Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারবিরোধীদের দেশবিরোধী অপপ্রচার

তাজিন মাবুদ ইমন
৮ আগস্ট ২০২২ ১৪:৩৪

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ১০৮ দশমিক ৫৫ মার্কিন ডলার। আর প্রতি ব্যারেল অকটেন বিক্রি হয় ১০৮ দশমিক ৪ ডলারে। মার্চে ডিজেলের সেই দাম বেড়ে ১৩৭ দশমিক ৫৪ ডলারে গিয়ে ঠেকে। আর অকটেনের দাম গিয়ে পৌঁছায় ১২৭ দশমিক ৩৬ ডলারে। এপ্রিলে প্রতি ব্যারেল ডিজেল ছিল ১৪৪ দশমিক ৬৮ ডলার আর অকটেন ১২২ দশমিক ৬১ ডলার। মে মাসে ডিজেল ছিল ১৪৭ দশমিক ৭০ মার্কিন ডলার প্রতি ব্যারেল এবং অকটেন ১৪০ দশমিক ৯৬ ডলার। জুনে ডিজেলের দাম বেড়ে ১৭০ দশমিক ৭৭ ডলার স্পর্শ করে। গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল ও অকটেনের দাম দিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইউরোপ ও আমেরিকার মত উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি ব্যাপক চাপে পড়ে খোদ খনিজ সম্পদে ভরপুর দেশ সৌদি আরবও। উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোর ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ ফাঁকা হয়ে আসে তেল আমদানি করতে গিয়ে। এর উদাহরণ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। আর এই ইস্যুকে পুঁজি বানিয়ে দেশবিরোধী অপশক্তি সরকারবিরোধী নোংরা অপপ্রচারে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত চক্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, গুজব ছড়াচ্ছে এবং মিথ্যা কথা বলছে। বাংলাদেশবিরোধী অধিকাংশ প্রচারণা দেশের ভেতর থেকে নয়, বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। বিদেশিদের কাছে দেশবিরোধী অপপ্রচার চালানো না হলে দেশ আরো এগিয়ে যেতো।

দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের একজন সাবেক দুইবারের প্রধানমন্ত্রী নিজের নামে ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছেন, যাতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে জিএসপি সুবিধা দিয়ে আসছিল, তা যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল যারা দুইবার ক্ষমতায় ছিল, সেই দলের মহাসচিব নিজের দলের প্যাডে নিজে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশকে সাহায্য দেয়ার বিষয়টি পুণর্মূল্যায়ণ করতে এবং সেটিকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।

আমাদের দেশে রাজনীতি থাকবে, অবশ্যই সরকারের সমালোচনা হবে, কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য অপপ্রচার কখনো কাম্য নয়, সেটি দেশদ্রোহিতার শামিল।

বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রক বা প্রভাব বিস্তারকারী কোন দেশ না। বরং বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতেই ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা’। বৈশ্বিক এমন বিরূপ বাস্তবতায় সব দেশই তার অর্থনীতিকে ধরে রাখতে বিভিন্ন পলিসি গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সংকোচন ও বিয়োজন করে রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কোনো কোনো দেশকে আবার নির্ভর করতে হচ্ছে আইএমএফ’র ঋণ সহায়তার ওপর। বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলায় এসবই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পলিসির অংশ— এটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হতে হয় না।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপরে স্থিতিশীল রেখে সব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রাখতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে জনগণের ভোগান্তি হবে— এটা জনগণের প্রতি আজীবন সংবেদনশীল নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা ভালো করেই জানেন। এ জন্যই তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে শেষ অবধি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। জানা গেছে, গত ছয় মাসে জ্বালানি খাতে সরকারকে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।

একজন সুদক্ষ সরকারকে শুধু বর্তমানের দিকে তাকালে হয় না। ভবিষ্যৎও পড়তে হয়। আর ভবিষ্যৎ পথের অন্ধকার দূর করতেই জনগণের বিরূপ মনোভাব হবে জেনেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। আর এই সিদ্ধান্ত এসেছে দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই।

আইএমএফের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট–পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি খুবই সাহসী ও কঠিন সিদ্ধান্ত। এই দাম বাড়ার কারণে অর্থনীতিতে প্রাথমিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও আগামী ছয় মাস পর এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে।

মানুষের অনেক কষ্ট হবে। সুযোগ বুঝে অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে জনগণের ওপর এর কু-প্রভাব অনেক বেশি মাত্রায় পড়বে। দিনমজুর-শ্রমিক থেকে শুরু করে নিম্ন বেতনের সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী অর্থাৎ গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের আয়ের মানুষ সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ের দূরত্ব চালিয়ে নিতে হিমশিম খাবে। এর তিক্ত ফল একজন মধ্যবিত্ত হিসেবে আমাকেও ভোগ করতে হবে। তারপরও আমি মনে করি, প্রতারণার চেয়ে এটা ভালো। অথৈ সাগরে পড়ে হাবুডুবু খাওয়ার চেয়ে একটু কষ্ট করে কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দেওয়াই উত্তম।

বিশ্বে মহামারি হবে, যুদ্ধ হবে, আর আমাদের কোনো আঁচড় লাগবে না— এটা মনে করা বোকামি। এমন কোনো জাদুকাঠি বিশ্বের কোনো সরকারের হাতেই নেই। আর এই সুযোগ বুঝে যেসব রাজনৈতিক দল মিথ্যা প্রচারণা করছেন তারা মূলত দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। মূলা-কলা দেখিয়ে লাভ হবে না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি, দেশের মানুষ এসব প্রতারণা ভালো করেই বুঝে।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

তাজিন মাবুদ ইমন মুক্তমত সরকারবিরোধীদের দেশবিরোধী অপপ্রচার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর