বনাখলা ও আগার খাসিপুঞ্জির ন্যায় বিচার
৬ জুন ২০২১ ১৩:০৭
আদিবাসী খাসিরা পাহাড়ি-টিলায় গড়ে তোলা নিজেদের গ্রামকে ‘পুঞ্জি’ বলে। বাংলাদেশে প্রধানত ধানভিত্তিক কৃষিজীবন গড়ে উঠলেও খাসিরা ধান আবাদ করেন না। লতানো গাছ পানসহ নানা ফল-ফলাদি ফলিয়ে চলে জীবন। আর তাই অনেকে খাসিগ্রামকে পানপুঞ্জিও বলে। এমনি এক পানপুঞ্জি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখার সীমান্তবর্তী শাহবাজপুর ইউনিয়নের ‘বনাখলা পুঞ্জি’।
২০০৭ সনে খাসিরা ছোটলেখা চা বাগান থেকে ২৭২ একর জমি ইজারা নিয়ে এই পুঞ্জি গড়ে তোলে। ছোটলেখা চা বাগান সরকারের কাছ থেকে এক হাজার ৯৬৪ দশমিক ৫০ একর টিলাভূমি চা বাগানের জন্য ইজারা নিয়েছিল। চা বাগানের ইজারা নেওয়া জমি থেকেই কর্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে খাসিদের উপ-ইজারা দেয়। বনাখলা পুঞ্জির ৩৬টি খাসি পরিবারের প্রায় সবার আলাদা পানজুম আছে। সব খাসি পানপুঞ্জির প্রবেশ রাস্তায় একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকে, ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’। এই সাইনবোর্ডটি কেবলমাত্র বাংলাদেশে খাসি গ্রামের প্রবেশ পথেই দেখা যায়। কেন?
কারণ খাসি পানজুমগুলো খুব সংবেদনশীল এবং পবিত্র। বহিরাগত কেউ হুটহাট করে এখানে ঢুকতে পারে না। এমনকি খাসিরা নিজেরাও হুটহাট করে পানজুমে প্রবেশ করেন না। নানাবিধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাসিপুঞ্জিগুলো জীবনযাপন করেন। তাই করোনা মহামারি শুরু হলে খাসিরা নিজেদের ঐতিহ্যগত লকডাউন রীতি প্রথম থেকেই শুরু করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এই করোনা মহামারিতেও খাসিপুঞ্জিগুলোর স্বাস্থ্যবিধিকে চুরমার করে প্রথাগত লকডাউন ভেঙে বহিরাগত বাঙালিরা পুঞ্জিতে প্রবেশ করেছে। পানজুম ধ্বংস করেছে। পুঞ্জি দখল করেছে।
২০২১ সনের ২৮ মে বনাখলা পুঞ্জি দখল করে বাইরে থেকে আসা বাঙালিরা। বোবারথল গ্রামের আব্দুল বাছিত, পিচ্চি আমির ও লেইছ মিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ৭০ একর জায়গা দখল করে রাখা হয়। এই ছোটলেখা চা বাগানে বনাখলা পুঞ্জির মতোই আরও খাসিপুঞ্জি আছে। এখানের আরেকটি পুঞ্জির নাম আগার পুঞ্জি। আগার মানে ওপরের দিকের। খাসিদের বসতি শ্রেণিকরণ ও নামকরণের বিজ্ঞান অনুযায়ী আগার পুঞ্জি যেমন আছে তেমনি আছে নিচের দিকের লামাপুঞ্জি।
করোনা মহামারির ভেতর কেবল বনাখলা পুঞ্জি নয়, আগার পুঞ্জিসহ অন্যান্য পুঞ্জির পান গাছ নিদারুণভাবে কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। পুঞ্জি দখল নিয়ে পুঞ্জিপ্রধান এবং চা বাগান কর্তৃপক্ষ দু’টি মামলা করেছে। মৌলভীবাজার অঞ্চলের খাসিপুঞ্জিগুলোকে এমন হামলা ও জবরদখলের রক্তদাগ নিয়েই টিকে থাকার লড়াই করতে হয়। এর কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় না, দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয় না।
কিন্তু এবারের ঘটনায় প্রশাসন বেশ তৎপর হয়েছে। জবরদখলের এক সপ্তাহ পর বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ২০২১ সনের ৪ জুন বনাখলা পানপুঞ্জির জায়গা দখলমুক্ত করেছে। বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর নেতৃত্বে পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বনাখলা পুঞ্জিতে জবরদখলকারীদের নির্মিত ঘর উচ্ছেদ করেছে। বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ নিপীড়িত বনাখলা পানপুঞ্জির খাসি আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আশা করব, আগার পুঞ্জির পানগাছ ধ্বংসের বিরুদ্ধেও প্রশাসন সক্রিয় হবে এবং আগার পুঞ্জির ক্ষতিগ্রস্ত খাসিদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
তবে এই করোনাকালেই নয়, ছোটলেখা চাবাগানের খাসিপুঞ্জিগুলোতে প্রশ্নহীনভাবে বহিরাগত বাঙালির হামলা ও নিপীড়ন জিইয়ে আছে। ২০১৯ সনের জানুয়ারিতে নালিখাই পুঞ্জির পানজুম ও বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০১৫ সনের নভেম্বরে আগার পুঞ্জির কয়েকশ পান গাছ কেটে বিনাশ করেছিল দুর্বৃত্তরা। মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের খাসিরা মূলত বনবিভাগ, চা বাগান এবং কিছু খাসজমি এলাকায় বসবাস করেন। খাসিদের বিশেষ পানজুম স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে এক সবুজ আবহ তৈরি করে। দেখা যায়, খাসি বসতগুলো তুলনামূলকভাবে উদ্ভিদ প্রজাতিতে বেশ বৈচিত্র্যময় এবং সেখানকার প্রাকৃতিক ছড়া ও ঝর্ণাগুলোর স্বাস্থ্য বেশ ভালো। সাংস্কৃতিকভাবে পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা খাসিয়া শিশুরা ছোটবেলা থেকেই শিখে থাকে। তাই খাসিপুঞ্জিগুলো তুলানামূলকভাবে পরিবেশে কম দূষণ ঘটায়। এমনকি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খাসিদের রয়েছে এক কঠোর সামাজিক নিয়ম। আর এসবই তাদের করতে হয় পানজুমের জন্য।
বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষা থেকে পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা সবকিছুই তাদের পানজুমকে উৎরাম নামের এক ভয়াবহ পানের সংক্রামক রোগবালাই থেকে রক্ষা করে। কিন্তু বহিরাগত বাঙালিরা যেহেতু সাংস্কৃতিক ও মনোসামাজিকভাবে খাসিদের এই পরিবেশদর্শন এবং জীবিকায়ন থেকে ভিন্ন, তাই বাঙালিরা নানা সময়ে নানাভাবে খাসিদের পরিবেশ ব্যবস্থাপনার এমন কঠোর বিধিগুলো আমলে নেয় না। দেশের নানা অঞ্চল থেকে ঘরহারা গরিব বাঙালিরা মৌলভীবাজারের খাসিপুঞ্জির আশপাশের জায়গায় আসতে শুরু করেছে গত ৪০ বছর ধরে। আর এই মানুষদের অনেকেই খাসিপুঞ্জিতে কাজ করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। এমনকি অনেক বাঙালি খাসিদের কাছ থেকে পানজুমের চাষের ধরন শিখে নিজেরা পান চাষ শুরু করেছেন।
তবে এই বাঙালিদের কাছে বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ বা পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই বাঙালি এলাকায় এলোপাতাড়ি পাহাড় টিলা কাটা হয়, পাহাড় ধ্বস হয়। এসব পাহাড় টিলা থেকে সব লতা জাতীয় উদ্ভিদ, গুল্ম, ঝোপ কেটে ফেলা হয়। ছড়া ও ঝরনাও পানিকে দূষিত করা হয়। বাইরে থেকে আসা এই গরিব বাঙালিদের কাছে পাহাড় টিলা কেবলমাত্র জায়গা, চাষবাষের জায়গা। তাদের কেবল পান চাষ বা বাগান ও বসতি স্থাপনের জন্য জায়গা দরকার। আর এই জায়গা যেকোনোভাবেই তারা দখল করতে চান। এমনকি উৎপাদনের জন্য এইসব পাহাড় টিলার বাস্তুতন্ত্র বা বৈশিষ্ট্য চূড়ান্তভাবে বিনষ্ট করতেও তাদের বিন্দুমাত্র বাধে না। খাসিদের পানজুম ও বসতি নিয়ে বহিরাগত বাঙালিদের সাথে ভূমিবিরোধের দ্বন্দ্বটা এখানেই। দৃষ্টিভঙ্গিগত এক মৌলিক সাংস্কৃতিক বিরোধ।
তাই দেখা যায় একের পর এক প্রশ্নহীনভাবে খাসিপুঞ্জিগুলো জবরদখল হয় কিংবা লাগাতার হামলার পর পানজুমে উৎরাম ছড়িয়ে পড়ে বা নানাভাবে উৎপাদন হ্রাস পায়। এভাবে একসময় পুঞ্জিগুলো দখল হয় কিংবা খাসিরা বাধ্য হয়ে উচ্ছেদ হয়ে যায়। মানুষের পাশাপাশি জলবায়ুজনিত অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহ আজ আরেক সংকট হিসেবেও দেখা দিয়েছে। এভাবেই আদিবাসী খাসিরা চোখের সামনে বৈরাগী পুঞ্জি, শীতলা পুঞ্জি, জোলেখা পুঞ্জি, নার্সারি পুঞ্জি, ফুলতলা পুঞ্জি দখল হয়ে যেতে দেখেছেন। বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন তৎপর না হলে এই করোনাকালে আবারো বনাখলা পুঞ্জি দখল হয়ে যেত। যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হয়, তবে আগার পুঞ্জিও একসময় দখল হবে বা এভাবে পানজুম ধ্বংস হতে থাকলে খাসিরা পুঞ্জি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন।
প্রায় দেড়শ বছর আগে সিলেট শাসন করার জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে এসেছিলেন শাসক বরার্ট লিন্ডসে। ব্রিটিশ রানিকে ঘুষ দিয়ে তিনি সিলেটে ১২ বছর শাসন করেছেন। সিলেট ছিল তখন প্রাকৃতিক সম্পদের খনি। আর বাণিজ্যিকভাবে সেই সম্পদ আহরণ আর মুনাফার লোভেই তিনি ১২ বছর সিলেটে থেকেছেন। সেই সময় লিন্ডসে খাসিদের অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের বহু চেষ্টা করেন, কিন্তু খাসিরা ছিল অনড়। তারা বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে পাহাড় টিলা কেটে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে দেয়নি। আজ দেড়শ বছর পরেও দেশের সব খাসিপুঞ্জি সেখানকার অরণ্য, ছড়া, পাহাড় টিলা নিজের জীবন দিয়ে সুরক্ষা করে চলেছেন। পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় খাসিদের এই অবদানকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত দেওয়া জরুরি।
বৃহত্তর বাঙালি সমাজের কাছে খাসিদের পরিবেশ ও জীবনদর্শন এক শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। খাসি জীবন থেকে মৌলভীবাজার অঞ্চলের পাহাড়-টিলা-বন-জলাভূমি সুরক্ষার কৌশল ও বিধি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। জোর করে পানজুম বিনাশ বা খাসি বসত দখল নয়, বরং খাসিপুঞ্জিগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুরক্ষা করা দরকার। কারণ স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় খাসিদের অবদান অনস্বীকার্য। ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ২০১৫’-এ পানজুমসহ খাসিপুঞ্জিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্ত করে খাসিপুঞ্জির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। বাংলাদেশের বিল ও উপকূল অঞ্চলের ভাসমান গাউতা চাষ এরই মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ কৃষিঐতিহ্য অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
দেশের ক্ষয়িষ্ণু খাসি পানজুমগুলিও বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কৃষি অঞ্চল। জবরদখল ও হামলার প্রশ্নহীনতা থেকে এসব পানজুমকে সুরক্ষা দিয়ে পানজুম ব্যবস্থাপনাকে দেশের এক অন্যতম কৃষি-পরিবেশগত চর্চা হিসেবে গ্রহণ করা দরকার। গরিব বাঙালির সঙ্গে গরিব খাসির বিরোধকে উসকে না দিয়ে বা এই অভিমান বুকে চেপে দীর্ঘ দূরত্ব তৈরি না করে বরং দরকার বাঙালি-আদিবাসী সাংস্কৃতিক সংহতি এবং পরিবেশগত শিখন আদান-প্রদানের চর্চা। আর এই কাজটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও শুরু করতে পারে। হয়তো এই চর্চা বৃহৎ সংহতি গড়ার ভেতর দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের সুরক্ষার গুরুত্বকে অনুধাবন করতে সচেষ্ট হবে। রাষ্ট্রকে গরিব বাঙালিদের জীবন-জীবিকা ও বসতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যেন তাদের আরেক গরিব মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর হামলে না পড়তে হয়।
সাধারণত বাংলাদেশের প্রায় সব খাসিপুঞ্জির নামের পেছনেই জড়িত রয়েছে স্থানীয় বনটিলা পাহাড়ের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা কোনো পাহাড়ি ছড়ার স্মৃতি— চৈলতাছড়া, লাউয়াছড়া, মাগুরছড়া, ডবলছড়া, নুনছড়া, আলিয়াছড়া, মুরইছড়া। খাসি বসতের নামকরণের রীতি এটিই। স্থানীয় কোনো পাহাড়ি জলধারার বয়ে চলাকে জীবনের যাপনে জড়িয়ে এই নাম নির্ধারণ করেন খাসিরা। অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, করপেরেট চা বাগান সম্প্রসারণ, বহুজাতিক গ্যাস কোম্পানির খননের ফলে এসব পাহাড়ি ছড়া আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। ছড়া মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে খাসিপুঞ্জির নামকরণের নিজস্ব জাতিগত রীতিও। ছড়াহীন পরিবেশে নতুনভাবে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া খাসিপুঞ্জিগুলোর নামের ক্ষেত্রে আর ছড়ার কোনো স্মৃতি জড়িত হচ্ছে না। চলতি আলাপের বনাখলা বা আগারপুঞ্জি এমন কোনো বৈশিষ্ট্যময় ছড়ার স্মৃতি নিয়ে নামধারণ করতে পারেনি।
এমনকি নতুনভাবে গড়ে ওঠা লন্ডন, ফুলতলা, সাত নম্বর, পাঁচ নম্বর— এরকম নয়া নাম নিচ্ছে খাসিপুঞ্জিগুলো। নতুন নামের খাসিপুঞ্জিগুলোর নামই তুলে ধরছে পুঞ্জির পরিবেশগত যন্ত্রণা। আর এই যন্ত্রণার ক্ষত আছে চারধারের বাস্তুতন্ত্রে। এই ক্ষত সারাতে আমাদের সবার সজাগ হওয়া জরুরি। খাসিপুঞ্জি দখলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনৈতিক দেনদরবার। টিলা ভূমি, পানপুঞ্জি, একসনা বন্দোবস্তি জমি, ডিসি খাস খতিয়ান, চাবাগান, খাস জমি— এরকম নানা পরিচয়ে নানা সময়ে সরকারি নানা কাগজপত্রে পুঞ্জিগুলোকে পরিচয় করানো হয়েছে। এর একটি ফায়সালা দরকার।
মাতৃসূত্রীয় খাসি সমাজে পরিবারের নারীই সম্পত্তি ও বংশের উত্তরাধিকার হয়ে থাকেন, যদিও আজকাল পণ্য বিশ্বায়নের এই বাঙালি রাষ্ট্রে এটি বদলে গিয়ে সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে পিতৃসূত্রীয় ব্যবস্থা প্রবেশ করেছে। সমতলের আদিবাসী ভূমি সংকট নিরসে স্বতন্ত্র ভূমি কমিশনের দাবি দীর্ঘ দিনের। নীতি, আইন, কাঠামো, বাজেট, পরিকল্পনা সবই দরকার। কিন্তু সবার আগে দরকার দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ। বনাখলা পুঞ্জি দখলমুক্তকরণে যে তৎপরতা বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন দেখিয়েছেন, এমন দায়িত্ববোধ জাগিয়ে রাখা দরকার। দরকার সর্বস্তরের নাগরিক সংহতি। খাসিজীবনের বসতি, জীবন-জীবিকা ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত হোক।
লেখক: গবেষক ও লেখক
সারাবাংলা/এসবিডিই