Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনগণের সেবকরাই যখন জনগণের ভোগান্তির কারণ

রহমান মৃধা
২৩ এপ্রিল ২০২২ ১৭:২৮

সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রবাসীদের সঞ্চিত সম্পদের উপর শতভাগ দায়িত্ব পালন করবে এবং কোনরকম সমস্যা হলে সক্রিয়ভাবে তার সমাধানে কোনোরকম গাফিলতি করবে না। জমির মালিক দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার ফলে মালিকের জমিটি নিচের বর্ণনা অনুযায়ী সরকারের নামে পরচা কাটা হয়েছে। প্রবাসী বিষয়টি জানতে পেরে তার জেলার ডিসি মহাদয়কে চিঠি লিখে জানিয়েছে। ডিসিকে ফোন করেছে কয়েকবার এবং ডিসি বারবারই পুনরায় ফোন করতে বলেছেন। কারণ চিঠিখানা ডিসি মহাদয়ের পড়ার সময়টুকু এখন পর্যন্ত হয়নি।

বিজ্ঞাপন

শেষবার ফোন করলে একই উত্তর- চিঠি পড়া হয়নি। তবে সঠিক তথ্য না জেনেই ডিসি মহাদয় ভিকটিমকে দুটি শর্ত দিয়েছেন-

শর্ত ১ : ডিসির নামে কেস করতে হবে

শর্ত ২ : ডিসিকে কিছু অর্থ দিয়ে জমিটি কিনে নিতে হবে, এর ফলে জমি ভোগ করা যাবে তবে কোনোদিন বিক্রি করতে পারবেন না।

ভিকটিম শুধু প্রশ্ন করেছেন, জমি আমার, দখলে গেল আপনার, এখন নতুন করে কিনবো, তারপরও বিক্রি করতে পারবো না, বিষয়টি কেমন হয়ে গেল না? এটাই কি তাহলে শতভাগ দায়িত্ব পালন এবং প্রতিশ্রুতি?

এখন প্রশ্ন হতে পারে দেশে যেখানে প্রতিদিন হাজারও খুন, দুর্নীতি, রাহাজানি, হয়রানি, ধর্ষণ হচ্ছে অথচ বিচার পাবার সুযোগ নেই সেখানে এটা কি কোনো ঘটনা হলো? আমি মনে করি এটাই বড় ঘটনা কারণ আমরা যদি একজন ডিসির মতো দায়িত্বশীল প্রশাসক থেকে এমনটি আচরণ পাই তাহলে ভাবুন সাধারণ প্রশাসনের অবস্থা। ভাত রান্না করার পর সব ভাত টিপে দেখা লাগে না দুই একটা দেখলেই বোঝা যায় ভাত সিদ্ধ হলো কিনা!

ইদানীং আর্মি প্রশাসনের অনেকেই চাকুরিচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছে। বিদেশে বসে দেদারছে দেশের বদনাম রটাতে উঠেপড়ে লেগেছে। ভাবখানা এই তারা বিরাট ক্ষমতার অধিকারী এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সব খবরই রাখে। অন্যদিকে যখনই প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন বা অবসরে যাচ্ছেন তৎক্ষণাৎ যেকোনো ব্যক্তিমালিকানার অধীনে চাকরি নিয়ে দেশের সম্পদকে লুটপাট করে মালিককে দুর্নীতিগ্রস্ত করছে এবং নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী করছে।কয়েকদিন আগে একটি খবরে দেখলাম ঠিকাদার নাসির উদ্দিন হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে রূপালি এবং অগ্রণী ব্যাংক থেকে। নাসির উদ্দিনকে যারা সাহায্য করেছে এসব অপকর্মে, তারা অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার। দেশের টাকায় দীর্ঘদিন ধরে যাদেরকে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেশকে বহিঃশত্রু এবং অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য, তারাই এসব দুর্নীতিতে জড়িত। এমনকি এরাই জাতির পিতাকে পর্যন্ত খুন করেছে। দেশকে সম্পূর্ণভাবে রসাতলের দিকে নিতে সবধরণের চেষ্টা চলছে। এটা একটি অপ্রিয় সত্য কথা। শুনলে কেউই খুশি হবে না তাই এসব কথা বলা বা লেখা যাবে না। এ বিষয়গুলো কিন্তু জনগণের প্রতিনিধিদের নজরে পড়ছে তবে তারা কিছু করছে না। কারণ তারাও তো নানাভাবে লুটপাট করছে। যদি সত্যিকারার্থে জনগণের প্রতিনিধি থাকতো তবে এমনটি হতো না। লক্ষ লক্ষ ইন্নোসেন্ট জনগণের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে অথচ তাদের সাথে বেঈমানি? আমরা বেশিরভাগ সময় রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করি কিন্তু কখনও কি ভেবেছি যারা দেশের সঙ্গে বেশি বেঈমানি করছে তারা সর্বকালের সুবিধাবাদি সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তা? সময় এসেছে এদের উপর তদন্ত করা, খুটিয়ে দেখা এদের ইনকামের সোর্স।অন্যদিকে কিছু কিছু মৌলভিদের অত্যাচারে দেশে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইচ্ছা মতো হাদিসের দোহাই দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা থেকে শুরু করে সারাক্ষণ মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকানোই বর্তমানে তাদের প্রধান কাজ হয়েছে। সারাক্ষণ কী করতে হবে, কী না করতে হবে, শুধু এসব কথাই বলা হচ্ছে অথচ করা হচ্ছে না তার কিছুই। ধর্মের মূলমন্ত্র যেটা সেটা কেউ করছে না সবাই শুধু বলছে এটা কর সেটা কর ইত্যাদি। বলার মানুষের অভাব নেই দেশে, অভাব কেবল করার মানুষের। ফেসবুক খুললেই আজাব এবং গজবের কথা ছাড়া অন্য কিছু শুনি না। অথচ প্রতিদিন, প্রতিঘণ্টা, প্রতি মিনিট, প্রতি সেকেন্ড, প্রতি মুহূর্ত আল্লাহ পাক রাব্বুল আলআমিনের রহমতে বেঁচে আছি। সেটা কি যথেষ্ট নয় যে আল্লাহ রহমানের রাহিম আমাদের ভালোবাসেন! বেঁচে থাকাটাই যে বড় আশীর্বাদ তাকি এখনও বোধগম্য হয়নি আমাদের? ভয়, আতঙ্কের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা বা সিজদা করা এ কেমন ধর্ম প্রচার? বন্ধ করা হোক জালেমদের এসব ভন্ডামি। আল্লাহকে ভালেবাসতে চাই, তার নির্দেশ আনন্দের সঙ্গে পালন করতে চাই, তাঁর রহমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই মন থেকে, দোজখে যাবার ভয়ে নয়। পৃথিবীর নিয়মকানুনের সঙ্গে আধ্যাত্বিক নিয়মকানুনকে মেশানোর ফলে আমরা পথভ্রষ্ট হতে চলেছি। ইসলাম, আল্লাহ, রাসুল এবং ইসলামের সঠিক মর্যাদা ধরে রাখতে হলে ওয়াজ নয়, জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অন্যকে হেদায়েত করার ধান্ধাবাজি ছেড়ে নিজে হেদায়েত হোন, সমাজের জন্য ভালো কিছু করুন, কোরআনের নিয়মানুযায়ী চলুন, যদি সত্যকার ভাবে আল্লাহকে ভালোবাসেন। দোহাই, হাজার হাজার মানুষকে জড় করে ইসলামের নামে অশান্তি তৈরি করবেন না। খুব হয়েছে এবার ক্ষান্ত হোন।যদি সমাজের জন্য সত্যিই কিছু করতে চান তবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ তৈরি করতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন। কাজ করুন, খাজনা দিন, ধর্ষণ বন্ধ করুন, দুর্নীতি মুক্ত থাকুন, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করুন। যেমন সরকার সফল নাকি বিফল, এর বিচারের মালিক দেশের জনগণ। আর জনগণ তা পাশ্চাত্যে যেমন বিচার করে ভোটাধিকারের ম্যাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে জনগণের ভোট সরকারের পক্ষে যাবে না বলেই সরকার জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। কারণ সরকার সত্য জানতে ভয় পায় আর সেই জন্যেই জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। যেখানে ভোটের অধিকার নেই, সেখানে গনতন্ত্র থাকে কিভাবে? কিন্তু এর জবাবদিহিতা নেই বলে জনগণ সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত। যে সরকার জনগণের মনের ভাষা বুঝেনা, সে সরকার জনগনের সরকার হয় কীভাবে? এসব বিয়য়ে পারলে ওয়াজ করুন। আল্লার দোহাই লাগে ভয় এবং আতঙ্ক দেখিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা থেকে বিরত থাকুন। ভয় নয় ভালোবাসা হোক আল্লাহ পাক রাব্বুল আলআমিনকে স্মরণ করার মূলমন্ত্র। তাঁর নাম লয়ে চন্দ্র-তারা অসীম শূন্যে বিরাজমান। রবি হতে গ্রহে ঝরছে তাঁর করুণা এবং ভালোবাসা। সেগুলোকে ভালোবাসা দিয়েই শুধু অনুভব করতে হবে, কারণ ভালোবাসায় রয়েছে শুধু ভালোবাসা।

এ ছিল কিছু অপ্রিয় সত্য যা উপরে তুলে ধরেছি, বুঝতে সহজ হবে কেন হেডিংএ লিখেছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই দেশকে রসাতলে নিচ্ছেন। জনগণের সেবকরাই যখন জনগণের ভোগান্তির কারণ হচ্ছেন।

দেশের আইনে ফাঁক থাকায় বেআইনই আইনের হাত ধরে চলছে, তারপরও কিছু বলা বা লেখা যাবে না। কিছুদিন আগে দেখলাম সংসদে আইনমন্ত্রী ঠিক মত কথা বলতে পারছেন না, পরে বল্লেন তাকে পানি খাইয়ে দিয়েছে। সংসদে এ ধরণের ঘটনা অথচ কিছু বলা যাবে না! পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা প্রশাসনে চলছে অনিয়ম। কিছু বলা বা লেখা যাবে না। অপ্রিয় সত্যকে তুলে ধরা যাবে না। দুর্নীতি হবে কিন্তু কিছু বলা যাবে না। মৌলভীদের ধর্মের উপর নানা ধরণের বিশ্লেষণ এবং দ্বিমত সত্ত্বেও কিছু বলা যাবে না। সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না। সংবাদপত্রগুলো সত্য খবর প্রকাশ করতে পারবে না। করলে প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাবে। এমনটি ধারণা জনগণের সত্ত্বেও রাষ্ট্র চলছে তার গতিতে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

জনগণের সেবকরাই যখন জনগণের ভোগান্তির কারণ মুক্তমত রহমান মৃধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর