Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানুষকে বাঁচাতে ইনভেস্ট, ধ্বংসেও ইনভেস্ট

রহমান মৃধা
১৫ জুন ২০২২ ১৬:১৩

বর্তমান বিশ্বে যে সমস্যাগুলো মানুষের সৃষ্টি তার ধারাবাহিকতা নতুন সমস্যার বীজ বপন করে চলছে। যুদ্ধের অবসান এক প্রান্তে হলেও শুরু হচ্ছে অন্য প্রান্তে। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো তাদের অতীতের অস্ত্র বর্তমান যুদ্ধে ব্যবহার করছে নতুন অস্ত্র তৈরির জন্য। একটি দেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে আবার নতুন করে গড়বে বলে। ক্যাপিটালিস্টরা এভাবেই তাদের ইনভেস্ট করে থাকে। একদিকে মানুষের জীবন বাঁচাতে ইনভেস্ট চলছে, অন্যদিকে মানুষকে ধ্বংস করার জন্যেও পুঁজিবাদির পুজিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এই এক চমৎকার বিশ্বে আমাদের বসবাস।

বিজ্ঞাপন

শুধু বাংলাদেশের বিষয়টি যদি লক্ষ করা হয়, এ বছরে শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। ১০০ বেশি জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে শুধু অগ্নিকাণ্ডে। তারপর গুম, খুন, মহামারি এসবতো লেগেই আছে। এতকিছুর পরও জরিপে দেখা যাচ্ছে বেঁচে থাকার তাগিদে কোটি কোটি মানুষ কঠিন জীবনযাপন করে চলছে। গতকাল সুইডিশ একটি টেলিভিশন বিশ্ব শরনার্থীর ওপর জরিপের সূত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বর্তমান বিশ্বে দশ কোটি শরণার্থী আছেন। যাদের এই অবস্থার পেছেনে আছে ইতিহাস, ক্ষতি এবং কষ্টের গল্প।

বিজ্ঞাপন

এই মুহূর্তে বিশ্বে ১০০ মিলিয়ন মানুষ সংঘাত ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে শরণার্থী হয়ে নিজ, পার্শ্ববর্তী বা অন্যদেশে বিরাজ করছে। চিত্রটি ইউক্রেনের যুদ্ধ দ্বারা চালিত জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) ১৬ জুন, ২০২২ আপডেট পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এই ১০০ কোটির মধ্যে ৫০.৯ মিলিয়ন তাদের নিজের দেশে পালিয়ে আছেন। ২৬.৬ মিলিয়ন অন্য দেশে চলে গেছেন। ৪.৪ মিলিয়ন আশ্রয়প্রার্থী তাদের আবেদনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে। ৪.১ মিলিয়ন ভেনেজুয়েলারা উদ্বাস্তু না হয়ে বা আশ্রয় না পেয়ে তাদের নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইউএনএইচসিআরের মতে, ২০২০ সালে তুরস্কে ৩.৭ মিলিয়ন শরণার্থী ছিলো। দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়োজক দেশ ছিলো কলম্বিয়া, যেখানে ২০২০ সালে ১.৭ মিলিয়ন শরণার্থী ছিলো। তারপরে পাকিস্তান এবং উগান্ডা প্রতিটিতে ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থী নিয়ে আসে, এর পরে জার্মানি ১.২ মিলিয়ন উদ্বাস্তু। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তু বলতে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তুদের বোঝানো হয়ে থাকে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিগত তিন দশক ধরে মায়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থান করছে। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া, ভারতের হায়দ্রাবাদের রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ফলে মায়ানমারের মতো তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনটি দেখে অনেক ভাবনা ঢুকেছে বিবেকে, সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৪১–এ নামিয়ে এনেছে প্রশাসন।

সড়ক দুর্ঘটনার আগে সড়কের অবস্থা, গাড়ির ফিটনেস, চালকের দক্ষতা আর অগ্নিকান্ডের আগে সেফটি রুটিন, রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম এসবের উপর চড়া নজরদারি থাকা কি জরুরী নয়? দেশে জনগণ তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, এটাই সত্য। এই সত্যকে কীভাবে দুর করা যায় দুর্নীতি ছাড়া তার জন্য কাজ করা দরকার। সেই কাজগুলো করার লোক থাকা সত্ত্বেও তা করা হচ্ছে না। যারা বেতনভুক্ত তদারককারী তারা দেখছে অথচ কিছু করছে না। আমরা যারা বিষয়টি তুলে ধরছি জানি কিছু হবে না তবুও তুলে ধরছি কিন্তু কেও সেটার গুরুত্ব দিচ্ছে না, এভাবেই মূলত চলছে গোটা দেশ। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের অবস্থা একই তবে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে এ মুহুর্তে আমেরিকার হুমকি ছাড়া রাষ্ট্র কিছুই করতে রাজি নয়, এই কারণটি বুঝতে পারছিনা কোনোভাবেই! দেশের মালিক তাহলে কি অন্য কেউ, আমরা ছাড়া!

এত কিছুর পরও বাংলাদেশে মানবতার টানে ছুটে আসছে ও নেগেটিভ রক্তদাতা একজন শারীরিক অক্ষম, নাম মোহাম্মদ সায়মন আহমেদ। যে কিনা নিজে চলাফেরা করতে অক্ষম সে-ও আসছে মানবতার টানে। হ্যাঁ এই সমাজ, এই দেশ এবং এই বিশ্ব কখনো হারবে না। জয় হবে মানুষের, জয় হবে মানবতার।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

মানুষকে বাঁচাতে ইনভেস্ট ধ্বংসেও ইনভেস্ট মুক্তমত রহমান মৃধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর