রক্তবীজে জাগুক নারী
৮ মার্চ ২০২১ ১৩:০০
আদিম বর্বর যুগে যখন মানুষের বৃত্তি ছিলো পশুশিকার, প্রস্তরযুগ যখন মোড় ঘোরালো পশুপালনে ঠিক তখনই সভ্যতার জন্ম হলো কৃষিকাজের মাধ্যমে। আজ আমরা সভ্য জাতি। কৃষির আবিষ্কার না হলে যার সূত্রপাত হতোনা কখনোই। জানেন এর আবিষ্কারক কে? জ্বী, নারী…
নারী জাতিই কৃষির আবিষ্কারক, সভ্যতার জন্মদাত্রী। জন্মের সাথে যাঁর সম্পর্ক সেই তো নারী, মায়ের জাতি। বর্ষা-বল্লম এর আবিষ্কারে পুরুষদের পশু শিকারে আধিপত্য বিস্তার হলো আর নারীদের দায়িত্ব পড়লো বাচ্চাপালন, রান্নাবান্না, সংসার সামলানোতে। এছাড়া মেয়েরা পাশাপাশি বন্য ফলমূল ও আহরণ করতো।
যেভাবে কৃষিকাজের উৎপত্তি
বুনো ফল, বীজ প্রভৃতি আহরণ করতে করতে মেয়েরা ক্রমশই দেখতে পেলো যে কোথাও কোথাও জমির উপর বীজ পড়লে সেখানে অঙ্কুরোদগম হয়, অঙ্কুর থেকে গাছ আর ফলমূল। সে যুগে চাষাবাস ছিলো নেহাতই মেয়েলি ব্যাপার। পুরুষদের সাথে শুরুতে এর সম্পর্ক ছিলোনা। পুরুষেরা পশু শিকারে ব্যস্ত আর মেয়েরা চেষ্টায় ছিলো মাটি খুঁড়ে ফসল ফলাবার। একসময় এই কৃষিকাজ বিদ্যা চলে গেলো পুরুষের দখলে। চাষবাস ধীরে ধীরে পুরুষপ্রধান হয়ে দাঁড়ালো। মেয়েরা এই কাজে তাদের ক্ষমতা হারালো। এভাবেই সূচনা হলো নারীর প্রতি বৈষম্যের। সভ্যতার শুরু থেকেই নারীরা সর্বক্ষেত্রে নিম্নস্তরের বাসিন্দা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কখনো পরিবারে তো কখনো অফিসে, কখনো রাস্তায় তো কখনো বাসে-ট্রামে- সব জায়গায়ই নারীরা হয় পণ্য নাহয় ভোগ্যবস্তু। সভ্যতার বহুকাল পেরিয়ে গেলেও বর্তমানে বেড়ে চলেছে বৈষম্য আর সহিংসতা।
আমরা পরিবারের দিকে তাকালে দেখতে পাই সেখানে নারীরা পণ্য আর মেশিন ছাড়া কিছুই নয়।আমাদের সমাজে আজও একটা মেয়েকে বিয়ে দিতে মেয়ের বাবা-মাকে যৌতুকের সম্মুখীন হতে হয়।হ্যাঁ, ধরণটা হয়তো পাল্টেছে। আধুনিক যুগের যৌতুক, আসবাবপত্র, ফ্রিজ, টিভি, স্বর্ণালংকার আর বিরাট সংখ্যার বরযাত্রীর আপ্যায়ন। হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিতে বিয়ের সময় কন্যাদান পর্ব থাকে। কন্যা কোন পণ্য নয়, যে দান করতে হবে, কন্যা হলো অলংকার যার মূল্য সমগ্র পৃথিবী দিয়ে চুকানো যাবেনা। এ গেলো তো বিয়ে। মা-বাবা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে ঠেলাগাড়ির বোঝা মেয়ের জামাইকে ভিক্ষে দেওয়াতেই মেয়েটা মুক্ত নয়। নতুন সংসারে গিয়ে সংসারের যাবতীয় সকল কাজ,পরিবারের সকল সদস্যের পৃথক পৃথক চাহিদা পূরণ, বাচ্চা পালন, পান থেকে চুন খসলেই মানসিক নির্যাতনসহ যেন বিনা ইনভেস্টমেন্টে কাজের মেশিন হচ্ছে এই গর্ভধারিনীগণ।
এতেই শেষ নয়। আজকের দিনেও কন্যা সন্তান জন্ম দিলে কথা শুনতে হয় একটা মেয়েকেই। একবারও এই সমাজ ভাবেনা কন্যা সন্তান না জন্মালে ধরিত্রীতে কোন পুরুষও জন্মায় না। আজকের দিনেও আমাদের এই উপমহাদেশের অধিকাংশ ঘরের বৌদের চাকরি করা অপরাধ। ‘বৌ কিভাবে বাইরে কাজ করে? লাজলজ্জা নেই? লোকে কি বলবে, সংসার কে সামলাবে’- এগুলো শুনতে তারা অভ্যস্ত। এভাবে স্যাক্রিফাইস করে যায় নারীরা। একসময় শুধু ছেলেদেরই পরিবারের হাল ধরতে হতো। কিন্তু ৩য় বিশ্বের এই দেশে অধিকাংশ মেয়েকে অতি অল্প বয়স থেকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, ভালোলাগা-খারাপ লাগা, নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়ে ধরতে হয় পরিবার চালানোর পাল্লাখানি। দিনের পর দিন দায়িত্ব নামের বাটখারার ওজন বাড়তে থাকে, ওজন সামলাতে গিয়ে পা টলতে থাকে, তবুও মেয়েরা হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে না। জীবনযুদ্ধে কষ্টকে দাঁতে দাঁত দিয়ে চেপে দেবী দশভূজার ন্যায় বহন করে পরিবার নামের পাল্লাটিকে। আশেপাশে খোঁজ নিন। আপনার কোন আপন মানুষই হয়তো এই যুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধা। এতো স্যাক্রিফাইসের পরও মেয়েটাকে কতখানি বোঝে তার পরিবার? কতখানি বুঝি আমি, আপনি, আমরা?
দিনশেষে তাদের ঘাড়ে কলঙ্কের বোঝা চাপাই। অথচ মেয়েটার রক্তজল করা পয়সা গ্রহণে একফোঁটাও কলঙ্কের ছাপ পাই না। যত দোষ সব ওই মেয়েতেই। তার ঘাম বিক্রির টাকায় নেই কোন কলঙ্ক, আছেই শুধু পবিত্রতা। আমরা জানতে চাইনা দিনশেষে ঘরের বৌ আর পরিবারের বড়/ছোট মেয়েটার ক্ষুদ্র চাওয়াটুকুও।
৩য় বিশ্বে নারীরা যেন আজও ভোগের বস্তু। বাজারের খাবার ও আমরা কিনে খাই। যেখানে ছেলে সন্তান না জন্মালে আমরা দুঃখ করে বলি মেয়ে হয়েছে, বৌ ব্যাটার জন্ম দেয় নি, সেই পুরুষতান্ত্রিক রাজ্যের রাজারাই মেয়েদের বাজারের পণ্য থেকেও নিচে নামিয়ে এনেছে। যেন চাইলেই একজন নারীকে ধর্ষণ করা যায়, ভোগ করা যায়। নারীদের সব থেকে বেশি নিপীড়িত হতে হয় যৌন লালসার ফাঁদে। আধুনিক যুগে যে রাষ্ট্র যত সভ্য সেই রাষ্ট্রগুলোতেই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে বেশি। সভ্যতাকে গর্ভে ধারণ করেছে যে মা, এই সভ্যতা আজ তার মায়েরই নিরাপত্তা দানে ব্যর্থ।
সারাবিশ্বেই আজ নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাপক হারে। আজ অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং নেতৃস্থানীয় পদে, গবেষণা, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে নারী। এভারেস্ট জয়ে রয়েছে প্রথম বাঙালি নিশাত মজুমদার অথবা মঙ্গল বিজয়ের পথে অ্যালিসা কারসন। ক্রিকেটে সেফালি, মলিনেক্স অথবা হকিতে রাণী রামপাল। উন্নত বিশ্বে নারীরা আজ দুর্বার গতিতে এগোচ্ছে কিন্তু তারা কতটুক নিরাপদ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে? আজকে আমার মাবোনেরা না নিরাপদ বাসে, ট্রামে, অফিস আদালতে কিংবা রাস্তাঘাটে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু উচ্চপদস্থ বস কর্তৃক যৌন নিপীড়ন কমছেনা, যৌন নিপীড়নের কথা প্রকাশ করা রোধ করতে থাকছে খুন, মানহানী, শ্লীলতাহানির হুমকি।
প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বে বেড়ে চলেছে ধর্ষণ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও ধর্ষণের কেস প্রচুর। বিবিসি’র তথ্যমতে, ২০১৯ সালের শেষে শুধু ভারতেই ধর্ষণের অমিমাংসিত মামলা প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৫ জনে ১ জন নারী প্রতিদিন ধর্ষণ ও গণধর্ষণের স্বীকার হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিলো প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ। বাংলাদেশ ও পিছিয়ে নেই।আমরা কি গ্যারান্টি সহকারে বলতে পারি বাংলাদেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ টি ধর্ষণ হচ্ছেনা? বাংলাদেশে প্রতিবছর শত শত ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমের নজরে আসেনা, আবার অনেকগুলো ধর্ষণ মামলার আবেদন লোকলজ্জা আর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষমতার ভয়ে থানা অব্দি পৌঁছায় না। প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের অর্থাভাবে মামলা লড়ার সুযোগ অনেকসময় হয়েও উঠেনা। মানবিকতার অবক্ষয় আজ এমন পর্যায়ে যেখানে ধর্ষকের কালো থাবা থেকে স্বামী তার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেনা যার উদাহরণ সিলেটের এম.সি. কলেজের ধর্ষণ, চট্টগ্রামের মোহরায় স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা।
নোয়াখালীর গৃহবধূ ধর্ষণ হওয়ার তথ্য দেশবাসী তথা মিডিয়া জেনেছিলো প্রায় দেড় মাস পর অপরাধীরই মাধ্যমে। তাহলে কি বলা উচিত নয়, ডিজিটাল দেশ শুধু নামেই ডিজিটাল কারণ অসংখ্য ধর্ষণ হয় আর ঘটনাগুলো চাপা পড়ে থাকে দেশের আনাচে কানাচে। সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে কিন্তু আজও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় নি।
আমাদের শিশুরা কচি বয়স থেকেই শিখছে নারী পুরুষের বৈষম্য আর রেসিজমের মতন নষ্ট চেতনাকে।যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় চতুর্থ শ্রেণির বাচ্চাকে গণিত ক্লাসে শেখানো হয় ‘৩জন নারীর যে কাজ করতে ১ দিন সময় লাগে, সেই একই কাজ ১ জন পুরুষ ১ দিনে করতে পারবে’- তাহলে এই গণিতটি কি আমাদের ম্যাসেজ দেয় না নারী পুরুষ থেকে দূর্বল?
এই প্রশ্নের যুক্তিতে কিছুটা উদাহরণ দেই-
১. নারী পুরুষ থেকে দূর্বল নয়। কারণ সাধারণ মানুষ যেখানে সর্বোচ্চ ৪৫ডেল (ইউনিট) ব্যাথা সহ্য করতে পারে সেখানে একজন মা সন্তান জন্ম দেবার সময় ৫৭ ডেল পর্যন্ত ব্যাথা সহ্য করে যা শরীরের ২০টি হাড় ভাঙার ব্যাথার সমান।
২. পাহাড়ে জুমচাষের মাধ্যমে কৃষিকাজ হয়। এছাড়াও কলসি করে খাওয়ার জল আনতে হয় পাহাড়ের উঁচুনিচু লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে। পাহাড়ি এলাকা ভ্রমণ করলে দেখবেন ষাট বছরের পাহাড়ি বৃদ্ধা একাজ অনায়াসেই করতে পারে যেখানে সমতলের একজন ২৫-২৬বছরের যুবককে দিলে এ কাজ করতে অল্পসময়েই হাঁপিয়ে যাবে।
এরকম আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। তাহলে আমরা কিভাবে বিচার করতে পারি যে নারী পুরুষ থেকে দূর্বল? সমাজসৃষ্ট ৩ শ্রেণীর (উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র) নারীরা ছোট থেকে ভারি শ্রম করতে অভ্যস্ত হয়না যেখানে একজন সুবিধাবঞ্চিত শিশু ৬-৭ বছর বয়সেই ইটের ভাটা, রাজমিস্ত্রির কাজ, পরিবহন শ্রমসহ সকল ভারি কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।
এছাড়া একজন পুরুষের পারিশ্রমিক থেকে তিনজন নারীর পারিশ্রমিক তুলনামূলকভাবে কম হয়।তাহলে ১ জন পুরুষের ১ দিনের কাজ ৩ জন নারীর ১ দিন লাগা কি স্বাভাবিক নয়? এই দেশের বাচ্চাদের ইংরেজি বইতে একটি মেয়ের ছবি ফর্সা এবং আরেকটি মেয়েকে খয়েরি রঙ করে যথাক্রমে লিখা হয় She is beautiful এবং She is ugly… এখানে আমরা আশা করি তবে নারী পুরুষের সমতা, যেখানে শিক্ষাব্যবস্থায় শেখানো হয় নারী পুরুষ থেকে দুর্বল, নারী ফর্সা হলেই সুন্দর আর গায়ের রঙ কালো বা খয়েরি হলেই কুৎসিত?
নারীর মর্যাদা দিতে চাইলে সর্বপ্রথম পরিবর্তন করতে হবে আমাদের মানসিকতায়। মানসিকতা যেখানে কলুষিত, নারীর ক্ষমতায়ন করে সমাজ, রাষ্ট্র পরিবর্তনের চিন্তা সেখানে ভুল। নারীকে আজ ২০’র দশকে দাঁড়িয়েও রজঃস্বলা অবস্থায় কোন ধর্মীয়স্থানে প্রবেশ এবং ধর্মীয় কাজ করতে দেওয়া হয় না কারণ ওই অবস্থায় নারী অপবিত্র। অথচ সেই অপবিত্র অবস্থায় নারীর হাতের রান্না খেতে ক্ষতি নেই। দিনশেষে পরিবার, সমাজ তার জন্য হাজারটা বিধান জুড়ে দেয় এবং কোন বিধান ভঙ্গ হলো তার হিসেব কষে অথচ কেউ একটাবার জানতে চায় না তার পিরিয়ডের ব্যাথাটা বেশি করছে কিনা, সে খেয়েছে কিনা, গরম জল নিয়েছে কিনা। এই সমাজে কোন ছেলে রাত ১১টা অব্দি বাইরে থাকলে তার চরিত্রে কালি পড়েনা কিন্তু একটা মেয়ের রাত ৮-৯ টার পর বাইরে থাকা নিষেধ।
এ সমাজ বদলাবে কবে? এ সমাজ বুঝবে কবে কন্যা কোন দানসামগ্রী নয় কন্যা হলো অহংকার। এ সমাজ শিখবে কবে মেয়ে কোন মেশিন নয়, তারও বাঁচার, হাসবার অধিকার আছে। এ সমাজ বুঝবে কবে কর্মক্ষেত্রে যে মেয়েটা বিশাল দায়িত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে রোজগার করতে যায় সে কোন ভোগের বস্তু নয়, সে কারো বোন, কারো মা, কারো মেয়ে কারো স্ত্রী। পরিবর্তন সেদিন হবে যেদিন নারীদের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হবেনা আমাদের মতামত, যেদিন পাঠ্যপুস্তকে নারী-পুরুষের বৈষম্য সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো তুলে দিয়ে আনা হবে সুস্থ সৃজনশীলতার চর্চা, পরিবার আর স্কুল-কলেজে শেখানো হবে সেক্স এডুকেশন।
একজন শিশু ধর্ষক পরিচয়ে জন্ম নেয় না। সমাজ আর পরিবেশের অপর্যাপ্ত অপূর্ণ শিক্ষা তাকে ধর্ষক বানায়। আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষকরা শারীরিক শিক্ষায় বয়ঃসন্ধিকালের অধ্যায় পড়াতে লজ্জা পান। তাহলে ভেবে দেখুন কোমলমতী শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব কি।
নারীর শ্রমমর্যাদার অধিকার আদায়, নারীর নিরাপত্তা, বৈষম্য নিরসনসহ সকল অমানবিকতাকে রুখে দিতে ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেট নারী সংগঠন’ এর পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয় ১৯০৯ সালে এবং বিভিন্ন দেশের সমাজতান্ত্রিক নেতাদের উদ্দ্যোগে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ থেকে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আমরা চাই একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যে ব্যবস্থায় নারীর অমর্যাদা হবেনা, নারীরা উপভোগ করবে একটি নিরাপদ কর্মক্ষেত্র। পুরুষের মতন নারীও রাতে নির্দ্বিধায় নিরাপদে হাঁটবার অধিকার রাখবে আর সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে দেশের সরকার আর দেশে বসবাসকারী সকল নাগরিকগণ যা একমাত্র সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এনে দিতে পারে।
নারী মানে শুধু কোমলতা নয়, নারীতেই দেবীশক্তি। নারীতে গর্জে ওঠে প্রতিবাদ আর নারীতেই প্রতিরোধ। নারী হলো রক্তবীজ, একজন নারীই পারে জন্ম দিতে হাজারো রুদ্রানীর। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে শুধুমাত্র প্রেস কনফারেন্স, সংবর্ধনা আর জাতিসংঘে কিছু উইমেন রাইটস নামমাত্র পাস না করিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীর প্রতিটা কোণায়। প্রতিটি দিনই হোক নারীদের জন্য। নয়তো পাল্টাবে না এই অন্ধ সমাজ। সভ্য হয়েও আমরা থেকে যাবো অসভ্য।
আসুন আজকের এই দিনে আমরা শপথ নিই নষ্ট স্রোতের বিপরীতে সুন্দরের সহযাত্রী হয়ে বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ে তোলার। কারণ পুরাতনকে ভেঙে নতুন কিছু সৃষ্টির কারিগর শুধু পুরুষ নয়, সমানতালে নারীরাও। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন- ‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান চিরকল্যানকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
আজকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সকল নারীদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা।
লেখক- সংগঠক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা
সারাবাংলা/আরএফ