গৌরবে ও লড়াইয়ে ৪৫ বছরে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
২৮ আগস্ট ২০২১ ১৫:২৯
এক.
২৮ আগস্ট বাংলাদেশের যুব আন্দোলনের ঐতিহাসিক দিন। যুব সমাজের সমস্যার সমাধান, আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন এবং দেশ-জাতির প্রতি দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যুব সমাজের নিজস্ব সংগঠন হিসাবে এই দিনে জন্মলাভ করেছিলো বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। এই সংগঠন যুব সমাজের স্বার্থের প্রতি অবিচল থেকে যুবকদের প্রকৃত আন্দোলনের নিরলস সংগ্রাম করে আসছে। বেকার সমস্যা সমাধানে, বেকার ভাতা, শূন্যপদে নিয়োগদান, কর্মসংস্থানসহ যুব সমাজের বিভিন্ন দাবি ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম আজ সর্বস্তরে স্বীকৃতি পাচ্ছে। এ আত্মসন্তুষ্টির নয়, তবে উৎসাহের বিষয় তো বটেই। যুব সমাজের ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা সংহতকরণ ও মেহনতি মানুষের স্বার্থের পক্ষে সংগ্রামে যুব ইউনিয়ন জন্মলগ্ন থেকেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। নতুন চেতনা সমৃদ্ধ যুব সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুবসমাজের মধ্যে দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে রাখতে অব্যাহত প্রচেষ্টা যুব ইউনিয়ন পরিচালনা করে আসছে। দেশব্যাপী সংগঠনের প্রসার, রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলন ইত্যাদি নানামুখী কর্মধারা এর প্রমাণ।
দুই.
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। দেশি-বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী-প্রতিক্রিয়াশীল চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে স্বরূপে নতুনভাবে জেগে ওঠে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, অগণতান্ত্রিক, সামরিকতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার জাতি, ধর্ম ও শ্রেণি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সুদূরপরাহত হয়ে যায় সেদিন। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রসহ জাতীয় চার মূলনীতির অপসারণ তার ধারাবাহিকতা মাত্র। মূলত বাংলাদেশ নামে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি পুনরুজ্জীবিত করা হয় সেই সময়।
সেই টালমাটাল সময়ে, বিরুদ্ধ সময়ে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় অসীম তারুণ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালের ২৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। গোপীবাগের একটি বাসার ছাদে সদ্য ছাত্র-আন্দোলন শেষ করা ১৫-২০ জন যুবক, যাদের অধিকাংশই ছিল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, তাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রকৌশলী আবুল কাশেম, মাহবুব জামান, অজয় দাশগুপ্ত, প্রকৌশলী মুহম্মদ হিলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কামরুল আহসান খান, শওকত হোসেন, শহীদুল আলম বাদল, হারুনূর রশীদ, নজরুল ইসলাম, জীবন কৃষ্ণ সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে সহজ হয়নি বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের পথচলা। কারাবরণ, হুলিয়া ইত্যাদি বার বার এসেছে। শাসকগোষ্ঠীদের আঘাত এসেছে বার বার। তবু তারা মাথানত করেনি। প্রাথমিক প্রচেষ্টায় তৎকালীন গুমোট পরিবেশে সাহসের সাথে মোকাবেলা করার জন্য যে সংগঠন গড়ে উঠেছিল, প্রথম তার নাম ছিলো ‘গণতান্ত্রিক যুব ইউনিয়ন’।
তিন.
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর নবাবপুর মাহবুব আলী ইনস্টিটিউটে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংগঠনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ডাকসুর বিদায়ী ভিপি, বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি)-র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সেই দিনই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক যুব ইউনিয়নের প্রথম আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। আহবায়ক নির্বাচিত হন প্রকৌশলী আবুল কাশেম।
১৯৭৭ সালের ৯-১০ জানুয়ারিতে প্রথম সম্মেলনে এর নাম হয় ‘বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন’। সেই সম্মেলনে প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী তৎকালীন নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রকৌশলী আবুল কাশেম। ১৯৮১ সালে যুব ইউনিয়নের দ্বিতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন প্রকৌশলী আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ডাকসুর বিদায়ী জিএস মাহবুব জামান।
চার.
যুব ইউনিয়ন ধিকিধিকি জ্বলে উঠে। হঠাৎ জ্বলে উঠে ১৯৮৬-১৯৮৯ পর্বে। তিলে তিলে গড়ে উঠে। যুবধারার নিজস্ব ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। সমস্ত প্রচেষ্টা ছিলো একটি বিপ্লবী যুব আন্দোলন গড়ে তোলা। সঙ্কট, সমস্যায় হতাশ যুবকের ভেতর প্রাণের স্পন্দন ছড়িয়ে দেবার জন্য যুব ইউনিয়ন নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতাসীন এবং সুবিধাবাদী মহলের প্রলোভনের ফাঁদ থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার জন্য, উন্নত বিকশিত যুব সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর প্রয়াস এবং উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এ সময়কালে যুব ইউনিয়নে নতুন মাত্রা ও সফলতার যুগ শুরু হয়। চাকরিতে শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে ওই বছরের ২৬ মার্চ সাভার কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ থেকে শুরু করে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যুব ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রা করে।
পাঁচ.
১৯৮৭ ও ৮৮ সালে দুইদফায় দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়। সে সময় বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সেগুনবাগিচা অফিসে কেন্দ্রীয়ভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করার কাজ শুরু হয়। দলে দলে ছাত্র-তরুণরা এ কাজে অংশগ্রহণ করে। সবাই স্বেচ্ছাশ্রম দেয়। যুব আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠলো। যুবকরা ছাড়াও সেই সময়ের বিভিন্ন রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ কাজে সরাসরি জড়িত হন। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা টনের পর টন চিনি সরবরাহ করেন। কেউ কেউ এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে লবণ সরবরাহ সরবরাহ করেন। ১০ লক্ষাধিক স্যালাইন সে সময় উৎপাদন করা হয়। তাছাড়া নিজেরা রুটি বানানোসহ বিভিন্ন বাসা-বাড়ি রুটি সংগ্রহ করে সারাদেশে তা বিতরণ করা হয়। বন্যা পরবর্তীতে কলেরা মহামারী ঠেকাতে স্যালাইন প্রকল্পের পাশাপাশি শহর পরিচ্ছন্ন কর্ম-অভিযান করা হয়। ডেটল, স্যালাইন, ব্লিসিং দিয়ে শহরে জীবানুনাশক অভিযান পরিচালনা করা হয়। দরিদ্রদের মাঝে রিক্সা সেলাই মেশিন বিতরন করা হয়। গাজিপুর, খালিয়াজুরিসহ কয়েক স্থানে গৃহহীনদেরকে ঘর করে দেওয়া হয়। বন্যাকবলিত এলাকার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়।
সেই সময়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের কাণ্ডারি মোহাম্মদ ফরহাদ চিকিৎসার জন্য মস্কোতে ছিলেন। হঠাৎ একদিন তিনি যুব ইউনিয়নের সবার উদ্দেশ্যে লিখলেন, ‘আপনারা এতদিন পর বোধহয় পথ খুঁজে পেয়েছেন। আপনাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম বৃথা যায় নি। এ ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতার চিন্তা আসবে এ ধরনের কাজ থেকে—আপনাদের উপরও আস্থা বাড়বে।’ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, কমরেড ফরহাদের সেদিনের সেই চিরকুটটি বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের আগামী দিনের কাজে গতিসঞ্চার করেছে। মস্কো থেকে মোহাম্মদ ফরহাদ আবার লিখে পাঠালেন—‘দূর্যোগ থেকে সৃষ্ট আপনাদের এই প্রকল্প। এটাই বস্তুবাদী দর্শন।’ তার লেখা, চিরকুট যুব ইউনিয়নের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ভেতর প্রণোদনা সৃষ্টি করেছে।
ছয়.
১৯৮৯ সালে ১৩ দিনে পায়ে হেঁটে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ঢাকা থেকে সিলেট পদযাত্রা করে। সমাজের বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। গণআন্দোলনের মুখে সিমিটারের সাথে ভুয়া চুক্তি বাতিল হয় তখন। গঠিত তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে মামলা করে সিমিটারের হাত থেকে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা করে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। স্বৈরাচার এরশাদ সিমিটার কোম্পানীর সাথে সিলেটে সন্ধান পাওয়া গ্যাস উত্তোলনের চুক্তি করে। এটা ছিল প্রথম জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলন।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ৯০-র গণঅভ্যুত্থান, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন, জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী আন্দোলন, যুব কনভেনশন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি, নারী যুব ক্যাম্প ইত্যাদি বহুবিধ কাজে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন এক সাহসী-উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছে। এ সংগঠনটি সবসময় চেয়েছে যুবকদের অংশগ্রহণে সমাজতান্ত্রিকধারায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক বিকাশ, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার গণআন্দোলন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ লক্ষ্যে দেশের যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। সাফল্য আছে অনেক।
মুক্তিযুদ্ধের অনন্য ও দুর্লভ চিত্র ও দলিলপত্র নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসবে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন প্রথম কয়েক বছর আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছে। বর্তমানে এসব আলোকচিত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রদর্শন করছে।
প্রতিকূল অবস্থায় সিলেটে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ নিয়ে কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ আহুত অনশন আয়োজন করেছে। যুব ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এতে অংশগ্রহণ করেছে। এ অনশন আয়োজনে পুরো নৈপথ্য ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। চাকরি ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট প্রথা প্রত্যাহার যুব ইউনিয়নের নিরন্তর আন্দোলনে সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া সারাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালের ২৭ আগষ্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় যুব কনভেনশন। এ কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী প্রমুখ। এ কনভেনশনে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাবীব ইমন।
সাত.
কর্মসংস্থান সংকটে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’। একজন সাধারণ যুবক তার শিক্ষা জীবনের পরীক্ষা প্রস্তুতির পাশাপাশি, শিক্ষা শেষে চাকরি পেতে আর্থিক প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে হচ্ছে। দরিদ্র বাবার জায়গা-সম্পত্তি বিক্রি করে কিংবা সুদে টাকা নিয়ে হলেও চাকরি পাওয়ার জন্য এক ধরণের মানসিক পূর্ব প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হচ্ছে। এক দিকে কর্মহীন যুবকদের ব্যাপকতা, অন্যদিকে সীমিত কর্মসংস্থান এই সংকটকে আরো তীব্র করেছে। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সারাদেশে ‘ঘুষ ছাড়া চাকরি চাই’ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। দেশের কোনো কোনো জায়গায় ঘুষ ছাড়া চাকরি চাই দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পুলিশ হামলা করেছে। বাধা দিয়েছে। তবুও এসব কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণ ও যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ ছিলো। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা, স্যানিটাইজার উৎপাদনসহ বহুমুখী কার্যক্রম, কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। রোমাঞ্চকর সব ঘটনা। অসংখ্য সফল গৌরবগাঁথা।
আট.
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ১৯৮২ সাল থেকে বিশ্ব যুব ফেডারেশনের সাধারণ পরিষদ (জিসি) সদস্য। বিশ্বের ১২৩টি দেশের ১৯৫টি পূর্ণ সদস্য সংগঠনসহ সর্বমোট তিনশতাধিক সংগঠন নিয়ে গঠিত বিশ্ব গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ডব্লিউএফডিওয়াই-র জিসি সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক যুব আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
নয়.
প্রতিষ্ঠার পূর্বেই যুব ইউনিয়নের সাথে এদেশের বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তির সম্পর্ক পুরানো। ১৯৫১ সালের মার্চে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ প্রদেশের সর্বত্র তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। গণতান্ত্রিক প্রগতিবাদী এই সংগঠন গড়ার পেছনে প্রধান নেপথ্য শক্তি স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টি। উদ্দেশ্য ছাত্র-যুবসমাজে সুস্থ রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ এবং দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে অগ্রচারী সহায়ক সাংগঠনিক শক্তি গড়ে তোলা। ভাষা আন্দোলনকে শক্তিমান করে তোলার বিষয়টিও তাদের চিন্তায় ছিল। তবে বিশেষ সতর্কতা ছিল একে কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠনের বদলে উদার গণতন্ত্রী প্রগতিবাদী ধারায় সংগঠিত করা, যাতে উদার ভিন্ন চিন্তার রাজনীতিমনস্ক যুবকরাও এতে অংশ নিতে পারেন। বাস্তবে তা-ই ঘটেছিল। এই সংগঠন সম্পর্কে যে যেমনই বলুন, এর মিশ্র রাজনৈতিক চরিত্র সত্ত্বেও এতে ছিল প্রগতিবাদী সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রাধান্য। গণতান্ত্রিক যুবলীগকে চিন্তায় রেখে যুব ইউনিয়নের নামের আগে ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দটি যুক্ত হয়।
দশ.
লেনিন ১৯২০ সালে যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী দিনে সাম্রাজ্যবাদ-ফ্যাসিবাদবিরোধী ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ে তোলার লাল ঝাণ্ডা উড়াতে যুবকদের এগিয়ে নিতে হবে। তিনি যুবসমাজকে তার লড়াই-সংগ্রামে স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন। কাজেই বিশ্বব্যাপী সংগ্রামে শুরু হয়েছিল নবধারার যুব আন্দোলন। ইতিমধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশে যুবকরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এদের নিরলস প্রচেষ্টা আর কঠোর পরিশ্রমের অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের যুবকরা হাফিজ আদনান রিয়াদ ও খান আসাদুজ্জামান মাসুমের নেতৃত্বে আজ সংঘবদ্ধ হয়েছে। শক্তি বেড়েছে। আন্দোলনের চেহারা বদলে যাচ্ছে। প্রতিটি আন্দোলন-গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কাজগুলো খুবই কঠিন। সকল ক্ষেত্রেই আরো অনেক বেশি কর্মধারা প্রয়োজন এবং এটাই সময়ের দাবি। যুব ইউনিয়ন কর্মীদের আরো অনেক ধৈর্য্য, সাহস এবং একাগ্রতা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। সাধারণ যুবকদের স্বপ্নজাগানিয়া অগ্রসর নিজস্ব সংগঠন হিসেবে যুব ইউনিয়নকে দাঁড় করাতে হবে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কর্মপ্রেরণাই হোক এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লক্ষ্য।
লেখক: সহ-সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
সারাবাংলা/এসবিডিই
গৌরবে ও লড়াইয়ে ৪৫ বছরে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন মুক্তমত হাবীব ইমন