বিজয়ের ৫০ বছরে তারুণ্যের ভাবনা
১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:২৯
বিজয় একটি ছোট্ট শব্দ হলেও এর মহত্ত্ব কিন্তু ছোট নয়। এই শব্দের অনেক তাৎপর্য অনেক মর্যাদা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি তারিখ নয় শুধু, এই তারিখের পেছনে লুকিয়ে আছে তিরিশ লক্ষ কিংবা তারও অধিক জীবনের গল্প। এতো ত্যাগ, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে একটি বাংলাদেশ রচিত হয়েছে। আজ বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা।
যে দেশের জাতীয় সংগীত- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। রবিন্দ্রনাথের এই বাংলাদেশ প্রেম ছাড়াও এই বাংলার প্রতি অনেকের প্রেম ছিলো। এই বাংলায় বঙ্গবন্ধু ছিলো, ছিলো সুফিয়া কামাল, জাহনারা ইমাম। এই বাংলায় শহিদ জিয়া, জয়নুল আবেদীন, সরোয়ার্দী, ভাসানীর মতো মানুষ ছিলো। এই বাংলায় ছিলো কাজী নজরুল, জসিম উদ্দিন, আলি আব্বাসেরা। তাদের এই বাংলার প্রতি ভালোবাসা যেভাবে ছিলো সেভাবে এসময় এ প্রজন্মের কতটুকু আছে সেটা আমার বোধগম্য নয়।
তবে এখানেও অনেক কারণ আছে। তখনকার সে সময়ের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আজ আমাদের এই সোনার বাংলা স্বাধীন। এই দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। তবুও আমার সোনার বাংলায় তারুণ্যের কদর নেই। এদেশের বেশিরভাগ তরুণ-যুবসমাজ বেকারগ্রস্থ। এই বেকারত্ব থেকেই এরা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, চুরি এসব করা শুরু করে। এরপর তৈরী হয় চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, চোরাকারবারি। অনেকেই মাদকাসক্ত এবং মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
শুধু তা-ই নয়, আজ বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও অধিক। নেই পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ, নেই সরকারের স্বদিচ্ছা। যার কারণে আজ আমাদের দেশে পড়ালেখা করেও হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলেনা। তারা কর্মসংস্থানে সুযোগ না পেয়ে চলে যায় ধ্বংসের পথে। অনেক সময় তারাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অনেকে তখন জীবনের তাগিদে নোংরা এবং ঘৃণ্যতম কাজ বেছে নেয়, যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ে, অনেক সময় হয়ে উঠে দেশের জন্য বিপদজনক। তাদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কতিপয় মহল তাদের হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। এসকল কারণেই এ প্রজন্ম প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ পায়না।
বর্তমান সরকারের কাছে এ প্রজন্মের প্রত্যাশা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমান কর্মসংস্থান তৈরী করে দেয়া। যাতে কোনো শিক্ষিত বেকাররা দেশের বোঝা হয়ে না থাকে। কোনো শিক্ষিত ছেলে যেনো কর্মসংস্থানের অভাবে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে।
এ প্রজন্ম যখন দেখে মারামারি, খুন, গুম, চুরি ছিনতায়, ডাকাতি, এমনকি ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট এবং নোংরা অপরাধ চলে তখন তাদের কাছে এ বিজয়ের আনন্দ মলিন হতে দেখা যায়। বিজয়ের স্বাদ হারিয়ে যায়। বিজয়ের আনন্দ হতে হবে সত্য এবং সুন্দর। এ আনন্দে থাকতে পারবে না কোনো খুত। না পাওয়ার বেদনা, হতাশা, নির্যাতনের শিকার হয়ে কখনও বিজয়ের স্বাদ পেতে পারেনা কোনো স্বধীন দেশের নাগরিক। পেঠে ভাত না পড়লে মুখে হাসি থাকবে কীভাবে? আর অনাহারীর মুখে বিজয়ের হাসি ফুঁটাতে চাইলে আগে ক্ষুধার যন্ত্রণা দূর করতে হবে। যন্ত্রণা নিয়ে হাসতে পারে খুব কম মানুষ। যারা হাসে তারাও ফেঁসে যায় বলে হাসে। প্রকৃত পক্ষে এই হাসির না আছে কোনো মূল্য, না আছে কোনো ব্যাখ্যা। তাই একটি সুন্দর সত্য হাসির জন্য এ প্রজন্ম সরকার ও দেশের মানুষের সহযোগিতা কামনা করে।
আমারা সকলে হয়তো জানি স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন, আজ আমাদের কাছে বিষয়টিও তেমন হয়ে দাঁড়িয়েছে । তারপরেও আমরা বিজয়ের গান গাইছি। বিজয় তো আমরা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অর্জন করেছি। কিন্তু রাজাকার, আলবদর, দেশের এবং দেশের মানুষের শত্রুদের নিকট থেকে এখনও বিষয় অর্জন করতে পারিনি আমরা। রাজাকার কিছুর ফাঁসি দিলেও অনেক অজ¯্র রাজাকার এখনও আমাদের চারপাশে আছে। এই যেমন নিজের দেশের খেলার সময় পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে যায় কিছু রাজাকার। এমন আরও নানান ক্ষেত্রে অনেক রাজাকার আছে যারা দেশের ভালো চায় না। এসকল শত্রুকে মোকাবেলা করতে আজ আমরা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি। ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহীনির বিরোদ্ধে সকলে এক হয়ে রুখে দাঁিড়য়েছি, কিন্তু আজ আমরা সকলে দেশের ভেতরের শত্রুদের বিরোদ্ধে এক হয়ে রুখে দাড়াতে পারছিনা। এর চাইতে বড় পরাজয় আর কি হতে পরে আমাদের কাছে। বিজয়ের ৫০ বছরে এসে বিজয়ের মাসে প্রজন্মের প্রত্যাশা হিসেবে এটাও একটা বড় চাওয়া। আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এখন যুদ্ধ করতে হবে দেশের অস্থিত্ব রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য। এ যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করবো। এটাই আমার বিশ্বাস। বিজয়ের এ মাসে আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞা হওয়া চাই দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য আমাদেরে প্রাণ হাসি মুখে বিলিয়ে দিবো। তবেই বিজয়ের মাসে আমাদের সত্যিকারের বিজয় হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম।
সারাবাংলা/এসবিডিই