সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা
১০ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৪৩
সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদ একটি ক্ষুদ্র এলাকার জনস্বার্থে নিয়োজিত প্রশাসন ব্যবস্থা। এটি কেন্দ্রিয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্থানীয় জনগণের মতামত প্রদান, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়ন করাই এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য।
একটি ইউনিয়নকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গেলে কিছু নিয়মতান্ত্রিকতা এবং কৌশলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাহলে ইউনিয়ন পরিষদে স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজ ইউয়নের পরিবেশ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে বলে আশা করা যায়।
একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আইনের শাসনের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করলে ইউনিয়নের প্রত্যেকটি কাজ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন করা সহজ হবে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে জনগণের মাঝে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করবে।
একটি ইউনিয়নের প্রধান নির্বাহী হল চেয়ারম্যান। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য চেয়ারম্যানের অনুমোদন দরকার হয়। একটি ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে যতগুলো ওয়ার্ড মেম্বার থাকে তাদের কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি উন্নয়ন মূলক কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে। একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইউনিয়নে কাবিখা এবং কাবিটা সহ প্রত্যেকটি উন্নয়ন মূলক কাজ জনগণ পর্যন্ত পৌঁছেছি কিনা সেটা নিশ্চিত করবে। প্রত্যেকটি প্রকল্পের সাথে জড়িত মেম্বার বা অন্যান্য সহোযোগিদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করবে।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে গ্রাম আদালতের প্রধান হিসেবে অনেক মামলা নিষ্পত্তি করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন চেয়ারম্যান ইউনিয়নে নিরপেক্ষ বিচার ব্যাবস্থা গড়ে তুলবে। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সমানভাবে সেবা প্রদান করবে। বর্তমানে দলীয় অপরাজনীতির কারণে বিচার ব্যাবস্থা বাধার সম্মূখীন হয়। ইউনিয়নের প্রত্যেকটি মানুষকে নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করতে হবে৷
একটি ইউনিয়নের প্রধান হিসেবে এলাকায় শান্তি – শৃঙ্খলা রক্ষা এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রতিরোধ করার জন্য চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে। এ ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট সহোযোগিতা চাইবে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রভাব থাকায় ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কাজ করে। ইউনিয়নের শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সমানভাবে বিচার করবে।
ইউনিয়নের অধিকাংশ নাগরিকদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করবে। দলীয় প্রভাবের কারণে এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ মূলক কর্মকাণ্ড দেখা যায়না। এতে একক এবং স্বৈরাচারী মনোভাব জন্মায়। জনগণের মাঝেও ভীতির সঞ্চার হয়। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ইউনিয়নের জনগণের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হল একজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা। বর্তমান সময়ে নেতা এবং জনগণের মাঝে বেশ দুরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। এই দুরত্বের কারণেই জনগণের মূল সমস্যা নেতারা চিহ্নিত করতে পারেনা। একজন চেয়ারম্যান ইউনিয়নের জনগণের সাথে সাধারণ ভাবে মিশে তাদের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করবে। কৃষি, পশু পালন এবং বনজ সম্পদ উন্নয়নের জন্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ রাখবে। চেয়ারম্যানের গণসংযোগ এর মূল উদ্দেশ্য হবে জনগণের সাথে মিশে তাদের সমস্যা উপলব্ধি করে সমাধানের চেষ্টা করা।
এরকম নিয়মতান্ত্রিকভাবে যদি একজন চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করে, তাহলে একটি ইউনিয়নে শান্তির পরিবেশ বিরাজ করবে। ইউনিয়ন হল স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। দেশকে উন্নত এবং আধুনিক করতে হলে ইউনিয়নকে সমৃদ্ধ করতে হবে।
একটি দেশ তখনই পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং আধুনিক দেশ হিসেবে পরিগনিত হবে যখন তার তৃণমূল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিরাজ করবে এবং আধুনিকায়ন হবে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকতে হবে। ইউনিয়নকে অত্যাধুনিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তুলতে হলে ইউনিয়নের যাবতীয় সমস্যা অত্যান্ত দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
মুক্তমত মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা