Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ব শরণার্থী দিবস: একটি হারানো প্রজন্মের স্বপ্ন দেখা

লীনা হাসিনা হক
২০ জুন ২০২১ ১৮:৪৬

আজ ২০ জুন। বিশ্ব শরণার্থী দিবস। করোনাভাইরাস মহামারির বিপর্যয়ের মাঝে এই বছরের শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘টুগেদার উই হিল, লার্ন অ্যান্ড শাইন’। বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘আমরা একসঙ্গে সংকটের সমাধান করি, শিখি আর প্রগতির দিকে এগিয়ে যাই’।

এই লেখা যখন লিখছি তখন পর্যন্ত ৮০ কোটির বেশি মানুষ এই পৃথিবীতে শরণার্থী হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে ২৪ কোটি শিশু কিশোর, অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচে। ২ কোটির বেশি শিশু কিশোর যে কোনো ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমের আওতার বাইরে। ৮০ কোটি রিফিউজি জনগোষ্ঠীর ৭৪ শতাংশ তাদের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশন আশঙ্কা করছে, ২০২১ সাল শেষ হতে হতে পৃথিবীতে শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে ৯৩ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

গত বৃহস্পতিবার গিয়েছিলাম উখিয়ার বালুখালির রোহিঙ্গা ক্যাম্প নয় আর আটে। এই ক্যাম্পগুলো এখন ‘পোড়া বা পুড়ে যাওয়া ক্যাম্প’ বলে পরিচিত। এ বছরের মার্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জ্বলে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের সর্বস্ব। অবশ্য রিফিউজিদের আর থাকেই বা কী এমন অমূল্য সম্পদ! পুড়ে গেছে ঘর, কাপড় জামা, হাড়ি পাতিল, বালতি বদনা, প্লেট গ্লাস, চাল ডাল আর গত তিন বছরে তৈরি হওয়া খানিক স্বস্তি। আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছেন আরও ১৫ জন রোহিঙ্গা রিফিউজি।

রিফিউজিদের কী মানুষ হিসেবে ধরা হয়? চেন্নাইয়ের উপকণ্ঠে শ্রীলংকার তামিল রিফিউজি শিবিরে তরুণ শিভামূর্তি আমাকে বলেছিল, ‘রিফিউজি তো কেবল মুখ আর পেট নয় আক্কা (বোন), তোমার মতো তাদেরও হৃদয় আছে, আছে বুদ্ধি আর স্বপ্ন!’ শিভা স্বপ্ন দেখতো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেখানে আমার এসাইনমেন্ট শেষ হয়ে আমি চলে এসেছি, জানি না শিভা তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল কিনা। কয়জন রিফিউজির স্বপ্ন পূরণ হয় সেই তথ্যও আমার কাছে নেই।

বিজ্ঞাপন

ঘুরে ঘুরে পুনর্বাসনের কাজ দেখছিলাম। ল্যাট্রিন আর গোসলখানাগুলো পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে, কাজ কিছু বাকী আছে এখনো। আগুন লাগার পর অনেকদিন পর্যন্ত ক্যাম্পে কিশোরী তরুণীদের দেখা যেতো না। নিরাপত্তার ভয়ে তারা আশেপাশের ক্যাম্পে আত্মীয়দের বাড়িতে ছিল বেশ অনেকদিন। কাপড়ের অভাবে গোসল করা বন্ধ ছিল বেশ কদিন। তারপরে বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক (!) হতে শুরু করেছে পোড়া ক্যাম্পের জীবনযাত্রা।

ঘরগুলো নতুন করে তৈরি হয়েছে। জলের ট্যাঙ্ক আর বিতরণের পাইপলাইন নতুন করে বসানো হয়েছে। বর্জ্য সরানোর কাজ চলছে। হেলথ পোস্টে চিকিৎসা সেবা নিতে রোগীর লাইন, অপুষ্ট শরীরের তরুণী গর্ভবতী মায়ের কাছে শুনি এটি তার চতুর্থ সন্তান ধারণ, তার বয়স মাত্র তেইশ। ২০১৭ সালে পালিয়ে আসার সময় তার প্রথম সন্তান মাত্রই তিনমাসের ছিল। শিশুটি নিউমোনিয়ায় মারা যায়। ২০১৯ সালে তার দ্বিতীয় সন্তান মৃত জন্ম নেয়। গত বছর করোনার চূড়ান্ত সময়ে তার গর্ভপাত হয়। কালো বোরখার আড়ালে রোগা মুখের মধ্যে তার বড় বড় চোখে কোনো আনন্দের জ্যোতি নাই। আমাদের পুষ্টিবিদ তরুণীটিকে পুষ্টি সম্মত খাবার খেতে পরামর্শ দেন, চোখ নিচু করে সে শুনতে থাকে।

হেলথ পোস্টের পাশের রুমে দেখি তুলনামূলক বয়সী একজন নারী, তার পঞ্চম সন্তানের জন্ম হয়েছে কিছুদিন আগে। তাকে পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শ দিচ্ছিলেন আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী। কিন্তু এই বিষয়ে নারীটিকে খুব উৎসাহী মনে হলো না। চেষ্টা করেও তার কাছ থেকে তেমন কোনো কথা জানা গেলো না। হেলথ পোস্টের ওয়েটিংরুমে বেশ কজন মা বসে আছেন বিভিন্ন সেবা নেওয়ার জন্য। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না। কোভিড নিয়ে কী জানেন, কী করছেন জিজ্ঞেস করাতে একজন বললেন, আমরা হাত ধুই, মাস্ক পরি। আরেকজন বললেন, আমাদের কোভিড হবে না, আল্লাহ সহায় আছেন।

পাশেই টিবি টেস্টিং কেন্দ্র। গড়ে প্রায় শতকরা ৬ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত এখানে। হবেই না কেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার প্রবণতা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে যে কোনো রোগের সহজ টার্গেট করে তুলে।

একটি ঘরে আমাদের কমিউনিটি ওয়ার্কার অল্প কজন কিশোরীদের নিয়ে বসেছে মাসিকজনিত স্বাস্থ্যব্যাবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতে। একটি মেয়ে দেখি হাতে মেহেদীর আল্পনা, চুমকি লাগানো ওড়না। শুনলাম তার বিয়ে হয়েছে দুই সপ্তাহ। চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছে। বয়স মেরেকেটে সতেরো। পরেরবার এলে হয়তো দেখবো এই মেয়েটি গর্ভবতী। পাশের মেয়েটির নাম আয়েশা (ছদ্মনাম), বয়স ষোল, সে একটি কিশোরীবান্ধব কেন্দ্রের সদস্য ছিল। কেন্দ্রটি কোভিডজনিত লকডাউনের কারণে বন্ধ, তাই সে সারাক্ষণ ঘরেই থাকে। আঁকতে ভালো লাগে তার, আঁকার মাধ্যমেই সে নিজের একটা জগত তৈরি করতে শুরু করেছিল সেই জগত এখন তালাবন্ধ। তারও হয়তো বিয়ে হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। বিয়ে হয়ে গেলে সে কি আর আঁকার স্কুলে যেতে পারবে! আমার কেমন অস্থির লাগে।

একটা জাতিসত্তার মানুষ দেশহীন, আশাহীন, স্বপ্নহীন, কর্মহীন, দিশাহীনভাবে অন্যের দয়ায় জীবনধারণ করছে। শুধু বেঁচে থেকে জৈবসত্তাকে ধারণ করাই কি মানবজীবনের লক্ষ্য হতে পারে? নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন করি। এখানে সংক্ষেপে বলি, রোহিঙ্গারা সর্বপ্রথম স্ট্রাকচারড অত্যাচারের শিকার হয় ১৭৮৪ সালে। এরপর ১৯৪২ সালে জাপান বার্মা দখল করার পর স্থানীয় মগরা জাপানি সৈন্যদের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ইতিহাসে এটি ১৯৪২ সালের গণহত্যা নামে খ্যাত। স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৪৭ সালের শাসনতান্ত্রিক নির্বাচনে ইংরেজদের দেওয়া ‘সন্দেহভাজন নাগরিক’ অভিধার কারণে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। মগ সেনাদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে তৎকালীন শাসক উন আরাকানি মুসলমান উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। ১৯৬২ সালের ২ মার্চ উনকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর নে উইন সংখ্যালঘুদের সব সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে দেন। ১৯৬৪ সালে রোহিঙ্গাদের সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয় । বার্মা সরকার ১৯৭৩ সাল ও ১৯৭৪ সালে আরাকানে আবার রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জীবন রক্ষার্থে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে এসে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে। সে সময় তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় অবস্থান ও চরমপত্রের কারণে বার্মা সরকার বিতাড়িতদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। নিপীড়ন চরম আকার ধারণ করে ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের ফলে। এ আইন কার্যকর হওয়ার পর বাতিল হয়ে যায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব। তখন থেকে মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারও অচল হয়ে পড়ে।

সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৯০ এবং ২০১২ সালে রোহিঙ্গা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে বার্মার সামরিক জান্তা। শতাব্দীকাল ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্মম নির্যাতনের বিষয়টি এখন গোটা বিশ্বের সামনে পরিষ্কার। এটাও স্পষ্ট যে শুধু, ধর্মসত্তার কারণেই তাদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে।

জেনারেল নে উইন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মিয়ানমারের সব সরকারই রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার হরণ করেছে। রোহিঙ্গারা পৃথিবীর অন্যতম রাষ্ট্রবিহীন মানুষ। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রবিহীন ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে করা সব ধরনের অপরাধকে বৈধতা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের কোনো অনুচ্ছেদই সেখানে মানা হচ্ছে না। জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। কিন্তু এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিশ্বনেতারা নাকামিয়াব হয়েছেন।

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে চলা সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে এসে প্রায় নয় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এসব শরণার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু এবং কিশোর-কিশোরী। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ না থাকা এবং বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিচয় এবং প্রতিভা প্রকাশের যথাযথ সুযোগ না থাকায় এসব শরণার্থী শিশুদের একটা বড় অংশ ক্রমশ একটি হারানো প্রজন্মের অংশ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
কিশোর-কিশোরীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গা শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন বিকাশ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই উদ্দেশে শিশুবান্ধব কেন্দ্র, নারীবান্ধব কেন্দ্র এবং কিশোর কিশোরী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোতে শিশু কিশোরের প্রতিভার উন্মেষ ঘটানোর চেষ্টা চলছে। নারীবান্ধব কেন্দ্রগুলোতে নানা বয়সের নারীরা এসে খানিক সময় কাটান, গল্পগাছা করেন, কিছু দরকারি বিষয়ে জানেন, নানা ধরনের হাতের কাজ শিখেন অনেকেই। ক্যাম্প ৮ এবং ৯ এও এরকম বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ছিল যা আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল , এখন পুনর্নির্মাণ করার কাজ চলছে। তাছাড়া লার্নিং সেন্টারগুলো কোভিডের কারণে বন্ধ। ক্যাম্পে ঢুকলে দেখা যায় শিশু কিশোর তরুণেরা উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরাঘুরি করছে। এসব শিশু কিশোরদের পড়াশুনা, লেখালেখি, খেলাধুলা এবং সৃজনশীল দিকগুলো বিকশিত করার সুযোগ করে দেওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

হেলথ পোস্ট থেকে বের হতেই দেখি টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে একটা ছাতা ভাগাভাগি করে প্রায় দশ বারো জন শিশু দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করি কী করো তোমরা? হাসিতে লুটিয়ে পড়ে তারা। স্কুলে যাও? স্কুল তো বন্ধ! তাহলে কী করো? কিছুই করে না তারা। স্কুল বন্ধু, আঁকার ক্লাস হয় না, গল্পের বই পড়া বন্ধ। তারা খালি পায়ে, খালি গায়ে রাস্তায় খেলাধুলা করে। আমার দি লস্ট বয়েজ অফ সুদানের কথা মনে পড়ে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসলে এক নয়, দুই নয়, অনেক প্রজন্মই হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সিরিজ অফ লস্ট জেনারেশন অফ রোহিঙ্গা।

জনা দশেক রোহিঙ্গা তরুণ একটা ঘরে বসে কথা বলছিল। জানালো, তারা কোভিড স্বাস্থ্যবিধি, পানীয় পয়ঃনিষ্কাশন বিষয়ে মানুষের কাছে ইনফরমেশন পোঁছে দিচ্ছে। আমাকেও তারা কিছু মূল্যবান নির্দেশাবলী শুনিয়ে দিলো। জানতে চাইলাম, কী করে তারা এই কাজে। জীবন সম্পর্কে তাদের ভাবনা কী।

তারা জানালো, ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে তারা পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ঘরদোর জ্বালিয়ে দিয়েছে। গরু ছাগল কেড়ে নিয়েছে। স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বয়স ষোল থেকে একুশের মধ্যে। তারা সবাই আরাকানে স্কুলে পড়তো। এখানে আসার পরে তাদের পড়ালেখার সুযোগ নেই বললেই চলে। হাফিজ (ছদ্মনাম) নামের চটপটে তরুণ জানালো, এখানে আসার সময় সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত, এখানে সে কিছুই করে না। ফুটবল খেলতে ভালো লাগে তাদের, কিন্তু খেলার মাঠ কই। ঘরে বসে হয়তো লুডো খেলে কখনো। ইউটিউবে দেশ বিদেশের খবর দেখতে পছন্দ করে একজন, কিন্তু ক্যাম্পের ভিতরে ফোর জি সুবিধা না থাকায় সে সুযোগ সহজে হচ্ছে না।

বিড়ি সিগারেট খায় কিনা জিজ্ঞেস করাতে প্রায় সবাই লজ্জায় মুখ লুকায়। কেউ কেউ ধূমপানে আসক্ততো বটেই, অন্য নেশাতেও আসক্ত হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। একটা তরুণ প্রজন্ম কোনো পড়ালেখা, কোনো কাজ ( স্বেচ্ছাসেবীরা বাদে) করা ছাড়া শুধুই দাতাসংস্থার দেওয়া খাদ্য আর অন্যান্য সাহায্যে জীবন নির্বাহ করে কিভাবে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে!

শাহেদ (ছদ্মনাম) নামের উনিশ বছরের তরুণ তার পরিবারের সবাইকে হারিয়ে চাচার সঙ্গে থাকে। মিয়ানমারে সে দশম শ্রেণীতে পড়তো। ইংরেজিতে মোটামুটি কাজ চালাতে পারে সে। এখানে আসার পরে অনেকদিন তাকে সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং নিতে হয়েছে, নিজের চোখের সামনে বাবা মা বোনের হত্যাকাণ্ড দেখার দুর্বিষহ স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো বহুদিন পর্যন্ত। সফটওয়্যার প্রোগ্রামার হতে চায় সে, জ্বলজ্বলে মুখে জানায়। জিজ্ঞাসা করি, এই শরণার্থী শিবিরে থেকে সেটা কিভাবে সম্ভব করবে সে? তার উজ্জ্বল মুখাবয়ব ম্লান হয়ে যায়। মুখটা নিচু করে ফেলে সে, আমিও অপ্রস্তুত বোধ করি, তার কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা না দিলেই পারতাম। একটু পরেই মুখ তুলে পূর্ণ চোখে তাকায় শাহেদ, ‘তবে ম্যাম, আমি ঠিকই প্রোগ্রামিং শিখবো। এই জীবন থেকে উন্নত জীবন হবে আমার, দেশে ফিরে যাবো’। শাহেদের গলায় আস্থা, চোখে স্বপ্নের দ্যুতি আমাকে নাড়া দেয় প্রবলভাবে। হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা এই প্রজন্ম হয়তো টিকেও যেতে পারে। শিভার কথা মনে পড়ে, রিফিউজিরও হৃদয় আছে, আছে বুদ্ধি, মেধা আর স্বপ্ন দেখার সাহস।

লেখক: উন্নয়নকর্মী

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর