Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নোংরা রাজনীতিই পৃথিবীর অশান্তি

রহমান মৃধা
২১ এপ্রিল ২০২২ ১৮:১১

আজ থেকে ৭৩ বছর আগে ন্যাটো জোট গঠন করা হয়। যে দেশগুলো এই ন্যাটো জোট গঠনে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিল এবং নেত্রীত্ব দিয়েছিল তার মধ্যে আমেরিকার নাম তালিকার প্রথমে রাখলে ভুল হবে না। অন্যদিকে গঠন করা হয় ওয়ারশ চুক্তি।

উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট বা ন্যাটো (North Atlantic Treaty Organisation বা NATO)। ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিলে। ন্যাটো একটি সামরিক সহযোগিতার জোট এবং এই জোটের দেশগুলো পারস্পারিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এই জোটের সদস্য। ন্যাটোর সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর খরচ পৃথিবীর সকল দেশের সামরিক খরচের প্রায় ৭০ ভাগ। অন্যদিকে ওয়ারশ চুক্তি বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পারিক সহায়তার চুক্তি হিসেবে পরিচিত। এই ওয়ারশো চুক্তি বা ওয়াৱশপ্যাক ন্যাটোর গঠনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণরূপে এবং ন্যাটোর প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে গঠন করা হয়। এই জোটে যুক্ত করা হয় স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীণ কেন্দ্রীয় ও পূর্ব ইউরোপের আটটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জোট দুটি গঠন করা হয়। ওয়েস্ট ইউরোপের বেশির ভাগ দেশগুলো বেশ দুঃশ্চিতার মাঝে ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের ভয়ে। না জানি কখন কোথায় আক্রমণ করে! এমন একটি সময় আমেরিকা সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে কৃপণতা করেনি। যে সমস্ত দেশ আমেরিকার সঙ্গে দল বেঁধেছিল তারা একবারও কি ভাবেনি আমেরিকা আটলান্টিক মহাসাগরের অন্য পাড়ে, কেনো তারা আমাদের বন্ধু হতে চায়? কারণ ছিল একটাই তা হলো সুপার পাওয়ার। সোভিয়েত ইউনিয়ন পুরো ইউরোপ এবং এশিয়া ডোমিনেট করবে তা আমেরিকা কখনও মেনে নিতে পারেনি। তাইতো উঠেপড়ে লেগেছে সব সময় পৃথিবীতে শান্তির চেয়ে অশান্তি ডেকে আনতে। আমাদের এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তানকে অনেকবার কাজে লাগিয়ে নানা কুকর্মের ব্যবস্থা করেছে আমেরিকা। যাই হোক না কেনো পশ্চিমা ইউরোপ এবং আমেরিকা শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গেচুৱে তছনছ করেছে।

প্রথমে মিখাইল গর্ভাচভ, পরে বরিস নিকোলায়েভিচ য়েলৎসিন এবং শেষে পুতিন। সব চলে গেলেও রাশিয়া রয়েছে এখনও। যারা সোভিয়েত ছেড়েছে তারা যোগ দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে। আবার অনেকে যোগ দিয়েছে সেনজেন দেশগুলির সঙ্গে। ন্যাটো জোটের মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত বা বর্তমান রাশিয়াকে দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করা। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে বেশ ভালো ভাব রেখেছে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম এবং পুতিনের মধ্যে, বলতে গেলে তাদের মাঝে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় ন্যাটো মেম্বারদের বুঝতে কিছুটা দেরি হলেও তারা তখন সচেতন হতে শুরু করে। সচেতন জাতি খোঁজে সমাধান। তাই হয়তো গত তিন বছর আগে ন্যাটো জোট সেলিব্রেশন তেমন আনন্দময় মুহূর্ত দিতে পারেনি মিস্টার ট্রাম্পকে। ন্যাটো মেম্বাররা তাকে মাথায় তুলে নিতে পারেনি যার কারণে সবকিছু ফেলে, কাউকে না জানিয়ে গত মিটিংএ ন্যাটো জোট থেকে গোপনে লন্ডন ছেড়েছিলেন আমেরিকার প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিহাসের পাতা খুঁজলে এমন ধরনের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর রাজনীতি কলুষতায় পরিপূর্ণ। ট্রাম্প প্রশাসনের পতন ঘটিয়ে বাইডেন প্রশাসন শুরু হয়। শুরুতে করোনা মহামারি সেটা না কাটতেই বিশ্বয়নে যুদ্ধ। আমেরিকা কিছুটা দিশাহারা নানা দিক দিয়ে। এদিকে চীন বিশ্বয়নে পুঁজিবাদী। আমেরিকার কিছু একটা করতে হবে, শুরু হলো পশ্চিমাদেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ঢোকানোর পালা। যে প্লান সেই কাজ। ন্যাটোকে জোরদার করতে হবে, রাশিয়ার চারপাশ ঘিরে ইউক্রেন সহ ন্যাটো সদস্য হবে ইত্যাদি।

ইউক্রেন আক্রমণের আগেই বারবার রাশিয়া হুসিয়ারি সংকেত দিয়েছে যে তার সীমান্তে ন্যাটো জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো চলবে না। ন্যাটোকে সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার একটি হাতিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করে পেসকভ বলেন, এ জোটের সদস্য বাড়ানোর মাধ্যমে ইউরোপ মহাদেশে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। এ মন্তব্যের গুরুত্ব না দেয়ার ফলে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে।

আজ ফিনল্যান্ডের প্রধান মন্ত্রী সুইডেনের প্রধানমন্তীর সঙ্গে আলোচনা করবেন কবে কখন কীভাবে বা আদোএ ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হবেন কিনা! ঠিক তেমন একটি সময় রুশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার দুটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফিনল্যান্ড সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর রাশিয়া তার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ফিনল্যান্ড সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস-৪০০ মোতায়েন করতে যাচ্ছে। রাশিয়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ফিনল্যান্ডকে হুশিয়ার করে দেওয়ার পর ওই দেশের সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাসহ অন্য সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর করার কাজ শুরু করেছে।

অন্যান্য নিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেমন আইয়ারল্যান্ড, মাল্টা, অস্ট্রিয়া ও সুইডেনও শান্তির জন্য অংশীদারত্বে অংশ নিতে প্রস্তুত। যেহেতু পার্টনারশিপ ফর পিস স্পষ্টতই একটি প্রতিরক্ষা জোট নয় এবং এখানে সহায়তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই, তাই এটি নিরপেক্ষতার সঙ্গে আপস করে না। সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড ন্যাটোর সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্টভাবে জড়িত হতে চায়, সেক্ষেত্রে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়া ছাড়া নতুন কোন পথ দেখছে না।

সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, অচিরেই ওই দুই দেশকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো জোটে যোগদানের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ন্যাটো জোটের বিস্তারের মাধ্যমে ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।

গত সপ্তাহে ব্রাসেলসে জোটের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠকে চলতি বছরেই সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। অবাক হবার কিছু নেই যদি রাত পোহালে শুনি রাশিয়া ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকেও আক্রমণ করেছে!

গোটা বিশ্বে একটি জিনিষ লক্ষণীয় সেটা হচ্ছে পুতিনের মত একনায়কতন্ত্র ক্ষমতাশীল রাষ্ট্র প্রধানদের আবির্ভাব। এদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এরা গণতন্ত্রকে ফাঁকি দিয়ে নোংরা রাজনীতি শুরু করছে।এখন নতুন করে ঢালাই করতে হবে বিশ্ব রাজনীতিকে। সবার উচিত হবে বিশ্ব রাজনীতিতে নোংরামি না চড়িয়ে নিজ নিজ দেশের সমস্যা সমাধান করা। পৃথিবীর মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চায়। হোক না সে বাংলাদেশি বা আমেরিকান তাতে কিছু যায় আসেনা।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

নোংরা রাজনীতিই পৃথিবীর অশান্তি মুক্তমত রহমান মৃধা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর