সোস্যাল মিডিয়ার আসক্তি থেকে দূরে থাকুন
২৭ অক্টোবর ২০২২ ১৪:৫২
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী এখন মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ফলে যে কোনো কাজ একজন মানুষ খুব সহজে এবং স্বল্প সময়ে করতে পারে। মানুষের জীবনে হ্রাস পেয়েছে কায়িক শ্রম। কিন্তু বৃদ্ধি পেয়েছে বেকারত্ব এবং অলস জীবন। কারণ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধু বান্ধব ও আত্নীয়দের সাথে যোগাযোগ করা গেলেও মানুষ বিনোদনের জন্য অনেক আসক্ত হয়ে গেছে। যেমন, অযথা ফেসবুক স্ক্রলিং, ফেসবুকে ফানি ভিডিও, ইউটিউব দেখা ইত্যাদি। আর এই আসক্তিতে যুব সমাজ বেশি জড়িয়ে আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর অন্যরা ল্যাপটপ ব্যবহার করে। তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া এখন গ্রামীণ জনপদে পৌঁছে গেছে। কিন্তু এই সুযোগে স্কুল, কলেজগামী শিশুরা অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে গেছে। এতে তারা কোনো কাজ ঠিক মতো করে না। এখন শিশুদের কাছে থাকবে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কলম। কিন্তু অনলাইন গেম খেলে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। গ্রামের মানুষ সাধারণত মোবাইল ফোনের ডাটা ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
কিন্তু শহরে মানুষের মাঝে পৌঁছে গেছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে তারা ব্রড়ব্যান্ড, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। আর এখন যে কেউ সুযোগ পেলেই বাড়িতে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় করে। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির আগে মানুষ অনেক সাহিত্য চর্চা করতো। কিন্তু তা এখন বিরল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ ফেসবুকে সময় ব্যয় করে। আর অন্যরা টুইটার, হোয়াট আপ, ইমো, স্কাইপি, ইউটিউব, ই মেইল প্রভৃতিতে সময় ব্যয় করে। কিন্তু এটি তো সময় ব্যয় করার জন্য আবিষ্কার হয় নি। বরং বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজে যোগাযোগ করার জন্য আবিষ্কার হয়। তবে প্রত্যকে মানুষ সময় ব্যয় করার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর যারা অন্যের সাথে যোগাযোগ করে, তারা মূলত বন্ধুবান্ধব, আত্নীয়, পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে। অনেক মানুষ আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সদ্ব্যবহার করে। তারা তাদের সৃজনশীলতা মানুষের কাছে শেয়ার করে। ফলে যে কেউ খুব সহজে দেখতে পারে। তাছাড়া এখন ঘরে বসে বিশ্বের সব জনপ্রিয় সিনেমা দেখা যায়। ইউটিউব হচ্ছে বিনোদনের সেরা মাধ্যম। এখানে বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত সিনেমা সার্চ দিলেই পাওয়া যায়। ফলে সিনেমা দেখার জন্য হলে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটার ঝামেলায় পড়তে হয় না।
সাধারণত দিনের বেলা মানুষ নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই সন্ধ্যা বেলা সবচেয়ে বেশি মানুষ অনলাইনে থাকে। কিন্তু যুব সমাজ দিনে রাতে সময় ব্যয় করে থাকে। তারা স্মার্টফোন হাতে নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে। এমনকি প্রতি দিনে তারা ১২-১৪ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করে। তবে অধিকাংশ মানুষ ফেসবুক বেশি ব্যবহার করে। আর অন্যান্য সাইটে প্রয়োজন না হলে যায় না। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশি। তারা রাতে ঠিকমতো ঘুম পড়ে না। সারা রাত ফোনে সময় কাটিয়ে দিনের বেলা ঘুম পড়ে। দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করার ফলে অনেকে অনিদ্রায় ভোগে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাহলে এই শিশুর কাছে থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী আশা করে?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে রেড়িও। এখন পরিবারের সবাই একসাথে বসে আর খবর শুনে না। কোনো দরকার না হলে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। কেউ আর টিভিতে প্রচারিত খবর, কার্টুন, সিনেমা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখে না। তারা এখন টিকটক করে। যা থেকে কিছুই শেখার নেই। বরং এটি বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর স্মৃতি শক্তি কমে যাচ্ছে। পড়াশোনায় অনীহা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া সারাদিন শুয়ে বসে ফোন ব্যবহারের ফলে নানা শারীরিক ও মানসিক অবসাদে ভোগে। হঠাৎ করে তারা রেগে যায় এবং মেজাজ খিটখিটে হয়। মাঝে মাঝে অনেক সাইট থেকে ব্লাকমেইলের শিকার হয়। অনেক সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ে। হ্যাকার লিংক শেয়ার করে, তা থেকে ব্রাউজ করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এতে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যায়। হ্যাকার তখন হুমকি দেয়, পাসওয়ার্ড হ্যাক করে, বাজে কমেন্ট করে। এমনকি অনেক মানুষ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর শিকারও হয়েছে।
আর এই অপরাধে যুব সমাজ বেশি জড়িয়ে পড়ে। কারণ তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস বেশি করে। তারা এনড্রয়েড ফোন বেশি ব্যবহার করে। কিন্তু সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে কিছুই জানে না। কিন্তু এটা একটা প্রতারণার ফাঁদ। বর্তমান সমাজ ডিজিটাল গতিতে চলছে। ফলে প্রযুক্তিগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ বিনোদন ও যোগাযোগ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেছে নেয়। আর ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি জনপ্রিয় মাধ্যম। কিন্তু এর মাধ্যমে হ্যাকাররা অনেক তথ্য চুরি করে। একজন ব্যবহার সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলে তারা বেশি সুযোগ পায়। তাই সকলের উচিত সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন হওয়া। কারো ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে অনেক অপরাধ করে থাকে। কিন্তু অপরাধী হিসেবে ব্যবহারকারী হলেও সে নিজেই কোনো অপরাধ করে না। বরং তার তথ্য নিয়ে অন্য কেউ অপরাধ করে। এই কথা যখন ব্যবহারকারী জানতে পারে সে মানসিক অবসাদে ভোগে। এর প্রধান কারণ হলো এই ক্রাইম সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনের ব্যবহার করে যুব সমাজ। প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন ও জ্ঞান পারে সাইবার ক্রাইম কমাতে। কারণ এই অপরাধের শিকার হয় প্রযুক্তিগত বিষয়ে অজ্ঞ ব্যক্তি। তাছাড়া সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। যেমন ফেক আইডি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিতে পারে। ব্যবহারকারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া। এটি একটি বর্তমান সময়ের বড় একটা সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাজ করা শুধু সরকারের পক্ষে সম্ভব না। এগিয়ে আসতে হবে এনজিও ও অন্যান্য সংস্থার।আর পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে এবং তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তাহলে সাইবার ক্রাইম কমবে।
কিন্তু এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শিক্ষা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন করেছে। এখন যে কোনো বিষয় ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে পাওয়া যায়। ফলে বাড়তি টাকা খরচ করে বই কিনতে হয় না। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা পায়। কারণ বৃক্ষ থেকে কাগজ তৈরি করা হয়। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে পড়াশোনা ঠিক মতো হয় না। পিডিএফ ফাইল থেকে পড়তে গিয়ে কেউ অনলাইনে ব্রাউজ করে। সর্বোপরি, এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে সময় ব্যয় বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পড়াশোনায় মন বসে না। শিক্ষার্থীরা এত আসক্ত হয়ে গেছে যে ক্লাস টাইমে তারা অনলাইনে প্রবেশ করে। সুতরাং, প্রত্যেক মানুষের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারে আসক্তি না হয়ে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
মুক্তমত মোঃ আবদুল্লাহ আলমামুন সোস্যাল মিডিয়ার আসক্তি থেকে দূরে থাকুন