নুরুর মুসলমান তত্ত্ব
২১ এপ্রিল ২০২১ ১৭:২৮
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন প্রকৃত মুসলমান কেউ আওয়ামী লীগ করতে পারে না। আরও অনেক মিথ্যাচার করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা তার এই বক্তব্য যদি সঠিক হয়, এখন পর্যন্ত তিনি অস্বীকার করেন নাই যে এই বক্তব্য তার না। তাই ধরে নেওয়া যায় সুস্থ মাথায় চিন্তাভাবনা করেই তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। যেভাবেই হোক, যে প্রক্রিয়ায়ই হোক এই নুরু ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আজ থেকে আরও কিছুকাল পরে ডাকসুর ভিপি হিসেবে নুরুর গুরুত্ব আরও হয়তো বাড়বে। বর্তমানে তার রাজনৈতিক চরিত্র, কারা তার পৃষ্ঠপোষক, কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে তার মত একটা ছেলে ডাকসুর মত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের ভিপি নির্বাচিত হয়েছে তা সবারই জানা। কিছুকাল পরে সে হয়ত অতীতের ডাকসুর ভিপিদের মত রাজনৈতিক মর্যাদা ভোগ করবে এবং সেই প্রজন্ম বুঝবেও না এমন একটা ছাত্র রাজনীতির ‘ভাড়’ একদিন ডাকসুর ভিপি ছিলেন।
ছাত্রলীগের কথিত চতুর্থ শ্রেণীর এক বিতাড়িত কর্মী থেকে সেই নুরু বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের দৈন্যদশায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রে পরিণত হবে। ডাকসুর সাবেক ভিপি হিসেবে সে হয়তো সেদিন আরও ঐদ্ধতপূর্ণ বক্তব্য রেখে জাতীয় নেতার তকমা গায়ে লাগবে। অবাধ মিডিয়ার কল্যানে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহজে মানুষের কাছে যাওয়ার এই জোশ নুরুকে পেয়ে বসেছে। অনেক দিন ধরেই তাকে মিডিয়ায় সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। একশ্রেণীর কিছু পতিত রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামধারী কিছু শিক্ষক ও ধর্মীয় ওয়াজের নামে নানা কিসিমের সস্তা সুরসুরি দেওয়া মাঠ গরম করা বক্তব্য এদের ‘স্টার’ বানিয়ে ফেলেছে। এই ‘স্টার’ হওয়ার জোশ এরা কিছুতেই সামলাতে পারছে না। নুরু, আসিফ নজরুল, ডা. জাফরুল্লাহ, মামুনুল হক, টোকাই ওয়াজকারী রফিকুল ইসলাম, রিজভী, মাদানী নাফারমানিরা মিডিয়ার এই জোশ কোনভাবেই সামলাতে পারছে না। এরা যেকোন উপায়ে সরকারের বিরুদ্ধে যা তা ধরণের কথা বলে আলোচনায় থাকতে চায়।
নুরু ভিডিও বার্তায় যা বলেছে তাকে পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কি বা বলা যেতে পারে। কিছুদিন আগেও এই ধরণের চরিত্র মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, ফরহাদ মাজহারদের উৎপাত বেড়েছিল। টিভি টকশো আর প্রেসক্লাবের সামনে বিষয়বস্তুহীন যেকোন প্লাটফর্মে সরকার বিরোধী গরম বক্তব্য দিয়ে তাদের ভালোবাসার শেষ ঠিকানা বিএনপি জামাতের মন জুগিয়ে কিছু বিদেশি দূতাবাসের উপঢৌকনের আশায় সিরিয়াস জোশ নিয়েই মাঠে নেমেছিল। কিছু পাওয়ার দীর্ঘ সূত্রিতায় সে আশায় গুড়েবালি পড়ায় তারা এখন কই আছে পরিবারের সদস্যরা ছাড়া আর কেউ জানে না। শোনা যায় বিদেশে বসে ভাড়া করা কিছু কুকুর দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘেউ ঘেউ করাচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির টোকাই পর্যায়ের কর্মী এই নুরু অলৌকিকভাবে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে তার অতীতের সকল পাগলামীর রেকর্ড ভঙ্গ করে মারাত্মক এক দুঃসাহসিক বেয়াদবীপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগ ও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে। মানুষের ধৰ্ম বিশ্বাসকে তাচ্ছিল্য করেছেন নুরু। উদ্দেশ্য যদি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে থাকে বা নামে বেনামে বিভিন্ন জন বা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অগাধ টাকা পয়সার গরম সহ্য করতে না পেরে এই ধরণের আপত্তিকর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে থাকে তাহলে তার এক ধরণের মূল্যায়ন। আর যদি ঠান্ডা মাথায় এমন ঐদ্ধতপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে থাকেন তার বিচার আওয়ামী লীগের করা দরকার বলে মনে করি।
মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্য আর তার সাথে একজনের ধর্মীয় চিন্তা চেতনা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বা ধর্মীয় অনুভূতিকে তাচ্ছিল্য করা অপরাধের পর্যায়ে পরে। তাই তার এই বক্তব্যকে কোনভাবেই ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নাই। নিজেকে দামে তুলতে এবং বিরোধী রাজনৈতিক প্লাটফর্মে নিজের দাম বাড়াতে বা কোন দেশি বিদেশি অপশক্তির ক্রীড়নক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে এই ধরণের বক্তব্য দিয়ে থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অপরাধে তাকে উপযুক্ত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি। সরকার বিরোধী গরম বক্তব্য দিয়ে সহজে মন পাওয়ার এই উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি বেশ পুরানো। সরকার বিরোধী যে কোন বক্তব্য পাবলিক একটু বেশিই খায় সেই চিন্তা থেকে আজকাল অনেকেরই বক্তব্যে জোশ এসেছে। তাই কিছু কিছু রাজনৈতিক ‘ভাড়’ ইউটিউবে পাওয়া জনপ্রিয়তায় মাথা গরম হয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। তার সাথে পাওয়া যাচ্ছে বেশুমার টাকা পয়সা। যেকারণে এই টাকার গরম সহ্য করতে না পেরে কেউ অন্যের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী দাবি করে আরামদায়ক রিসোর্টে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ গণমাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যের মুসুলমানিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে।
তা না হলে কতবড় আহাম্মক নুরু কিভাবে বলতে পারে, প্রকৃত মুসলমানরা আওয়ামী লীগ করতে পারে না। নিজের কথাবার্তা চালচলনে বলনে কতটা ইসলাম ধর্মের অনুগামী সেই বিচার নিজে কখনো করেছে কিনা তার কোন হদিস নেই। অথচ সেই কিনা কোটি মুসলিমের মুসলমানিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন নুরুর মতো ‘ভাড়’ এর বক্তব্যকে এত পাত্তা দেয়ার কিছুই নেই। নিজেকে আলোচনায় রাখতে এটা তার বিএনপি জামাতীয় কৌশল, যে কিনা তাদের একজন এজেন্ট হিসেবেই কাজ করছে। পাকিস্তানি জামানা থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর পুরোনো খেলায় এই নূরুদের রাজনৈতিক বাপ দাদারা সফল হতে পারে নাই। কিন্তু অপপ্রচার চালিয়ে গেছে মনের মাধুরী মিশিয়ে। সেই একই কায়দায় তৎকালীন মুসলিম লীগের বর্তমান ভার্সন বিএনপি যখন এই অপপ্রচার চালিয়ে জনগণের কাছে বার বার ধরা খেয়েছে ঠিক তখনই এই নুরু মামুনুলদের উৎপাত আবার শুরু হয়েছে। এরা না নিজে ধৰ্ম কর্ম সঠিকভাবে পালন করে, না অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করে। বরং তারা ধর্মের নামে যেসব অধর্মের কাজ করে বেড়ায় তা জনসমক্ষে তুলে ধরার সময় এসেছে। ওই সমস্ত ভন্ড, মানসিক বিকারগ্রস্ত, লোভী, চতুর নুরুরা অতীতেও রাজনৈতিক অঙ্গন কলুষিত করেছে, এখনো করছে। ধরে নেওয়া যায় ভবিষ্যতেও করবে।
মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে হঠাৎ ‘নেতা’ বনে যাওয়া নূরুরা হতাশাগ্রস্ত, ক্ষমতাপাগল, অর্থলোলুপ, সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ কোন একটি গোষ্ঠীর খেলার পাত্র হিসেবে খেলে যাচ্ছে। সেই খেলায় উপযুক্ত দাম না পেয়ে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে সুরসুরি দিচ্ছে। যা আগুন নিয়ে খেলার শামিল। আগুন নিয়ে খেলার পরিণতি নুরু ও তার মুরুব্বীদের অজানা নয়। নূরুরা যেমন একদিন ছদ্মবেশে ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছিল। ভাগ্যিস সেই রূপ জনসম্মুখে প্রকাশের আগেই তাদের আসল জায়গায় চলে গেছে। তাই এদের এই সমস্ত সাম্প্রদায়িক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য যে ওদের মুরুব্বী জামাত বিএনপির সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পুরানো অপপ্রচার তা তার এই বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। না হলে করোনা মহামারির এই সময়ে দেশের মানুষের পাশে না থেকে এমন উষ্কানীমূলক বক্তব্য দেঅয়ার মাজেজা খুঁজে পাওয়া যায় না। করোনায় কর্মহীন মানুষের পাশে এদের পাওয়া যায় না, রোজাদারদের একদিন সেহরি বা ইফতার খাওয়াতে এদের কোথাও দেখা যায় নাই। কোন দুর্যোগ দুর্বিপাকে এরা কোন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। অথচ এরা প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক ময়দানে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিয়ে সরকারবিরোধী তথাকথিত জনপ্রিয়তা পেতে উদগ্রীব হয়ে থাকে। বিরোধী রাজনীতির মাঠে অযোগ্য, নীতি আদর্শহীন রাজনৈতিক দল বিদ্যমান থাকলে এইসব রাজনৈতিক ভাড়রা ডিস্টার্ব করবে এটাই হয়তো আমরা ধরে নেই। কিন্তু এই ডিস্টার্বরা দেশ,সমাজ এবং রাজনীতির জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ। তাই এদের সুমুলে উৎপাটন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই/আরএফ