Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গুতে ভয় নয়, চাই নিত্য সচেতনতা

মো. রেদওয়ানুল ইসলাম
২৮ আগস্ট ২০২১ ১৫:০৯

ডেঙ্গু জ্বর আমাদের নিকট অতিমারি না হলেও কোন অংশে কম নয়। প্রতিবছর আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল সংখ্যা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করছেন। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে যেমন ব্যক্তি সচেতন থাকতে হবে তেমনিভাবে অন্যকেও সচেতন করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এডিস ইজিপ্টি ((Aedes aegypti) এবং এডিস এলবোপিকটাস (Aedes albopictus) মশার মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। শরীরের ও পায়ের সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ দেখে সহজেই অন্য মশা থেকে এটাকে আলাদা করা যায়। সাধারণত পরিষ্কার ও বদ্ধ পানিতে এই মশা জন্মায়। ডেঙ্গু বিস্তারে এডিস মশা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভূমিকা রাখে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এডিস এজিপ্টি মশা স্বভাবগতভাবে গৃহপালিত ও নগরকেন্দ্রিক। তাই বৃষ্টির পানি জমে এমন স্থানগুলো যেমন- গাছের টব, ফুলদানির পানি, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, কনটেইনার, বালতি, পানির চৌবাচ্চা, পোষা প্রাণির খাবার পাত্র, নারকেলের মালা, ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, খোলা একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে জন্য নিজে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিবেশিকে সতর্ক রাখতে হবে। বাড়ির আশপাশের নালা, ম্যানহোল ঢেকে রাখা এবং তাতে নিয়মিত মশার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত নিম্নের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে- জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে র্যাশ বা লালচে দানা দেখা দেওয়া। পেটে ব্যথা, হজমের গোলমাল হওয়া, বমি হওয়া কিংবা রোগী কিছুই খেতে না পারা, প্রচন্ড দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করা। শরীরের যেকোনো অংশে সহজে ক্ষত হওয়া বা রক্তপাত হতে পারে, জন্ডিস দেখা দিতে পারে। জ্বর ভালো হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ডেঙ্গু হলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়- যেমন চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, মহিলাদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গু হলে তরলজাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, বাসায় তৈরি ফলের জুস বা খাওয়ার স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে। তেল বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার এই সময়ে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। মশার কামড় এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সেজন্য বাসা মশামুক্ত রাখার চেষ্টা করা। প্রয়োজনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা। শিশুদের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা, খালি গায়ে না রাখা। কেননা এডিস মশা সাধারণত শরীরের উন্মুক্ত অংশে বসে। অপরদিকে ডেঙ্গুর কোন ভ্যাকসিন নেই। যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা উপসর্গযুক্ত ও জটিলতাভিত্তিক। ভাইরাসজনিত রোগ আপনা থেকেই সেরে যায়। তিন দিনে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। পর্যাপ্ত তরল খাবার গ্রহণ করুন, শরীর স্পঞ্জ করুন, বিশ্রাম নিন এবং মাথায় পানি দিন। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। নিজে দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে খাবেন না, তাতে ক্ষতি হতে পারে। এডিস মশা বাড়ির বাইরে বা ভেতরে প্রজনন করে থাকে। মশা কামড়ানোর ছয় দিনের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হয় রোগী। সাধারণত টব, ভাঙ্গা গ্লাস বা হাঁড়িতে কয়েকদিন যাবত পানি রাখলে তাতে এডিস জন্ম নিতে পারে। এটি তার জন্মস্থান থেকে ২০০ মিটারের বেশি দূরে যেতে পারে না। সেজন্য বাড়ির আশপাশ নিয়মিত পরিষ্কারের অভ্যাস গড়ে তোলা।

ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্ক নয়, চিকিৎসা করা হলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই ডেঙ্গুর লার্ভা যেন জন্ম নিতে না পারে সে ব্যপারে বাড়ির চারদিকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নিয়মিত অভ্যাসগুলোকে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা গঠন করা দরকার। ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাথে সাথে প্রতিবেশিকে সচেতন করা এবং জনসাধারণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা জরুরী। শহরকেন্দ্রিক সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা করা। ব্যক্তি সচেতনতার পাশাপাশি সম্মিলিত প্রয়াস গড়ে তুলতে হবে। ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত প্রয়াসের বিকল্প নেই।

লেখক: শিক্ষক

সারাবাংলা/এসবিডিই

ডেঙ্গুতে ভয় নয়- চাই নিত্য সচেতনতা মুক্তমত মো. রেদওয়ানুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর