সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্ট করা হোক
২৭ আগস্ট ২০২২ ১৭:১৮
আগস্ট শোক, বেদনা ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর মাস। হারানোর শোকে কাতর, নিস্তব্ধ, মর্মাহত না হয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজ পরিবার এবং সোনার বাংলা বিনির্মাণে এক সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই এবং সেটা হতে পারে নানাভাবে।
রাজনীতি করি মানে দুর্নীতি বা কুনীতি করতে হবে তা নয়, রাজনীতি অর্থ সেবা দেওয়া এবং সেটা জনগণের জন্য হতে হবে। জনগণ যাকে এ দায়িত্ব দিবে তাকেই সেটা পালন করতে হবে। একজন সত্যিকারের রাজনীতিবিদের কাছে রাজনীতি একটি পেশা এবং সেবা দেয়ার নেশা। তার মধ্যে থাকবে প্যাশন বা গভীর আবেগ। দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা এবং অনুপাত-সম্পর্কিত জ্ঞান।
রাজনৈতিক নেতার সামনে একটি ‘কারণ’ থাকতে হবে। তাকে শুধু ক্ষমতার জন্য বুভুক্ষু থাকলে হবে না। একজন রাজনৈতিক নেতার থাকতে হবে নৈতিক মেরুদণ্ড এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা। এর সঙ্গে যখন বিচার করার যোগ্যতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা যুক্ত হবে, তখনই একজন রাজনৈতিক নেতা ইতিহাসের চাকার দিক পরিবর্তনের সক্ষমতা অর্জন করবেন।
মহৎ উদ্দেশে রাজনৈতিক নেতা হবেন বাস্তববাদী। এই কৌশলে দারিদ্র্য হ্রাসে, মানব উন্নয়নে, টেকসই বিনিয়োগে, নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি থাকবেন সদা সচেষ্ট। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহনশীলতা ও বিজ্ঞান সচেতন করে জনগণকে গড়ে তুলতে সব ধরনের সু-শিক্ষামূলক পদক্ষেপ নিবেন, যাতে করে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার’।
আমাদের সমাজে তথা বাংলাদেশে রাজনীতি বাপ-দাদা, চৌদ্দ-গোষ্ঠীর পৈতৃক সম্পদে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি হয়েছে কাইন্ড অফ হেভি ইনভেস্টমেন্ট ইন্সটিটিউশন, যেখানে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে পদবি দখল করার প্রবণতা (যেকোনো মূল্যে)। তারপর চলছে শাসন এবং শোষণ। রাজনীতিতে ইনভেস্ট করবো আর আয় করবো না?
যদি দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঠিক চর্চা হতো, যদি সুশিক্ষা এবং নৈতিকতা (moral value) বলে কিছু থাকত, তবে গণতন্ত্রের পতন হতো বলে মনে হয় না। এখন যদি সত্যিকারে গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাক্টিস শুরু করতে হয় তবে প্রথমত জানতে হবে রাজনীতি কী। দ্বিতীয়ত সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরো অনেক মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক শুভাকাঙ্ক্ষীরা যে বিব্রত, সেটা সংবাদপত্র আর সামাজিক মাধ্যমে দৃষ্টি দিলে সহজেই বোঝা যায়। বর্তমান দেশের মন্ত্রীদের কথাবার্তা শোনার পর মনে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে একটি নতুন আইন পাশ করা। পাশ্চাত্যে লক্ষণীয় যে, হঠাৎ করে পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ যেকোনো নাগরিকের গাড়ি থামিয়ে মাদক পরীক্ষা করে এই কারণে যেন কেউ মাদকাসক্ত হয়ে কোন ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়। কিছুদিন আগে যেমন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিনের মাদক পরীক্ষা করা হয়েছে। মারিনের প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। নমুনায় কোকেন, অ্যামফেটামিনেস, গাঁজা এবং ওপিওডসের উপস্থিতি আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয় এবং তার ফলাফলে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে ‘সামথিং ইজ রং’, সে ক্ষেত্রে এমন একটি সিদ্ধান্তের আশু প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। আলোচনার পাশাপাশি হয়েছেন সমালোচিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, ভারত সরকারকে সেটা করার অনুরোধ করেছেন। এমন বক্তব্য একটি স্বাধীন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো দূরের কথা, সাধারণ নাগরিকও দিতে পারেন না। নাগরিকের রাষ্ট্রে বসবাস করে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, পালন এবং প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও তিনি জানেন কিনা সন্দেহ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ আজকের না, বহু আগের। বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দেওয়ার সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিবিদরাই গড়ে তুলেছেন। রাজনীতিকরা ক্ষমতার জন্য জনগণের ওপর না, মূলত নির্ভর করেছেন বিদেশি শক্তির ওপর। বিগত ৫১ বছরে দেশের ভেতর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করে দুর্বল করে নিজেরাই জলাঞ্জলি দিয়েছে নিজেদের মর্যাদা।
মানসিকভাবে নেতাকর্মীদেরও পঙ্গু করে ফেলেছে নিজেদের অজান্তেই রাজনৈতিক দলগুলো। গণতন্ত্রের জন্য তাই রাজপথে রক্ত এখন আর কেউই দিতে চায় না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পুঁথিগত জ্ঞানের ঝুলিতে অনেক কিছুই আছে। পিএইচডি করেছেন অর্থনীতি ও ব্যবসায়ে প্রশাসনের ওপর। সৌদি আরবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্টের উপদেষ্টা হয়ে কাজ করেছেন কয়েক বছর। ম্যাসাচুসেটসের ফ্রেমিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন কয়েক বছর। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন ২০০৯ থেকে। বড় ভাই সদ্যপ্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের রাজনৈতিক জীবনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আব্দুল মোমেন। কিন্তু সুশিক্ষার যেমন অভাব রয়েছে তেমন অভাব রয়েছে ভারসাম্যের।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশের নীতি-আদর্শ, দেশপ্রেম, রাষ্ট্র ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধহীন রাজনীতি চর্চার প্রতীক। বাংলাদেশের ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলের মূল নেতৃত্বকে বুঝতে হবে, রাজনীতি করতে হলে রাজনীতিবিদ প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় আদর্শ এবং সেই আদর্শের চর্চা। তা না হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে নিজের সমস্যার সমাধান পরের কাছেই খুঁজবে।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজ দলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘এটা সরকার বা দলের বক্তব্য নয়। তাঁর বক্তব্যে ভারতও লজ্জা পাবে।’ স্পষ্টতই দলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি ওবায়দুল কাদের। আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়েছে আমাদের নেত্রী এ ব্যাপারে কী বলেছেন বা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন!
লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
মুক্তমত রহমান মৃধা সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্ট করা হোক