৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির মুক্তির পথনির্দেশক
৭ মার্চ ২০২১ ১১:২১
দীর্ঘ ২৩ বছরের পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি বঞ্চনায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। অবহেলা ছিল অধিকারহারা জাতির নিত্যদিনের সঙ্গী। এমনই সময়ে সেইদিন বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভাষণটি যেন এক আর্শীবাদরূপে আবির্ভূত হয়। এ ভাষণে উঠে এসেছে একটি জাতির আত্মজাগরণের কথা, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা, স্বাধীনতার কথা। তার এই দৃঢ় প্রত্যয়ে বাঙালির দীর্ঘদিন জমে থাকা ক্ষোভ এক মুহূর্তেই শক্তিতে পরিণত হয়। এ শক্তিই দেশকে অশুভ শক্তির হাত থেকে উদ্ধার করে, স্বাধীনতার স্বাদ এনে দেয়।
বাংলা মায়ের করুণ-মমতাস্পর্শী সন্তানরা যখন একের পর এক অত্যাচারে নিষ্পেষিত, ঠিক তখনই ৭ মার্চের সেই দীপ্ত কণ্ঠে ঐতিহাসিক ভাষণটিই যেন জাদুর কাঠির মতো বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছিল। এ ভাষণটি শুধু একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রাণশক্তি হয়ে নির্দিষ্ট স্থানেই আবদ্ধ নেই। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত এই ঐতিহাসিক দলিলটি ১২টি ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্ববাসীর নিকট ছড়িয়ে পড়েছে এক আলোর দিশারি হয়ে। এ যেন সর্বকালের সকল নিষ্পেষিতদের মুক্তির পথনির্দেশক।
আজ স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে বাঙালি জাতির একটি স্বাধীন মানচিত্র আছে, তবুও তারা ব্যক্তিস্বাধীনতা পুরোটা পাচ্ছে না। এসময়ে এসেও চোখে পড়ছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির তাণ্ডব, দুর্নীতি, ধর্ষণ, জঙ্গিবাদের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো, যা স্বাধীনতা ভোগের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এদেশটিতে ৭ মার্চের ভাষণের নবজাগরণ দরকার। গুটিকয়েক স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে নির্মূল করতে আবার একত্রিত হতে হবে, ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ‘৭১-এ! মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদকে দমাতে সেই ঐতিহাসিক ভাষণের দ্বারস্থ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে সজাগ হতে হবে। তারা জাগলেই জেগে উঠবে গোটা দেশ।
দেশে ক্রমবর্ধমান উন্নতির চাকা সচল রাখতে, প্রতিটি নাগরিককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে, নারীমুক্তিতে, অধিকার-বঞ্চিতের অধিকার ফেরাতে দামাল তরুণদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ আদর্শের আদলেই গঠিত হবে একটি সুন্দর সমাজ। এবার যেন আত্মশুদ্ধির পালা; সুসংগঠিত সমাজ গঠনের পালা। এ যুদ্ধে জয়ী হতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের চেতনাকে বুকে ধারণ করতে হবে, দেশপ্রেমকে প্রবল করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়