Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সত্য ও সুন্দর প্রতিষ্ঠা হোক সবখানে

রাজন ভট্টাচার্য
১৯ আগস্ট ২০২২ ১৭:১৩

দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্য স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথিকে ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়। এবার যখন জন্মষ্টমী পালন করা হচ্ছে তখন গোটা পৃথিবী মহামারি করোনায় আক্রান্ত। চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়নশিল দেশগুলো। এ যুদ্ধের শেষ কোথায় কেউ জানে না। দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। উৎপাদন কমে যাওয়ায় দিন দিন দেশে দেশে খাদ্য সহ নানা সংকট প্রকট হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কোভিডের কারণে আর্থিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই আরেক মহামারি ‘যুদ্ধ’ শুরু। বিশ্বনেতারাও টের পাচ্ছে এই যুদ্ধ গোটা পৃথিবীতে অশান্তির মূল কারণ। তবুও আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বার্থে সংকট সমাধানে এগিয়ে আসছে না। বাংলাদেশেও যুদ্ধ আর করোনা মহামারির বিরুপ প্রভাব বেশ পড়েছে। সবে ক্ষেত্রেই লেগেছে বড় রকমের ধাক্কা।

পরিস্থিতি সামলে ওঠতে কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে সরকার। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হয়েছে। বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ব্যয়ের হ্রাস টানতে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। রাত আটটার পর সারাদেশে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি প্রকল্পে চলছে কাঁটছাট। অপ্রয়োজনে বিদেশে সরকারি সফরে লাগাম টানা হয়েছে। নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদনে সরকার সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যামের মূল্যবৃদ্ধির কথাও শোনা যাচ্ছে নতুন করে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন প্রবাহে বড় রকমের ধাক্কা আসবে।

অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো রেমিটেন্স, গার্মেন্টস সেক্টর ও কৃষি। বিশ্বঅর্থনৈতিক মহামন্দার মধ্যে দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ কমেছে। গার্মেন্টস সেক্টরও নানামুখি সংকটের মধ্যে। বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে কৃষি উৎপাদন সচল থাকলেও খাদ্যে এখনও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। অর্থাৎ মূল খাদ্যশস্য চালের সংকট থাকায় আমদানি করতে হয়। অনেক দেশ এখন আগের মতো চাল আমদানিতে উদার নয়। সব মিলিয়ে এখন গ্রামীণ অর্থনীতি জাতীয় অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা পালন করছে।

বিজ্ঞাপন

লাফিয়ে লাফিয়ে ডলারের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির খেসারতও বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আবারো সবকিছুর দাম বেড়েছে। নতুন করে আগুন লেগেছে ডিম, কাঁচামরিচ, ভোজ্যতেলের বাজারে। চালের বাজারে অস্থিরতা কোনভাবেই সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সঞ্চয় ভেঙে চলছে মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টির টান পড়ছে!

এটি বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও সরকারকে হাল ছাড়লে চলবে না। যে কোন মূল্যে সাধারণ মানুষের জীবন প্রবাহের নাভিশ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে হবে। এটা দাবি নয়, নাগরিক অধিকার।

কথা হলো চলমান এই সংকটের কী কোন সমাধান নেই? ইংল্যান্ডের অর্থনীতিবীদ টমাস রবার্ট ম্যালথাস পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তার দেয়া জনসংখ্যা তত্তে¡র মূল বক্তব্য ছিল, জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধির হার স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রকৃতি তার নিয়ন্ত্রণ শক্তি তুলে নেয়।

তার এই মতবাদের আলোকে বলতে চাই, অস্বাভাবিক সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে প্রকৃতির নিয়মে নিয়ন্ত্রণ হতে বাধ্য। গোটা পৃথিবীকে মানুষ অশান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এর বিরুপ ফলাফল চলছে। মহামারি এসেছে। হয়ত বড় কোন অঘটনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধও থামবে। থামবে অস্ত্রের মহড়া। পারমানবিক অস্ত্রের উৎপাদন কমবে। বেঁচে থাকার জন্য দেশে দেশে মানুষকে কর্মের যুদ্ধে নামতে হবে।

হিন্দু পুরান মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের মাঝে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন।

শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৮ কিংবা ২১ জুলাই, মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম পুত্র তিনি।
সমগ্র ভারতবর্ষে যখন হানাহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, রাজ্যলোভে রাজন্যবর্গের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ তথা পৃথিবী যখন মর্মাহত, পাশে অবনত, ঠিক সেই সৃষ্টি স্থিতি-প্রলয়ের যুগ সন্ধিক্ষণে অনিবার্য হয়ে পড়ে কৃষ্ণের আবির্ভাব। তার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে সবকিছু শান্ত হয়।

সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষ্ণের আবির্ভাব উৎসব পালন করলেও তিনি তো সবার জন্যই। গোটা পৃথিবীজুড়ে আজ মহা অশান্তি চলছে। নানা সংকটের মুখে বিশ্ব। অভাব আর নিরাপত্তাহীনতা অযুহাতে দেশে দেশে বাড়ছে শরনার্থীর সংখ্যা। করোনা মহামারির মধ্যে খাদ্য সংকট বড় রকমের বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে আজকের দিনে প্রার্থনা একটাই শ্রীকৃষ্ণ কঠোর হাতে দুষ্টের দমন করবেন। শান্তির জন্য ভালো মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখবেন মহাকাল। সমস্ত, অন্যায়, অত্যাচার, দুঃশাসন, সন্ত্রাস আর দুর্নীতি সহ পাপাচার থেকে মানুষকে মুক্ত করে আনবেন।

দুনিয়াজুড়ে যে অন্ধকারময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আলোয় ভরে উঠবে। বিশ্ব শান্তি ফিরিয়ে দিবেন। মাঠ ভড়ে ফসল উৎপাদন হবে। কেটে যাবে সব রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। থেমে যাবে যুদ্ধ। মুক্তি দিবেন মহামারি থেকে। আবারো শান্ত হবে পৃথিবী। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবেন সবখানে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

রাজন ভট্টাচার্য সত্য ও সুন্দর প্রতিষ্ঠা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর