Thursday 05 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর যে ভাষণ স্বাধীনতাবিরোধীদের গায়ের কাঁটা

মানিক লাল ঘোষ
৭ মার্চ ২০২২ ১৫:৪২ | আপডেট: ৭ মার্চ ২০২২ ১৭:৪৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নমাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভের মধ্য দিয়ে নিপীড়িত বাঙালি জাতি লাভ করে তাদের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বাদ। বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন যে মহামানব তিনি এদেশের সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির কন্ঠস্বর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তানী শাষক ও শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অনেকটা নিরস্ত্র হাতেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে এ দেশের সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঁচা-মরার লড়াইয়ের সংগ্রামে। বজ্রকণ্ঠে তিনি মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে সমবেত জনতার বিশাল জনসমুদ্রের সামনে এসে বাঙালির মুক্তির মহাদূত, মহাকাব্যের মহাকবি শোনান তার অমর কবিতাখানি। তার কবিতার প্রতিটি শব্দে ছিল এক-একটি আন্দোলনের প্রেরণা, প্রতিটি লাইনে ছিল এক-একটি নির্দেশনা। তিনি তার ভাষণে একদিকে তুলে ধরেছিলেন পাকিস্তানের ২৩ বছরে শোষণ, শাসন, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ইতিহাস। অন্যদিকে অসহযোগের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতিরও ঘোষণা দিয়েছিলেন। দূরদর্শী বলেই তিনি নিশ্চিত ছিলেন ৭ মার্চে তার ভাষণের পর তাকে আর ছেড়ে দেবে না পাকিস্তান সরকার। হয় মৃত্যুর দুয়ার, নয় আবারও কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠই হবে তার শেষ ঠিকানা। তাই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ বজ্রকণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই সাহসী তেজোদীপ্ত উচ্চারণের মধ্য দিয়ে যে মহাকাব্য বঙ্গবন্ধু রচনা করেন সেদিন রেসকোর্স ময়দানে, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে আজ তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ইউনেস্কোর প্রামাণ্য বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ৭ মার্চ শুধু আজ বাঙালি কিংবা বাংলাদেশের সম্পদ নয়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়কদের ভাষণের মধ্যে অন্যতম। মাত্র একটি ভাষণ কীভাবে বদলে দিলো একটি মানচিত্র, জন্ম দিলো নতুন জাতিসত্ত্বা আর নতুন রাষ্ট্রের তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই ভাষণের মধ্যে বিশ্বের নিপীড়িত, অধিকারবঞ্চিত মানুষ আজ তার মুক্তির দিশা খুঁজে পায়।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। কিন্তু এই ভাষণ প্রচার নিয়ে ষড়যন্ত্র ও বাধা প্রদানের ঘটনাও কম ঘটেনি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলতে প্রথম বাধা আসে ৭ মার্চের ভাষণ প্রচারে বাধা। স্বাধীনতা বিরোধী খুনীচক্রের ভয় ছিল এই ভাষণে নতুন করে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় আবারো জেগে উঠবে বাঙালি। ৭৫ পরবর্তী স্বাধীনতা বিরোধী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা যখন ক্ষমতায় আসে, তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ৭ মার্চের ভাষণ প্রচারে বাধা দেয়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো ইতিহাস বিকৃত করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের একজন পাঠককে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রকারীরা আজ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত। ইতিহাস এমনই হয়। ষড়যন্ত্র করে ক্ষণিকের জন্য ইতিহাস বিকৃত করা যায়, কিন্তু প্রকৃত সত্যকে বেশি দিন আড়াল করা যায় না। বঙ্গবন্ধুকে যারা ধারণ করেন না, জয় বাংলা শ্লোগানে যাদের গায়ে জ্বর আসে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা বিশ্বাস করে না, স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার পথ ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বঙ্গবন্ধুর যে ভাষণ স্বাধীনতা বিরোধীদের গায়ের কাঁটা মানিক লাল ঘোষ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর