Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানি সংকট, কেন?

মো. শাহিন আলম
২৫ এপ্রিল ২০২২ ১৭:১৩

পানি সংকটের অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত বৃক্ষায়ন। যা আমাদের পরিবেশ এবং প্রকৃতি উভয়কেই ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে দাড় করিয়েছে। কোন জায়গার জন্য কোন বৃক্ষ রোপন করা প্রয়োজন এ বিষয়টি আমাদের জানা খুবই দরকার। যেমন বন্যা প্লাবিত অঞ্চলে সেগুন গাছ লাগানো যেতে পারে। যার শিকড় অনেক শক্ত এবং অধিক মাত্রায় পানি শোষন করে। তেমনি উচু অঞ্চলে গামারি, অর্জুন, চাপালিশ, তেলশুর, শাল, গর্জনের মতো গাছ লাগানো যেতে পারে। যা পরিবেশের জন্য ভালো, কম পানি শোষণ করে, উন্নত মানের কাঠ পাওয়া যায়, পরিবেশ এবং বাস্তু-সংস্থানের ক্ষতি করে না, কৃষকের ফসল নষ্ট করে না, শ্বাসকষ্ট এবং এলার্জির মতো রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শোনা যায়-ইতিপূর্বে দু-তলা কাঠের ঘর, নৌকা ইত্যাদি বানানোর জন্য বিখ্যাত কাঠ ছিলো গামারি গাছের কাঠ। যে গাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আমাদের যেসব গাছ গুলোর জন্য আজ আমরা পানি শূণ্যতায় ভুগছি । সেসব গাছগুলো হলো-

১. ইউক্যালিপ্টাস-যা অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে। এ গাছ সারাদিনে যে পরিমাণ পানি শোষন করে সে পরিমান পানি দিয়ে অন্য ১০০টি গাছ বাচতে পারবে। এ গাছ পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এরা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণের বিপরতে ত্যাগ করে। যা বায়ুমন্ডলে গিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। এ গাছের পাতা অনেক বিষাক্ত। যে মাটিতে পড়ে সে মাটির উর্বরতা ক্ষমতা কমে যায়। কোন জমিতে এক কালীন এ গাছের চারা আবাদ করলে পরবর্তীতে অন্য আবাদে সে জমিতে ফসলের পরিমান এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়।

২. রেইনট্রি-এ গাছ এমন পানি খায় যেন সারাদিন একটি পানির পাম্প চালু রাখলে এ গাছ পানি শোষন করতেই থাকবে। তাছাড়া এটি একটি রাক্ষুসে গাছ। অন্য গাছ কে বড় হতে দেয় না। অনেক জায়গা নিয়ে বড় হয়। পাতা প্লাস্টিকের মতো পচনশীল নয়। জমির উর্বরতা নষ্ট করে। এ পাতায় গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এ গাছের পাতা পুকুরে পড়লে কিছুদিন পর মাছ মরে যায়। গাছ বড় হতে অনেক সময় নেয়। এক গাছ দশ গাছের জায়গা খায়। ভিটেমাটি-জমিজমা নষ্ট করে।

৩. মেহগনি-ফল অনেক বিষাক্ত। এ গাছের ফল দিয়ে কীটনাশক তৈরি করা যেতে পারে। যে মাটিতে এ ফল পড়ে সে মাটির গুনাগুন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এর পাতা প্লাস্টিকের মতো। এতোটাই বিষাক্ত যে ছাগল-গরুও খায় নাহ। পাতার বিষক্রিয়ায় বাস্তুসংস্থানের কবর রচিত হচ্ছে সারা দেশে।

৪. শিশু- এ গাছের সাথে প্রকৃতি ও মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। যা অতিমাত্রায় ক্ষতিকর আমাদের পরিবেশের জন্য।

৫. একাশিয়া-এটি অধিক ক্ষতিকর একটি গাছ। যা আমাদের পরিবেশ ও বায়ুমন্ডলের জন্য অনেক ঝুকিপূর্ণ। এর ফুলের রেনু মানুষের এলার্জির অনুঘটক। অনেক পানি শোষন করে। এর পাতা বিষক্রিয়া ছড়ায়। এ গাছের নিচে ঘাস বা অন্য কোন উদ্ভিদ জন্মায় না। এর পাতা পচনশীল প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ সময়ের। কাঠ নিম্ন-মানের। ফসলের আবাদ নষ্ট করে করে। অল্প ঝড়েই ভেঙ্গে যায়। এ গাছে অনেক বিষাক্ত পোকা জন্ম নেয়।

বিজ্ঞাপন

এ পাঁচ প্রকারের গাছ বিদেশীজাতের। যা অধিকমাত্রায় পানি শোষন করে। এ গাছ গুলোর জন্য আমরা পানি পাচ্ছি না। সারাদেশে মানুষ এ গাছ গুলো এতো পরিমানে লাগিয়েছে যে ভূগর্বের পানির স্তর নিচে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আর পানি পাবো নাহ। যা অন্যন্য দেশে ঘটছে। তাছাড়া এ গাছ আমাদের প্রকৃতি-পরিবেশের সাথে যায় নাহ। এ বিষাক্ত গাছ গুলো আমাদের পবিত্র মাটি কে দূষিত করেছে। যে মাটিতে সোনা ফলানো যেত সে মাটি আজ দূষিত গাছের সংস্পর্শে এসে উর্বরতা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এ জাতের গাছ যদি আমরা রোপন করা বন্ধ না করি আমাদের দেশ এবং ভূমন্ডলের ক্ষতি হতেই থাকবে। এ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার একার না আপনাদের সবার। পৃথিবীর আর কিছু দিন বাচার সুযোগ দিন। এভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েন না। এ দেশ আমার এ দেশ আপনার। চলুন সবাই মিলে আমরা সবুজ দেশ গড়ি। এ গাছ গুলোকে প্রত্যক্ষান করি। আমাদের মাটির গাছ লাগাই।

সুতরাং আসুন আমরা সুপরিকল্পিত ভাবে গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই। বিদেশী জাতের আগ্রাসী গাছ লাগানো থেকে বিরত থাকি। দেশ ও দশের ভালোর স্বার্থে কাজ করি এবং নিজের লোভের জন্য দেশকে ধ্বংস না করি।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পানি সংকটে ভুগছে। কিন্তু কেন? মুক্তমত মো.শাহিন আলম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর