Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালেদা জিয়ার পদক, স্যান্ডো গেঞ্জির বুকপকেট

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:৫৩

কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা দিয়েছে। এ পুরস্কার পাওয়ার সাড়ে তিন বছর পর সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে বিএনপি।

এ বিষয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করেন।

বিজ্ঞাপন

সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদে দেখা যায়, ‘ডেমোক্রেসি হিরো’ ক্যাটাগরিতে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ পুরস্কার দেওয়া হয়। তাতে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশে ও বহির্বিশ্বে অনগ্রসর জনগণের জন্য গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য খালেদা জিয়াকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ক্রেস্টে এর তারিখ উল্লেখ রয়েছে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই।

এতদিন পর এ পুরস্কারপ্রাপ্তির কারণ কী, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর কারণটা হচ্ছে, এই সম্মাননা যখন দেওয়া হয় তখন ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জেলে ছিলেন দুই বছর। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কয়েকবার। এখন উনি বাসায় এসেছেন। আমরা তাকে এই সম্মাননার কথা জানিয়েছি। আপনাদেরও (সাংবাদিকদের) জানলাম।’

অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ খালেদা জিয়ার পদক প্রাপ্তি বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বেগম জিয়ার জন্মতারিখ, পুরস্কারের তারিখ, কোনোটাই ঠিক নেই। বেগম জিয়ার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, তার জন্মের তারিখ যেমন ঠিক নেই, পুরস্কারের তারিখও ঠিক নেই, পুরস্কারদাতাদের ওয়েবসাইটেও তার নাম নেই।’

বিজ্ঞাপন

অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলদার সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের গর্ভে জন্ম নেয়া বিএনপি নেত্রীর এই খেতাবপ্রাপ্তি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিএনপির নেতারা বেশ কিছুদিন যাবৎ বিশেষ করে দুর্নীতির অভিযোগে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার দন্ড হওয়ায় এবং জেলে যাওয়ার পর থেকেই তাকে তাদের এই কল্পিত উপাধি ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামে সন্মোধন করতে থাকেন। এখন হয়তো সেটাকেই একটি বিদেশি সার্টিফিকেটের মোড়কে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপিত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এই সন্মাননা যে ‘দুই নম্বরি’ভাবে জোগাড় করা তা সাড়ে তিন বছর পরে  দেশবাসীকে জানানোতেই পরিস্কার হয়ে গেছে। এখন কবে যেন আবার তারেক রহমানের  জন্য গায়েবি কোন ‘ব্রাদার অব অনেস্টি’ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা দেশবাসীকে গিলতে না হয়। কারণ দুর্নীতি ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক থাকায় সৎ সততার যে কোন সার্টিফিকেট এখন তার খুব দরকার।

বিএনপির এসব কান্ডকারখানা দেখে মনে হচ্ছে বিএনপির নেতারাই চালাক আর সবাই বোকা! কেউ কিছু বোঝে না। কানাডা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক মিলন নিজ দলে ও নেতাদের কাছে নিজের দাম বাড়াতে তার নিজের গড়া ওই কানাডিয়ান সংগঠন (সিএইচআরআইও) ঢাকার বিএনপির বড় বড় নেতাদের যে একটা বিরাট ধোঁকা দিয়েছে। বিএনপির বড় নেতারা বুঝে না বোঝার ভান করলেও দেশবাসী ঠিকই বুঝেছে। এই রকম মোমিনুল হকরা হয়তো আগামীতে তারেক রহমানের জন্য ‘কান্ট্রি হিরো’ নামের কোন পদক প্রসব করে বসবে! কারণ বিএনপির নেতারা হাওয়া ভবনের দুর্নীতির রাজপুত্র ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানকে ‘দেশনায়ক’ বলে ডেকে থাকেন। দেশ নায়কের ইংরেজি ভার্সন ‘কান্ট্রি হিরো’ নাম দিয়ে একটি গায়েবি পদক রেডি করে সুবিধামত কোন একদিন তা দেশের মানুষের সামনে প্রসব করলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এমন চিত্র যাতে এই দেশের মানুষকে আর দেখতে না হয় সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা করা ছাড়া দেশবাসীর আর কী বা করার আছে।

সামরিক শাসক জিয়ার হাতে গড়া বিএনপি যারা কিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে সংসদে আইন পাস করেছিল। যারা কিনা পনেরই আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান খুনি কর্নেল রশীদকে সংসদে এনে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসিয়েছিল এখন তারাই নিজেরা নিজেদের বলছে গণতন্ত্রের মা! ক্ষমতায় থাকতে একুশে আগস্টের মত বর্বর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে প্রধান বিরোধীপক্ষের নেতাদের চিরতরে শেষ করে দেয়ার চক্রান্ত যারা করে তারাই এখন গণতন্ত্রের মা! একসাথে দেশের ৬৪ জেলায় পাঁচশ জায়গায় যারা বোমা হামলা করে দেশকে প্রকম্পিত করে তারাই এখন পাচ্ছে বা নিচ্ছে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সার্টিফিকেট। এ যেন স্যান্ডো গেঞ্জির বুক পকেট! গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে, পুরো বিরোধী শক্তিকে একেবারে প্রাণে শেষ করে দেয়ার চক্রান্ত করে, দেশকে সর্বনাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে এই পদকের ফ্যাশন শরীরে জামার নীচে পকেট লাগানোর মতোই ফ্যাশন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনায় অনবদ্য সফলতা, দেশবিদেশে নানা ধরণের স্বীকৃতি ও পদকপ্রাপ্তিতে হয়তো তাদের গা জ্বলা ভাব এখনও যায়নি। আবার বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে এটা অর্জন করার স্বপ্নও দেখেননি। বরং ক্ষমতায় থাকতে করা কুকর্মের ফল এখনও ভোগ করছেন- এই জ্বালা প্রশমন করতে প্রবাসী বিএনপি নেতারা তাদের নেত্রীর জন্য এসব পদকের ব্যবস্থা করলে দেশের মানুষের উপহাস করা ছাড়া আর কীইবা করার থাকে।

লেখক:  কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই

খালেদা জিয়ার পদক বেগম খালেদা জিয়া মো. আসাদ উল্লাহ তুষার

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর