Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উপমহাদেশের সংগ্রামী শুদ্ধ পুরুষের নাম শেখ মুজিব

অনয় কুমার ঘোষ
১৮ আগস্ট ২০২২ ১৭:০০

ইতিহাসের বিজয়মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে এমন নেতা পৃথিবীতে খুব কম’ই আছে। যাদের সংগ্রাম আর ত্যাগ-তিতিক্ষা একটি জাতিকে অধিকার সচেতন করে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে তাদের মধ্যে অনন্য সাধারন একজন যথার্থ চিন্তার মানুষ বাঙলার জনমানুষের কবি, ইতিহাসের বরপুত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে যে নতুন এক স্বাধীন সীমারেখা আঁকা হয়েছিলো তার শিল্পী ছিলেন আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু মুজিব। ১৭৫৭ সালে ঐতিহাসিক পলাশীর প্রান্তরে বাঙালীর যে অধিকার সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো বাঙ্গলার স্বাধীন শেষ নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে। ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সেই সূর্য উদিত হয়েছিলো বাঙ্গলার খোকার আবির্ভাবের মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন অধিকার সচেতন আর পরোপকারী ভাবনার মানসপুত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অধিকার সচেতনতা, শৈল্পিক মননশীলতা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষনতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার পরিচয় পাই তার শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের সংগ্রামময় ইতিহাসের স্মৃতি রোমন্থনে।

ছাত্রজীবনেই রাজনীতির খাতেখড়ি তরুণ মুজিবের। যার দর্শন ছিলো মানুষকে ভালোবাসা। নির্যাতিত, নিপীড়িত জনতার কন্ঠস্বরকে ধারন করা। দুঃস্থ অসহায় মানুষের ভরসার ঠিকানা হয়ে উঠেন অল্প বয়সে। এজন্য প্রতিবেশীরা ভালোবেসে ডাকতো ‘মিয়াভাই’ বলে। ছাত্রজীবনেই উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শের-এ বাংলা এ. কে ফজলুল হক’র সংস্পর্শে এসে সক্রিয় হয়ে উঠেন রাজনীতিতে।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ছাত্রলীগ গঠন, আওয়ামী মুসলিমলীগ গঠন ও যুগ্ন সাধারন সম্পাদক পদ পান, পরবর্তীতে সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি হন। দেশভাগের পরপরই শুরু হয় আরেক অধ্যায়ের। তৎকালীণ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অবর্ণনীয় অত্যাচার নির্যাতন যখন চরম মাত্রায় পৌছায় পিতা মুজিব তখনই বাঙ্গালীর অধিকার বোধহীন আত্মাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা জারি রাখেন।

বিজ্ঞাপন

৫২ সালের শহীদের রক্তখচিত বর্ণমালা, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালে বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ছয় দফা প্রস্তাব করেন। ঊনসত্তরের গনঅভ্যত্থান ও সত্তরের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয় নামক যে অধ্যায়গুলো রচিত হয় বাঙ্গালীর অর্জনের ইতিহাসের সোনালী পাতায় তার একমাত্র রচয়িতা উপমহাদেশের সবচাইতে সংগ্রামী শুদ্ধ পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। নির্বাচনে জয়লাভের পরেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা ছাড়তে নানা গড়িমসি শুরু করেন।এবং বাঙালীর উপর অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।

নির্যাতিত, নিপীড়িত ও পরাধীন বাঙ্গালী যখন মুক্তির জন্যে দিশেহারা তখনই দেবদূতের মতো গৌরবময় ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বঙ্গবন্ধু মুজিব।১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেইসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষন দিয়ে সাত কোটি মানুষকে নিয়ে আসেন একই মোহনায়।বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন। তার এই ভাষন পুরো জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে।

২৫শে মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর চালায় পৃথিবীর ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সে রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। গ্রেফতারের আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা রেকর্ডারে রেকর্ড করে যান এবং স্বাধীনতা পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী সরকারের পরিকল্পনা দিয়ে যান। সেই অনুযায়ী অস্থায়ী সরকার গঠনা করা হয় তার অনুপস্থিতিতে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় স্বাধীন বাংলার প্রথম অস্থায়ী সরকার।

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ত্রিশ লক্ষ দেশপ্রেমিক প্রাণ ও দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। শেষ হয় বাঙ্গালীর ২৫ বছরের অত্যাচার, নির্যাতন আর কষ্টের নির্মম অধ্যায়। বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনের এই বড় অর্জনের পিছনে রয়েছে যে আপোষহীন শুদ্ধ পুরুষের ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের ১২ বছরের অধিক সময়ের কারাবন্দী জীবন।তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর জাতীয়তাবাদ এর মতো মহামন্ত্র উচ্চারন করে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন ও স্বনির্ভর জাতি হিসেবে যে দেশটির উত্থান তার নাম বাংলাদেশ।আর পিতা মুজিব হয়ে উঠেন আমাদের চেতনা ও অস্তিত্বের আরেক নাম।

৭২ সালে পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশে ফেরেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষও বরন করে নেয় ইতিহাসের বিজয়মালা গলায় পরিয়ে। স্বাধীন জাতিকে উপহার দেন সাম্য আর মৈত্রীর স্বরূপ সংবিধান। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর দেশকে গড়ে তোলার জন্য সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেন।তার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি,জাতিসংঘের সদস্য পদলাভ, ওআইসি’র সদস্য হওয়ার জন্য কুটনীতিক তৎপরতা চালিয়ে সফল হন জাতির জনক।
সদ্য জন্ম নেওয়া দেশকে শ্মশান বাংলা থেকে সোনার বাংলায় পরিনত করতে সকলের সহযোগীতা নিয়ে কাজ শুরু করেন আমাদের তেজোদ্দীপ্ত মহাপুরুষ শেখ মুজিব। রাজনৈতিক মুক্তির পর অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনেও অনেকটা এগিয়ে যান।৭৪ সালে আমাদের জিডিপি গ্রোথ ছিলো ৯.৫৭%। যা স্বাধীনতা উত্তর কোনো সরকার অর্জন করতে পারে নি।

শুরু হলো নতুন এক পথচলা যার নেতৃত্বে ছিলেন আমাদের জাতির জনক। ঠিক তখনই ঘটে বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসের নির্মম ও বেদনাবিধুর এক মর্মান্তিক হত্যাকান্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে পবিত্র আজানের ধ্বনিকে বিদীর্ন করে ঘাতকের ঝাক ঝাক গুলি।সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা শেখ মুজিব। সেদিন আবারো বাঙ্গালীর অধিকার সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো। যার নেপথ্যে ছিলো এদেশরই কিছু পাকিস্তানি প্রেতাত্মা, ক্ষমতালোভী নরপিশাচ। এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জুড়ে দেওয়া হয় অমুছনীয় এক কৃষ্ণদাগ। আর আমাদের মানচিত্রের বুকে চাপিয়ে দেওয়া হয় ভারী বোঝা। যা আমরা এখনো বয়ে চলছি।

ঘাতকদের ঔদ্ধত রক্তচক্ষু বাঙ্গালী জাতিকে সেদিন কাঁদতে দেয় নি। তবে বাঙ্গলার প্রতিটি ঘর থেকে এসেছিলো চাপা দীর্ঘশ্বাস। মানুষের চোখের জল সেদিন প্রকৃতির কান্না হয়ে ঝরেছিলো। শুরু হলো বাংলাদেশের অন্ধকার যুগ। খুনিরা ক্ষমতায় বসে দেশকে পরিচালনা করে পাকিস্তানী ভাবধারায়।

খুনিরা এখানেই খান্ত হয় নি। পিতা হত্যার কলঙ্ককে আরো বেশি কলঙ্কিত করে খুনি জিয়া ও মোস্তাক গং কর্তৃক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।পিতা হত্যার বিচার চাইতে পারবে না কেউ। এমন কালো আইন লিপিবদ্ধ করা হয় পিতার দেওয়া সংবিধানে।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫। সেদিন বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। পুরো পরিবারকে হারিয়ে পাগলপ্রায় দুই কন্যার জীবনে নেমে আসে এক নির্মম অধ্যায়। বিভিন্ন দেশঘুরে শেষে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ইচ্ছায় ভারতে আশ্রয় নেন। পিতার স্বাধীন করা দেশে আসতে দেয় নি পিতার খুনি জিয়াউর রহমান।

দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে আসেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। পিতাকে হারিয়ে পুরো অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি দেশে এক চিলতে আলোর ঝলকানি হয়ে আসেন বঙ্গকন্যা। ফিরে আসার দিনে এয়ারপোর্ট থেকে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লাখ লাখ জনতা তাকে স্বাগত জানায় অশ্রুসিক্ত চোখে। সেদিন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিলো। আর স্লোগান দেওয়া হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই,আমরা আছি লাখো ভাই।’

সেই স্লোগানই ছিলো শেখ হাসিনার শক্তি। পরিবার হারানোর শোককে পরিনত করেন শক্তিতে। আর এই বাঙালীর জাতিকেই করে নেন তার সবচাইতে আপনজন। তাদের মাঝেই খুজে ফিরেন পিতা, মাতা, ভাই ও স্বজনদের। তাকে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার ও পিতার খুনিদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে হয়েছে। রাষ্ট্র কর্তৃক পুরষ্কৃত করা হয় পিতার খুনিদের।

শেখ হাসিনা পিতা হত্যার বিচার এবং বাঙ্গলীর ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সংগ্রাম জারি রাখেন। ছুটে চলেন বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। পিতার মতো কন্যার পথটাও ছিলো কণ্টকাকীর্ণ। খুনিচক্র বঙ্গকন্যাকেও হত্যার প্রচেষ্টা চালায় একুশবার। সকল প্রকার অশুভ শক্তির বুকে পা রেখে শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেন প্রগতির পথে।

বাঙ্গলার আপামর জনতা শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে ৯৬ সালে রাষ্ট্রের স্টিয়ারিং তার হাতে তুলে দেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে পিতা হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করা সহ নানা গনমুখী পরিকল্পনা গ্রহন করে ভূয়সী প্রশংসা কুড়ান বঙ্গকন্যা। ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু থেমে থাকে নি। জাতির সাথে প্রতারণা করে ২০০১ সালের নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় বসে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্যজোট।

ক্ষমতায় বসে প্রথমেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্য বন্ধ করে। তারপর একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রীত্ব দিয়ে তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়। আবারো বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনা ও সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে লালন-পালন করা হয়। জোট সরকারের আমলে অসহনীয় মাত্রার দুর্নীতির কারনে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়। যা আমাদের জন্য লজ্জার ও ঘৃণার।

২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ক্ষমতায় বসে। সেই থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সমৃদ্ধির ঐশর্য্যে পথচলা শুরু।

পিতার কর্তৃক রাজনৈতিক মুক্তি পাওয়া দেশকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে শেখ হাসিনা অঙ্গিকারে অবিচল। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি আজ আমরা।

বিশ্বের বুকে আজ আমরা স্বাধীন স্বনির্ভর জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছি। বাঙালী জাতির যত মহতী অর্জন তার শুদ্ধ নাম শেখ মুজিবুর রহমান।

পরিশেষে কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের ভাষায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা ও কুর্নিশ জানাই
‘যত দূরে যাও পাখি, দেখা হবে ফের;
স্বাধীন ঐ আকাশটা শেখ মুজিবের।’

লেখক: কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক, ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ছাত্রলীগ

সারাবাংলা/এসএসএ/এএসজি

অনয় কুমার ঘোষ উপমহাদেশের সংগ্রামী শুদ্ধ পুরুষের নাম শেখ মুজিব মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর