নিরক্ষরতা দূর হোক
৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:৩২
একটি দেশ ও জাতির শিক্ষিত হওয়া নির্ভর করে তাদের স্বাক্ষরতার উপর। এটি হলো শিক্ষিত হওয়ার মাপকাঠি। আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস। ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ১৪তম অধিবেশনে ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করা হয়। এটি ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল ব্যক্তি সম্প্রদায় এবং সমাজের কাছে স্বাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা। জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র দিবসটি পালন করে থাকে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়। পৃথিবীর প্রায় ৭৭৫ মিলিয়ন অধিবাসীর ন্যূনতম স্বাক্ষর দক্ষতার অভাব রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এটি পাঁচজনে একজন এখনো শিক্ষিত নয়। এবং তাদের দুই-তৃতীয়াংশ নারী। ৬ কোটি ৭ লাখ শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে এবং আরো অনেক অনিয়মিতভাবে উপস্থিত হয় বা ঝড়ে পড়ে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাক্ষরতার বিকল্প নেই। স্বাক্ষরতা মানুষকে কর্মদক্ষ করে, মানবসম্পদে পরিণত করে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিরক্ষর জনগোষ্ঠী একটি অন্তরায়। তাই আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ত্ব অপরিসীম। দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠী এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুব ও বয়স্কদের স্বাক্ষরতা বা মৌলিক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি ট্রেডভিত্তিক দক্ষতা-প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে তারা মানবসম্পদে পরিণত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। এ সরকারের আমলে সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক দেশে বর্তমান স্বাক্ষরতার হার ৭২.৩%। এ ক্ষেত্রে দেশে ২৭% জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। একদিক থেকে দেখলে দেশে স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে খুশি হওয়ার মতো এবং তাতে সরকারের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে এখনো ২৭ ভাগ মানুষ নিরক্ষর রয়ে গেছে এই আধুনিক যুগেও, এটা দেশের জন্য উদ্বেগজনক। এই নিরক্ষরতা দূর করা দরকার। বিশ্বের প্রতিটি উন্নত দেশ নিশ্চয়ই ১০০ ভাগ উচ্চ শিক্ষিত নয় তবে ১০০ ভাগ স্বাক্ষর সম্পন্ন। একটি স্বপ্নেভরা উন্নয়নশীল দেশের বুকে শতকরা ২৭ জন নরনারী নিরক্ষর- এটা ভাবা যায় না। অবশ্যই এই নিরক্ষরতা দেশের উন্নতির প্রধান প্রতিবন্ধক। চলমান আধুনিক যুগে নিরক্ষরতার অসুবিধা পদে পদে। এখন নিরক্ষর লোক এক ধরনের প্রতিবন্ধী। নাম স্বাক্ষর করার প্রয়োজন বিগত ২৫ বছর আগের চেয়ে বর্তমানে ঢের বেড়ে গেছে। উদাহরণ দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাবে না, পদে পদে নাম স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। ব্যাংকে, ডাকঘরে, অফিস-আদালতে, ভূমি অফিসে, চুক্তিপত্রে নাম স্বাক্ষরের বিকল্প নেই। নিরক্ষর লোকতো একটি খবরের কাগজও পড়তে পারে না। একটা চিঠি লিখতে ও পড়তে পারে না। নিজের নামটা লিখতে না পারার মতো অগৌরব এবং গ্লানি আর কীসে হতে পারে? বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, জীবনযাপনের মান বেড়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের হাতে হাতে মোবাইল- তাহলে ২৭ ভাগ মানুষ নিরক্ষর থাকবে কেন? সরকারি প্রচেষ্টার পাশা-পাশি বেসরকারি প্রচেষ্টাও থাকা দরকার নিরক্ষরতা দূর করার জন্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি শিশু-কিশোরদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই পদক্ষেপের কারণে দরিদ্রের পর্ণ কুটির থেকে জীর্ণ বস্ত্র পরিধান করা শিশুরা প্রাইমারি স্কুলে ছুটে এসেছিলো নতুন বইয়ের গন্ধ পেয়ে। তারা নতুন উৎসাহে প্রাইমারি শিক্ষা অর্জন করেছে। আজকের স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধির পেছনে জাতির জনকের অবদান স্মরণ করতে হবে। নিরক্ষরতা অভিশাপ। এই অভিশাপ মোচনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু গণমুখী শিক্ষাকর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। ‘ড. কুদরত-ই-খুদা’ শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের সন্তানেরা যাতে নিরক্ষর না থাকে, সেই চিন্তা তিনি করেছিলেন। শোষিতের ঘরে শিক্ষার আলো দান করতে চেয়েছিলেন। তার প্রাণটা কেড়ে নেয়ার কারণে সব কিছু ধূলায় লুণ্ঠিত হয়ে গেলো। বাংলা সাহিত্যের একজন নন্দিত লেখক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘সুশিক্ষিত মানেই স্বশিক্ষিত।’ স্বাক্ষর সম্পন্ন না হলে স্বশিক্ষিত হবে কেমন করে? যে ব্যক্তি নিরক্ষর তার চেতনার মানও অত্যন্ত নিচে। সে জাতির বোঝা। অচিরেই আমাদের দেশে স্বাক্ষরতার হার ১০০ ভাগে উন্নীত করতে হবে। তাই সরকার সহ সকল নাগরিকের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সকলকে নিরক্ষরমুক্ত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা একদিন শিক্ষিত জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
সারাবাংলা/এসবিডিই