Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হকারমুক্ত রাজধানীর জন্যে হকার পুনর্বাসন করুন

উম্মে কুলসুম কাইফা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:৪০

আমরা জানি, ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক ঢাকা নগরী বেড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে। এই অপরিকল্পিতভাবে ভাবে বেড়ে ওঠা নগরীকে ২০৪১সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর রূপরেখা নিয়ে কাজ করছে সরকার। তাই ঢাকাকে যুগোপযোগী আধুনিক এবং রাজধানীর ভেতর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যে হকারমুক্ত নগরী করা প্রয়োজন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কমবেশি হকার রয়েছে এবং উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশেই হকার নিয়ম মেনে ব্যবসা করে। অথচ আমাদের দেশের হকাররা কোনো নিয়ম মানে না। তারা ফুটপাত রাস্তা দখল করে যার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে চলে হকার উচ্ছেদ অভিযান এবং সম্প্রতি আবারো ডিএনসিসি হকার উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানী ঢাকা হলো বসবাসের জন্য অযোগ্য শহর যা বিভিন্ন বৈশ্বিক জরিপে উঠে এসেছে। ঢাকার যানজটের কথা আমরা প্রত্যেকেই জানি এবং এ যানজট সৃষ্টির জন্য হকারদের দায়ী হচ্ছে। কিন্তু যানজট সৃষ্টির জন্যে যে শুধু তারা দায়ী বিষয়টা ঠিক না। ঢাকার যানজটের প্রধান কারণ হলো রাস্তার সংকট। তবে এটাও সত্য, সাধারণত হকাররাই ফুটপাতগুলো দখল করে রাখে। এ জন্য ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত রাখা দরকার।

রাজধানীর ভিতর যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থনীতির জন্যে জরুরি কিন্তু ঢাকার বেশির ভাগ ফুটপাত হকারদের দখলে ফলে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। হকাররা ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে, যারফলে যাতায়াতের যথেষ্ট সমস্যা হয় পথচারীর। রাস্তা-ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় এর চরম মূল্য দিচ্ছেন সাধারণ নগরবাসী। যানজটের কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে স্কুলে যেতে পারে না। চাকরিজীবীরা যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারছেন না। আর ফুটপাতে স্বাভাবিক হেঁটে চলার তো কোনো উপায়ই নেই।

রাজধানীতে হকার বা ফেরিওয়ালা অতি পরিচিত মুখ। এখনো আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। তাদের বাঁচতে হয় সংগ্রাম করে সাধ্যের মধ্যে তাদের সাধ পূরণ করতে হয়। কেননা নামি দামি দোকানগুলো থেকে পণ্য কেনার সামর্থ্য তাদের থাকে না। তখন তাদের একমাত্র ভরসা হকার বা ফুটপাতে যারা পন্য বিক্রি করে। বিভিন্ন কাজে যাতায়াতের সময় মধ্যবিত্ত শ্রেণী পথ চলতে প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিস কেনাকাটা করেন ফুটপাত থেকে। কম টাকায় নিজেদের পছন্দ মত জিনিস ক্রয় করতে পারে জনসাধারণ ও তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে পেট চলে সেই সব হকারদের। তাদের দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় না বলে পণ্যের মূল্যের ওপর তার প্রভাব পড়ে না। ফলে এ উচ্চমূল্যের বাজারে ও নিম্নমধ্যবিত্তরা কেনাকাটার জন্য হকারদের ওপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে রয়েছে জনগণের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত অর্থনীতির বিকাশ সাধন। রাস্তায় আমরা অল্প বয়সের কিশোর হকাররা গলায় বাক্স বা ট্রে ঝুলিয়ে বিভিন্ন জিনিস ফেরি করে। যে বয়সে তাদের হাতে থাকার কথা বই খাতা সে বয়সে তুলে নিয়েছে একটি সংসারে দায়িত্ব যার ফলে তার পরিচয় ছাত্র না হয়ে হকার হয়েছে। হকাররা যা করে তা তাদের বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা এবং দেশের অর্থনীতির অংশ।

আমাদের রাষ্ট্র বিভিন্ন কারণে এখনো সবার কর্মসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি । বেকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতেই তারা আজ হকার। খুব ভালো জীবনযাপন করার সাধ্য নেই তাদের। মাঝে মাঝে আধপেটা, আবার কখনো কখনো, না খেয়েও দিন কাটাতে হয় তাদের। রাজধানী দখলমুক্ত ও যানজটমুক্ত হোক এটা সবারই চাওয়া কিন্তু যারা হকারি করছে তারাও এদেশের নাগরিক তাদের ও বাঁচার অধিকার আছে। তাদের পূনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা অমানবিক এবং জোর করে উঠিয়ে দেওয়া কোনসমাধান নয়। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ১৯৫২ সালে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৯ সালেও বাস্তবায়ন করা হয় দুটি প্রকল্প। এ ছাড়াও হকারদের পুনর্বাসনের জন্যে মার্কেট করা হচ্ছে কিন্তু সে স্থানে হকারদের মার্কেট পুনর্বাসন করা হয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই খালি হওয়া স্থান গুলোতে দ্বিগুন হকার জোগাড় হয়। চাঁদাতোলা বন্ধ না হলে পুনর্বাসন করলেও হকারদের কোন উপকার হবে না। হকারদের জন্যে বরাদ্দকৃত দোকানগুলো বেশিরভাগ প্রভাবশালীরা বরাদ্দ পাই। আবার হাকররা সালামির টাকা জমা না দিতে পেরে বরাদ্দের কাগজগুলো বিক্রি করে দেন ফলে ছিন্নমূল হকাররা দোকানের প্রকৃত মালিক হতে পারেন না। যার ফলে পুনর্বাসন করেও তাদের উপকার হয়নি ।

বেকারত্ব নিরসন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে হকারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছিন্নমূল এসব মানুষকে যদি ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয় তবে তাদের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কলকাতার মতো একটি বৃহৎ নগরীকে সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে হকার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। আমাদের দেশে দ্রুত নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার সংস্কৃতি নেই। তাই আমরা অবহেলিত হকার শ্রেণীর জন্যে নীতিমালা প্রণয়ন ও পুনর্বাসন করতে পারছি না। উচ্ছেদকৃত হকারদের পুনর্বাসন জন্যে মার্কেট করা হলেও সবাইকে দোকান দেওয়ার সম্ভব হয় না কারণ প্রচুর হকার্স করার মতো স্থান ও অর্থ আমাদের নেই। রাজধানীতে কোন লোক জীবিকার জন্যে এসে যেন হকারি করতে না হয় অর্থাৎ নতুন হকারের সংখা যেন বৃদ্ধি না পায়- এ জন্যে দেশজুড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। গরিব হকারদের সমস্যার সমাধান না করে উচ্ছেদের সময় যেভাবে লাঠিপেটা করা হয় তা মানবাধিকার লঙ্ঘন।

হকারদের পেশা অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির মধ্যে পরে। এখানে সরকারকে কোন রকম কর দিতে হয়না। সরকার যদি হকারপুনর্বাসন নিশ্চিত করে তাদের সেই অনানুষ্ঠানিক কাজগুলোকে অর্থাৎ হকারদের জীবিকার বিষয়টি আইনি সুরক্ষা দেন তাহলে হকারদের অধিকার রক্ষা হবে ও রাজধানীতে হকার নিয়ন্ত্রণ হবে এবং খুব দ্রুতই আমরা নতুন রূপে রাজধানীকে দেখতে পাবো।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

উম্মে কুলসুম কাইফা মুক্তমত হকারমুক্ত রাজধানীর জন্যে হকার পুনর্বাসন করুন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কোস্ট গার্ডের নতুন ডিজি জিয়াউল হক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩২

সম্পর্কিত খবর