ঢাকা-সিলেট-সুনামগঞ্জ রেলপথ: পরিকল্পিত উন্নয়নই কাম্য
৯ জুন ২০২১ ০১:২১
ঢাকা-সিলেট-সুনামগঞ্জ রেল যোগাযোগের আওতায় আসবে— এটা এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এর সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ১১ বছর আগে কাজ শুরু করেন এই প্রকল্প নিয়ে। এতদিন পরেও এই প্রকল্প কেন আলোর মুখ দেখেনি তার ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই সরকারের কাছে আছে। তিনি রেলপথের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন সেজন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। একইসঙ্গে সাবেক রেলপথ মন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকেও ধন্যবাদ।
আজ সুনামগঞ্জের সকল মাননীয় সংসদ সদস্য মিলে ছাতক-দোহালিয়া হয়ে সুনামগঞ্জ রেলপথ করার জন্য তাদের স্বাক্ষরিত ডিও লেটার রেলপথ মন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দাফতরিকভাবে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে রেলের গতিপথ (Alignment) নিয়ে সুনামগঞ্জের সকল সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে বিরোধিতায় চলে গেলেন যা এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্তরায়।
সাধারণ মানুষ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে সুনামগঞ্জের উন্নয়নের পক্ষে যে কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীই যাই করুন না কেন এখানে কারো প্রতিই আমার ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ নেই, আছে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।
সুনামগঞ্জের ভৌগলিক অবস্থান, প্রশাসনিক সদর, জনসংখ্যা সকল কিছু বিবেচনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বর্তমান যে রেলপথের ম্যাপ নিয়ে কাজ করছেন সেটাই সঠিক বলে মনে করি। দু’য়েকটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক যদি আমরা সুনামগঞ্জের মধ্যখানে ধরি, যার দক্ষিণে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ৯টির অবস্থান, প্রশাসনিক সদর এবং জনসংখ্যার বেশিভাগ বাস করেন শুধুমাত্র দোয়ারা উপজেলা আছে মহাসড়কের উত্তরে। অর্থাৎ দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও ছাতকের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের হয় সুনামগঞ্জ স্টেশন গিয়ে, নয় গোবিন্দগঞ্জ স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরতে হবে।
জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করলে সিলেট সুনামগঞ্জের মহাসড়কে দক্ষিণে সমান্তরালে রেলপথ করাই যুক্তিযুক্ত। ডেলিভারি পয়েন্টের সং গন্তব্যস্থলে যৌক্তিক পরিবহন যেখানে সুবিধাজনক হবে রেলপথ সেখানেই করা যৌক্তিক এবং সারা দুনিয়া সেটাই করছে । প্রধান সড়ক এবং বাজারের অবস্থান, জনসংখ্যা অনুপাত মাথায় রেখে রেল যোগাযোগ সকল দেশেই করা হচ্ছে। রেলপথ সারাজীবনের প্ল্যান করা হয়। ফসলি জমির উপর মানে দেখা হাওড়ের পাড় দিয়ে, সুরমা নদীর পাড় দিয়ে যেখানে হরহামেশাই নদীভাঙন হচ্ছে সেখান দিয়ে রেলপথ নেওয়াটা কতটা যৌক্তিক সেটা ভেবে দেখতে হবে সুনামগঞ্জের নেতাদের। তাছাড়া সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাশেই। সেখান দিয়ে রেলপথ গেলে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে যাতায়াত করতে পারবে তাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
আমার একটা জিনিস মাথায় এখনো ঢুকেনি, আমাদের এমপি সাহেব ছাতকের পাশে শান্তিগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় মন্ত্রীর বিরোধিতা করে তার সুসম্পর্কের ইতি টানলেন যেখানে ছাতকের মানুষের কোনো লাভ হয়নি। এখন কেনই বা সুনামগঞ্জের অন্যান্য সংসদ সদস্যরা মাননীয় মন্ত্রীর রেলপথের ম্যাপ তাদের নিজেদের অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুবিধাকে উপেক্ষা করে এমপি মানিক ভাইয়ের পরিকল্পনার পথে হাঁটলেন তা প্রশ্নের উদ্রেক করে। এটা কি শুধু তাদের দেওয়া-নেওয়ার খেলা না রাজনৈতিক সিন্ডিকেট তা আল্লাহ ভালো জানেন।
সুনামগঞ্জের মানুষ উন্নয়ন চায় কিন্তু আপনারা যেভাবে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন তাতে সুনামগঞ্জের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হলে দায়ভার কিন্তু আপনাদেরই নিতে হবে। আমাদের শত জনমের ভাগ্য আমরা একজন পরিকল্পনামন্ত্রী পেয়েছি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও মন্ত্রিত্ব পাবো, কিন্তু এত বড় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পাবো কিনা সন্দেহ আছে। তাই জনগণের উচিত হবে নেতাদের তৃণমূল থেকে চাপ দেওয়া, তারা যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুনামগঞ্জের উন্নয়নের কাজ করেন।
সারাবাংলা/আইই