Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখে কর্মীরা

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার
১৮ জুন ২০২১ ২১:২৭

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন, ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে। ঔপেনিবেশিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট বাঙ্গালি তার স্বাধিকারের জন্য অতীতে যে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছিল, তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপশক্তি বা বেঈমানদের দ্বারা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে। তৎকালীন এই পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার আদায়ের নেতৃত্ব দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠানই ছিল না। হয়তো সেই আকাঙ্ক্ষার কারণেই এই অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ বিবেচনায় ভারতবর্ষ ভাগ ও পাকিস্তান নামক এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্মের বছর তিনেকের মধ্যেই আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। পরে সেই দলটিই আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে এখনো পথ চলছে।

বিজ্ঞাপন

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক। জেলখানায় বন্দি থাকা অবস্থায় এই নবীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমান পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।
সেই যে পথচলা শুরু, তা এখনো চলছেই। আওয়ামী লীগের যাত্রার শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই সেই সময়ের সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক, যাকে বলে কর্মীবান্ধব সংগঠক, সেই শেখ মুজিবের হাতে চলে আসে দলের মূল নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ তাকে পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়। তারপর থেকে আর আওয়ামী লীগকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে নিপীড়ন-নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে এই দলের নেতাদের, বিশেষ করে শেখ মুজিবকে।

বিজ্ঞাপন

শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েই দলকে সারাদেশের (পূর্ব পাকিস্তানে) মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য দল হিসেবে জনগণের কাছে নিয়ে যান। সাধারণ মানুষই ছিল এই দলের প্রধান শক্তি। তাদের মধ্য থেকে পরে অনেকেই এই দলের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ ছিল কর্মীনির্ভর একটি দল। কর্মীরাই ছিল এই দলের প্রাণশক্তি। অনেক বড় বড় নেতাই দল থেকে চলে গেছেন, কিন্তু কর্মীরাই এই দলকে টিকিয়ে রেখেছে, যে প্রক্রিয়া এখনো চলমান। কিন্তু সেই কর্মীদের মূল্যায়ন কি হয়েছে বা আদৌ হচ্ছে?

দলের লাখ-কোটি নিবেদিতপ্রাণ কর্মী কী অবস্থায় আছে, কে তাদের খোঁজ রাখেন? সাধারণত আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদেরও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা নিজেরাও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। হয়তো কেউ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ বা মৎস্যজীবী লীগের মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু দিন শেষে তারা নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, শেখ হাসিনার সৈনিক হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকেন। কোন স্বার্থ ছাড়া, লোভ-লালসায় না পড়ে নিঃস্বার্থভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবেসে, শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে যারা এসব সংগঠনে যুক্ত হয়েছিল কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা পদ-পদবীর কথা চিন্তা না করেই, সত্যিকার অর্থেই সেসব কর্মীরা এখন নানা অসুবিধার মধ্যে দিনযাপন করছেন। বিশেষ করে সুবিধাভোগী যেসব কর্মী বা নেতা যারা শুধু ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভোগ করার জন্য দলে যোগ দিয়েছেন, দুর্দিনে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না বা অন্য কোনো দলের সদস্য ছিলেন— এমন অনেকেই আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের যোগ দিয়ে যেকোনো উপায়ে অর্থের বাহাদুরি দেখিয়ে পদ-পদবী বাগিয়ে রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের কারণে তৃণমূল থেকে একদম ওপরের পর্যায় পর্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা খুবই অসহায়ভাবে দিনযাপন করছেন। তারা না পারছেন বলতে, না পারছেন সইতে। ক্ষেত্রবিশেষে কেবল ছাত্রলীগ করার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি হয়নি— এমন নজিরও রয়েছে। নিবেদিতপ্রাণ সহজ-সরল অনেক আওয়ামী লীগ কর্মীই দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত, অথচ তাদের একটি সন্তান প্রাইমারি স্কুলের পিয়ন বা দফতরি পদে চাকরি পায়নি। সেখানে হয়তো ‘হাইব্রিড’ কোনো কর্মী ‘বিশেষ সুবিধা’র মাধ্যমে চাকরি-বাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। ছাত্রলীগ বা যুবলীগের নিরীহ নিবেদিতপ্রাণ কর্মীটি অসুখ হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। অন্যদিকে নীতিহীন কোনো নেশাগ্রস্ত তরুণ নিজেকে ছাত্রলীগ বা যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নানা ধরনের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চলেছেন। এসব উদাহরণ প্রকারান্তরে দলের সুনাম নষ্ট করছে, বঞ্চিত হচ্ছেন দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা, যারা দলের দুর্দিনে বুক পেতে দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু দলের কর্মী মূল্যায়ন করেছেন। তৃণমূল পর্যন্ত কর্মীদের তিনি চিনতেন খোজ রাখতেন। তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও কর্মীদের সম্ভব মূল্যায়ন করেন। তৃণমূলের কর্মীরাও শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনোদিন বেইমানি করেনি, যেমনটি করেনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু সেই তৃণমূলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা তৃণমূলেরই নেতা বা এমপি মন্ত্রীদের কাছ থেকে কি কখনও প্রত্যাশিত সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছে? জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা, সংসদ সদস্যরা এই তৃণমূলের নিঃস্বার্থ সহজ-সরল কর্মীদের কি কোনো খোঁজ খবর রাখেন? তারা কিভাবে দিনযাপন করছে, অতীতে দল করতে গিয়ে তারা যে সারা জীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার জন্য কোনো সান্ত্বনা তারা পায় নেতাদের কাছ থেকে? না, এই নেতারা শুধুমাত্র তাদের আজ্ঞাবহ কিছু হাইব্রিড কর্মী ও আত্মীয়স্বজন দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। কমিটি করতে ত্যাগীরা বাদ, চাকরি বাকরিতে ত্যাগীরা বাদ, কোনো সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে ত্যাগীরা বঞ্চিত— কোথাও তাদের জায়গা নেই। সব জায়গায় সুবিধাবাদী, নব্য হাইব্রিড, দলছুটদের জয় জয়কার। যারা কোনোদিন ছাত্রলীগ করেনি, দলের দুর্দিনে দলের পাশে থাকেনি, সুদিনের মধু খেতে যারা এখন দলে অতিমাত্রায় সক্রিয় তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করছেন একশ্রেণীর হাইব্রিড নেতা।

মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ ৭২ বছরের প্রাচীন একটি রাজনৈতিক সংগঠন। জন্মের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সবসময় গতিশীল, সক্রিয় ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ পথ চলায় অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে দলটিকে। এই দলটির সবচেয়ে বড় ও গৌরবময় অর্জন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আবার আওয়ামী লীগের উপর প্রচণ্ড আঘাতও এসেছে। পঁচাত্তর সালের পনেরই আগস্টের মতো হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড এবং একুশে আগস্টের মতো বর্বর গ্রেনেড হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিবার তথা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পর আইয়ুব-ইয়াহিয়া-জিয়া- এরশাদের মতো সামরিক শাসকরা বারবার দলটিকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে কোনোভাবেই কেউ ব্যাহত করতে পারেনি। সব বাধা অতিক্রম করে বুকটান করে মাথা উঁচু করে আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার মুল শক্তিই ছিল এই দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। এই দলের জন্য নেতারাও অপরিসীম কষ্ট স্বীকার করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ চার জাতীয় নেতা, কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরিনিয়াবত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণিসহ বিভিন্ন সময় অনেক অনেক নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও অন্তত উনিশবার হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হয়েছেন। জেল জুলুম নির্যাতন নিপীড়ন তো ছিল তার নিত্যসঙ্গী।

বাংলাদেশের সব অর্জনই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডই উপহার দেয়নি আওয়ামী লীগ— জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত সেই স্বাধীনতার পর স্বল্প সময়ে একটি সুন্দর সংবিধান প্রণয়ন, বিদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও স্বীকৃতি আদায়সহ দেশের মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় অতি স্বল্প সময়ে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জন্য যে কাজ করে গেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তার আজীবনের স্বপ্ন দেশ স্বাধীন হলেও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশ আজ সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ আজ কল্পনা নয় বাস্তব। অর্থনৈতিক ভীত উপমহাদেশের অনেক দেশের তুলনায় মজবুত। তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ আজ অনেক অনেক দূর এগিয়েছে,যার সুফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে বহুগুণ। স্বাধীনতার পর যে বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার, তা এখন বেড়ে ছয় লাখ কোটি টাকার উপরে।

এসবের নেতৃত্বে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর সফল নেত্রী হিসেবে আছেন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তাই বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কথা চিন্তা করা যায় না। যারা আওয়ামী লীগকে নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে তাদেরও জেনে রাখা উচিত—সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে উঠে আসা এই জনপদের মানুষের ভালোবাসার আশীর্বাদপুষ্ট সংগঠন আওয়ামী লীগকে কোনো দিন কোনো ষড়যন্ত্র করে শেষ করে দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকবে সাধারণ মানুষের মাঝে, আপন হয়ে, গায়ে গা লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকা বহন করে, শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের সফলতাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে।

জন্মদিনে আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা। যারা এই দলের জন্য শহিদ হয়েছেন, আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর