ফুসফুসের বিনিময়ে চিকিৎসাকেন্দ্র কাম্য নয়
১৮ জুলাই ২০২১ ২৩:২৪
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এক অনন্য সুন্দর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ হলো সিআরবি এলাকা। যে কারও মন ভালো করে দেওয়ার মতো একটি স্থান সিআরবি। এই ইট-পাথরের রুক্ষ্ম-কঠিন শহরের উঁচু উঁচু দালান আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে শতবর্ষী বৃক্ষে ঘেরা সিআরবিকে এক টুকরো অক্সিজেন প্ল্যান্ট বলা চলে।
এখানে রয়েছে শতবর্ষী গাছ আবার। কোনো কোনোটির বয়স ১৫০ বছরেরও বেশি। ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’খ্যাত এই নৈসর্গিক এলাকা সিআরবি যা ২০০ বছর আগের ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া সৌন্দর্যের নিদর্শন। এই শিরিষ তলায় প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে বসে মেলা, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বলী খেলা। নাগরিক জীবনে ক্লান্ত নগরবাসী একটু পার্থিব জগতের সব ব্যস্ততা আর জীবনের হিসাব-নিকাশে যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত, তখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য এখানে এসে বসে। একেকটি গাছের দিকে তাকালে যেন নিজের অজান্তেই হারিয়ে যায় কোনো অজানা অতীতে, শেকড়ের সন্ধানে মন উজাড় হয়ে যায়।
আমাদের জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসাকেন্দ্র প্রয়োজন। তবে তা সবুজ সুন্দর নয়নাভিরাম প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়। আর বন্দর নগরীর ফুসফুস কেটে যখন পরিকল্পনা করা হয় বেসরকারি হাসপাতাল তৈরির, তখন মনে হয় নিঃশ্বাস বুঝি বন্ধ হয়ে এলো। করোনা হলো না তো! মহামারি করোনাও কি আমাদের প্রাকৃতিক অক্সিজেন ভাণ্ডার চেনাতে পারল না?
এই শতবর্ষী বৃক্ষ নিরবে জীবনকে জীবন দেয়, প্রাণে করে প্রাণের সঞ্চার, দেয় বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন অবিরাম। হাসপাতালের সিলিন্ডার যে অক্সিজেন সরবরাহ করে তার আয়ুষ্কাল মানবসৃষ্ট, তার ধারণক্ষমতা পূর্বনির্ধারিত। কিন্তু শতবর্ষী এই বৃক্ষরাজী যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন উৎপাদন করেই চলবে বিরামহীনভাবে!
ফুসফুসের বিনিময়ে চিকিৎসাকেন্দ্র কি আমাদের কাম্য? বেঁচে থাকুক শতবর্ষী শিরিষতলা, বেঁচে থাকুক সিআরবি, বেঁচে থাকুক বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। জীবনে জীবন থাকুক অটুট আবহমান কাল। আশা করি সচেতন মহল, ইউনাইটেড গ্রুপ ও রেলওয়ে এ বিষয়ে বাস্তব ও গবেষণাধর্মী সিদ্ধান্ত নেবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/টিআর