বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও ব্যাটিং ব্যার্থতায় বিশ্বকাপ শেষ টাইগারদের
৭ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৩১
টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট মানেই রানের খেলা, আক্রমণাত্বক খেলা। এখানে ব্যাটিং আক্রমণটাই প্রধান। এবারের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই মানের ব্যাটিং দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। সেটা এবারের বিশ্বকাপ না বলে সববারের কথাই বলা যায়। মূলতঃ কোনো কালেই বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি ব্যাটিং ভালো ছিলো না। মাঝে মাঝে হঠাৎ এক-দুটো ম্যাচ জ্বলে উঠে আমাদের ব্যাটাররা।
কিন্তু এরপরেও বাংলাদেশ টি-টুয়েন্টিতে ভালো ভালো জয় পায়। আর এটা আমাদের বোলিং ডিপার্টমেন্টের জন্য। যেদিন আমাদের বোলিংটা খারাপ হবে সেদিন ম্যাচটা হাত ফসকে চলে যায় এমনটা অনুমেয়। তাসকিন, মোস্তাফিজ, হাসান মাহমুদ, সাকিব এবং শেষ ম্যাচে নাসুম ও এবাদতও দারুণ বোলিং করেছেন। যার কারণে টার্গেট ১৪০ থেকে ১৫০ এর মধ্যে রাখলেও আশা করা যায় ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ। তাই এই বোলিং ডিপার্টমেন্টের উপর ভরসা রেখেই মূলতঃ বাংলাদেশ জয় পায়।
এই সিস্টেমটা যতদিন না পাল্টাবে আমাদের অবস্থা এমনই থাকবে। লিটন আর শান্ত দুজনই এবারের বিশ্বকাপে ধারাবাহিক পারফর্ম করেছে। যদিও শান্ত খেলেছে শান্ত মেজাজে। যেটা টি-টুয়েন্টি সুলভ বলাও মুশকিল। তবুও শান্ত রান করেছে এটা ভালো দিক। অন্যদিকে লিটন তার সেরাটা খেলেছে। যদিও সে ওপেনিং করেছে মাত্র দু-ম্যাচ।
এই ব্যাটিং ব্যার্থতায় ক্রিকেটারদের বড় একটা অংশ ছিলো। আফিফ, সাকিব, সৌম্য, মোসাদ্দেক, রাব্বি, সোহান এদের এই ব্যাটিং ব্যার্থতার দায় নিতে হবে। যতদিন এই ব্যার্থতা থেকে নিজেদের শুধরাতে পারবে না বাংলাদেশ, ততদিন টি-টুয়েন্টিতে এই দশা থাকবে।
বাংলাদেশ খারাপ খেলেছে এজন্য যেমন হেরেছে, তেমনি বাজে আম্পায়ারিং এবং অনিয়মও আছে। যা বাংলাদেশের সাথে ঘটেছে। এটাকে কেউ চাইলেও আড়াল করতে পারবে না। পরপর দুই ম্যাচে এমন ঘটনা নিশ্চয় কাকতালীয় নয়! ভারতের সাথে তো যাচ্ছেতাই হয়েছে। ফেক ফিল্ডিং, ভেজা আউটফিল্ড, বিরাটের মাঠে প্রভাব দেখানো সবই ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। এরপর পাকিস্তানের সাথেও একই সমস্যা। এবারও হলো বড়সড় চুরি। একদম পরিষ্কার নটআউটকে আউট বানিয়ে দেওয়া, সেটাও আবার রিভিউ নেওয়ার পরে! এই বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবে ম্যাচে প্রভাব পড়ে। সেটা কেউ স্বীকার করুক আর না করুক। সাকিব যখন নটআউট জেনেও আউট হয়ে ফিরে আসেন ড্রেসিং রুমে, সেটা নিশ্চই অন্যান্য ক্রিকেটারদেরও চাপে ফেলে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনেকে এখন এসবকে অজুহাত বলছে স্রেফ। অনেকে আবার বলছেন, পুরো বিশ্বকাপজুড়ে বাংলাদেশ খারাপ ক্রিকেট খেলেছে। তাদের উচিৎ বাংলাদেশের খেলা আর না দেখা। অযৌক্তিক সমালোচনা একধরনের অন্যায় এবং অপরাধ। বাংলাদেশ বিগত ১৫ বছর ধরে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে কোনো ম্যাচে জয় পায়নি। সেখানে ১৫ বছর পর একটা না একসাথে দুইটা ম্যাচ জয় পেয়েছে। সেইসাথে ভারতের সাথে জয়ের কাছাকাছি ছিলো। একধরনের ফাইট করেছে। এইসবের পরেও যারা বলেন যে বাংলাদেশ তবুও খারাপ খেলেছে তাদের উচিত আর খেলা না দেখা। কারণ তারা বিগত ১৫ বছরের মতো এবারও বাংলাদেশকে ব্লেইম দিয়ে যাচ্ছে। আজ সেমি ফাইনালে উঠলে সেখানে হারলেও এইসব কথা শুনতে হতো বাংলাদেশকে। বেশিদিন আগের কথা নয়, এশিয়া কাপে হারের পর অনেকেই আফগান্তিানের কাছে বাংলাদেশকে অনেক ছোট করেছেন। সেই তারাই এই বিশ্বকাপে একটা ম্যাচও জয় পায়নি।
বাংলাদেশের খেলা বিগত সব বিশ্বকাপের তুলনায় এবার অনেক অনেক বেশি ভালো হয়েছে। এরকারণটা আমি এবার খুঁজেছি এই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের দৌড়ে ঠিকে থাকার মাঝে। বিগত সব টুর্ণামেন্টে দেখা যেত বাংলাদেশ কনফার্ম বাদ। শেষ ম্যাচগুলো খেলতো আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করতে। কিন্তু এবারের শেষ ম্যাচ ছিলো সেমিফাইনালে পৌঁছানো। যদিও শেষ ম্যাচ হেরে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। একে তো সেমিফাইনালে যাওয়া হয়নি, আরেকটা হলো আগামী বিশ্বকাপে বাছাইপর্ব খেলতে হবে। যদিও বাছাইপর্ব থেকে নিজেদের যাচাই করে আসাটাই ভালো। যেমন নেদারল্যন্ড, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলংকা তাদের সেরাটা দিয়েছে।
তবে এবারের বিশ্বকাপে সমালোচনার জায়গায় আফিফ, সাকিব, সৌম্য, মোসাদ্দেক, রাব্বি, সোহান এরা থাকেব। সুযোগ পেয়েও বারবার তারা যেভাবে দলকে ডুবিয়েছে সেটা অপ্রত্যাশিত। এদের কারণেই বিশ্বকাপে আমাদের ভালোকিছু হলো না। সেইসাথে সাকিবও তার সেরাটা দিতে পারেনি। তাহলেও ভিন্ন কিছু হতো।
দিনশেষে প্রাপ্তির খাতাটও বড় আছে। অন্তত আমার কাছে বেশি। তাসকিন, মোস্তাফিজ, লিটন, শান্ত এরা অসাধারণ ও চমৎকার খেলেছে। এরা ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে বাংলাদেশ এগিয়ে যেত সময় লাগবে না।
সুতরাং আমি এসবকিছুর পরও এবারের বিশ্বকাপকে পজেটিভ ধরবো। আমি আগেই বলেছি টি-টুয়েন্টিতে আমরা শিশু। সেখান থেকে এক লাফে বড় হওয়া যায় না। আমরা নিজেরাও একলাফে বড় হইনি। সে জায়গা থেকে বাংলাদেশকে নিয়েও রাতারাতি স্বপ্ন দেখা উচিৎ নয়। যদিও আমরা খুবই আবেগপ্রবণ জাতি। আমাদের স্বপ্ন সবসময় আকাশ সম বড় থাকে। আমাদের প্রত্যাশা থাকে পাহাড়সম। একদিন সেই এভারেস্ট ক্রিকেটেও জয় হবে সেই প্রত্যাশা রাখি।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
আজহার মাহমুদ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও ব্যাটিং ব্যার্থতায় বিশ্বকাপ শেষ টাইগারদের মুক্তমত