রমজান মাসে লোডশেডিং কাম্য নয়
২০ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৫৪
লোডশেডিং আমদের দেশে নতুন সমস্যা নয়। এটি আমাদের দেশে অন্যতম একটি মারাত্মক সমস্যা। এই সমস্যা থেকে আমরা চাইলেও মুক্তি পাচ্ছি না সহজে। এই সমস্যা শুধু আজকের নয়, এটি দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের দেশের মানুষদের পীড়া দিয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং বলতে আমরা বুঝি, বিদ্যুৎ না থাকা কিংবা ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া।
বিদ্যুৎ ছাড়া বর্তমানে টিকে থাকা একদম অসম্ভব। এই প্রয়োজনীয় জিনিসটি আমরা যদি প্রয়োজনের সময় না পাই তবে তার কোনো মানে হয় না। লোডশেডিং আমাদের জন্য নতুন ব্যাপার না হলেও এই অসহ্যকর বিষয়টি রমাজন মাসে সহ্য করতে বড়ই কষ্ট হয় রোজাদার মানুষদের। সেহেরি খাওয়ার জন্য মধ্যরাতে উঠে যখন আলো-বাতাস ছাড়া খেতে বসে একজন রোজাদার তখন ভাবতে পারেন তাদের কি অবস্থা হয়? অন্ধকারে কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে সেহেরি খাওয়ার মতো বিরক্তিকর, কষ্টদায়ক বিষয় আর কি হতে পারে! রোজাদারদের এমন কষ্ট নিশ্চই সুখকর হবে না। রমজান মাসে মাঝে মাঝেই দেখা যায় সেহেরি খাওয়ার আগমুহূর্তে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। আবার ইফতারের পূর্বেও মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ থাকেনা। রমজান মাসে যদি এমনভাবে বিদ্যুৎ নিয়ে কষ্ট অনুভব করতে হয় মানুষের, তবে আর কখন শান্তি পেতে পারে মানুষ তা আমার জানা নেই। এভাবে যদি লোডশেডিং চলতেই থাকে, তবে এর চেয়ে কয়েক যুগ আগের হারিকেন দিয়ে জীবন যাপন অনেকটাই ভালো ছিলো। বিদ্যুৎ আমাদের জন্য একটি সেবা। কিন্তু যে সেবা থাকার পরও সঠিক সময় পাওয়া যায়না সেটাকে সেবা বলা যাবেনা।
ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের এই অবস্থা সত্যি অকল্পনীয়। এমন আধুনিক বাংলাদেশ আমরা আশা করিনি। আমাদের আধুনিক ব্যবস্থা যদি আদিম যুগের চেয়ে বেশী কষ্ট এবং যন্ত্রণা দেয় তখন সেই আধুনিক ব্যবস্থা মানুষের কাছে হাস্যকর মনে হবে। যে সময় যা প্রয়োজন তা যদি পাওয়া না যায় তবে সেই আধুনিকতা এবং প্রযুক্তি দিয়ে মানুষ কি করবে সেটাও এখন অন্যতম একটি প্রশ্ন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসে যদি এভাবে লোডশেডিং হয় তবে এই সরকারে কাছেও মানুষ আর কী আশা করতে পারে।
রমজান মাসে অনেক কিছুতেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ অন্যতম। বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে সাথে সাথে। ট্রান্সমিটার নষ্ট হয়ে গেলে অনেক সময় দেখা যায় কয়েকদিন পর্যন্ত একটা এলাকা ভোগান্তিতে পড়ে। রমজান মাসে এসব সমস্যা সমাধানে কতৃপক্ষকে আরও সহনশীর হতে হবে। এসকল সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে দেশের প্রশাসন সহ সরকারের। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তবে কখনোই এই সমস্যা দেশের মানুষকে বন্দি করে রাখতে পারে না। আমাদের দেশে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ না থাকে তবে কিভাবে আরো বিদ্যুৎ বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আর বিদ্যুৎ যতটুকুই থাকুক তা সঠিক ভাবে বন্টন করতে হবে কতৃপক্ষে। তবে প্রয়োজনের সময় যেনো বিদ্যুৎ সকলেই পায়। কিন্তু এর ভেতর দুর্নীতির গোলটেবিল বসলে তা কখনোই সম্ভব নয়। এই খাতকে করতে হবে দুর্নীতি মুক্ত এবং স্বচ্ছ। এছাড়াও আমি বিশ্বাস করি জনসচেতনতা একটি মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারে এসকল সমস্যায়। আমরা নিজেরাও এই ব্যপারে কতটুকু সচেতন তা নিয়েও আছে আমার সন্দেহ। আমরা আমাদের নিজেদের বিদ্যুৎ অপচয় করে দেশের এবং দেশের মানুষের ক্ষতি করছি। আমাদের প্রয়োজন ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সেখানে আমরা ব্যবহার করি ২০ শতাংশ, এভাবেই অপচয় করি আমাদের বিদ্যুৎ আমরা নিজেরাই। ঘরের ভেতর লাইট ফ্যান চালিয়ে অফিসে চলে যাই আমরা অনেকেই। এই বিষয় গুলো যদি আমরা নিজেরা একটু ভেবে দেখি তবে আমার মনে হয় এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা অনেকটা সহজ হবে। সচেতনতাই পারে সঠিক এবং সুন্দর সমাজ গঠন করতে। সেই সাথে বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন এই খাতকে আরো সম্প্রসারন এবং পরিবর্ধন করে বাংলাদেশের মানুষকে আরো সুন্দর জীবন যাপনে সহয়তা করা।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি