোশতাক এলাহি। এই সহিংস ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই ঘটনার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টায় কিছুটা ভাটা পড়ে শিবিরের।
তবে তারা বসে থাকেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে শিবির চট্টগ্রামের মতো একই কায়দায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে তাদের শক্তিমত্তা বাড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোকে তারা বানিয়েছে তাদের মিনি ক্যান্টনমেন্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বিনোদপুর, বুধ পাড়া, মেহেরচন্ডী গ্রামে শিবিরের অনেক কর্মী ও ক্যাডার স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করে এসব গ্রামে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে। এছাড়া আত্মীয়তা সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার কারণে শিবিরের এসব কর্মী ও ক্যাডারদের কথায় স্থানীয় অনেকেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকার পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা। এভাবে এলাকাগুলোতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলে।
চলবে
লেখক: প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
ইসলামী ছাত্র শিবির ছাত্র শিবির ছাত্রলীগ জয়দেব নন্দী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়