অনলাইন জুয়া, এক নীরব মহামারির নাম!
১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৮:২৩
বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, খুব শীঘ্রই এটা মহামারি আকার ধারণ করবে৷ করোনা মহামারিসহ শারীরিক অসুস্থতাজনিত যত মহামারী আছে সবকিছু নির্মূলে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ থাকলেও অনলাইন জুয়া নামক মহামারী নির্মূলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের কোন মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না।
পরিবারকে ব্যক্তি এবং সমাজজীবনে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং আদর্শ সংগঠন বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে, এই পরিবার তার আদরের সন্তানকে জুয়া খেলাত অনুপ্রাণিত করছে৷ করোনা মহামারীর আগে থেকেই অনলাইন জুয়ার রমরমা খেলা শুরু হয়েছে। পূর্বে এটা শহর পর্যায়ে থাকলেও করোনা মহামারির সময়ে এটা গ্রাম এমনকি দূর্গম গ্রামেও ছড়িয়ে পরে।
বর্তমানে অনেক গ্রামে কিশোর থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ অনেকেই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। অনেক কিশোর অনলাইন জুয়ার কারনে পড়াশোনা বাদ দিয়েছে৷ অনেকেই কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে এই খেলায় আসক্ত হয়েছে। অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে একসাথে কয়েকজন মিলে এই অনলাইন জুয়ায় অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, অনলাইন জুয়ার এই আসরে প্রথম পর্যায়ে কেউ কেউ লাভবান হয়ে পরবর্তীতে লোভে পরে সর্বস্ব খুইয়েছে। অনেক অনলাইন জুয়ারি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে গেছে। পরিবার চাইলে এই জুয়া নামক মহামারী থেকে সমাজকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু অনেকে পরিবার সামান্য কিছু টাকার ঝলকানি দেখে তার সন্তানকে জুয়া খেলায় উদ্বুদ্ধ করে।
অনেক স্ত্রী আশেপাশের জুয়ারিদের কর্মকাণ্ড দেখে তার স্বামীকেও কর্ম বাদ দিয়ে জুয়া খেলার দিকে ধাবিত করে। উপরে উল্লিখিত দু’একটা উদাহরণ এই সমাজের কিছু কুৎসিত এবং পথভ্রষ্ট পরিবারের। যারা লোভের কারণে নীতি বিসর্জন দিয়ে অবৈধ উপার্জনকে স্বাভাবিক মনে করে।
সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রিধারী এক চাকরিপ্রার্থী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে- ”আমার এলাকার যুবকেরা মোটামুটি সবাই অনলাইনে জুয়ার ডলার বেচাকেনা বা ঐ টাইপের ব্যাবসার সাথে জড়িত। তারা মাসে একটা বড় অংকের টাকা ইনকামও করে। এমতাবস্থায়, আমার মত যারা দু’একজন পড়াশোনা করছে, তাদের সাথে বাড়ির লোকজন ভাল আচরণ করছে না। ডাইরেক্টলি বা ইন্ডাইরেক্টলি মানসিক চাপ দিচ্ছে। যদিও বুঝাইছি ওটা অবৈধ কাজ, যখন তখন পুলিশি মামলা হতে পারে, তবুও তারা বুঝতে চায় না। বলে যে, মামলা হলে ওরা দিব্যি ঘুরে বেড়ায় কিভাবে?”
এই যুবক যদি পরিবারের চাপে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে বা জুয়ার ভবিষ্যৎ ফলস্বরূপ কোন বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পরে তখন বাস্তবতাটা কেমন হবে? জুয়া নামক এই আত্মঘাতী মহামারীতে জড়িয়ে যাওয়ার পিছনে শুধু ব্যাক্তির ইচ্ছাই কাজ করেনা। অনেকসময় পরিবারও সামান্য টাকার লোভ সামলাতে না পেরে পরিবারের সদস্যকে জুয়া খেলায় অনুপ্রাণিত করে।
অনলাইন জুয়া বাস্তব জুয়া খেলার মত নয়। এটি একটি সুক্ষ্ম ফাঁদও বলা যায়। এই ফাদে যে একবার আটকা পড়ে, সে স্বাভাবিকভাবে আর বের হতে পারেনা। ভিন্ন একটি জগতের মধ্যে আটকে যায়। প্রথম পর্যায়ে লাখ টাকার লোভ সামল দিতে না পেরে পরবর্তীতে সমুদয় সম্মত্তি বিক্রি করেও অনেকে জুয়া খেলে।
করোনা মহামারির পরে দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারির সংখ্যা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। আর এই স্মার্টফোন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সবাই ইতিবাচকভাবে ব্যবহার বাদ দিয়ে নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করছে।
দেশ থেকে অনলাইন নামক জুয়ার কালো থাবা দূর করতে সামাজিকভাবে সবাইকে সংঘবদ্ধ হতে হবে। জুয়ার নেতিবাচকতা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। কিভাবে স্মার্টফোন ইতিবাচকভাবে ব্যাবহার করা যায় এটা শিক্ষার্থীসহ সবাইকে বুঝাতে হবে। পরিবারে যারা অভিভাবক আছে তাদের নীতিগতভাবে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।
অনলাইন জুয়ার নেতিবাচকতা সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেমিনারের আয়োজন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনে শিক্ষামূলক বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করা শেখানো এবং স্মার্টফোনকে একটি শিক্ষামূলক যন্ত্র ভাবতে শেখাতে হবে। সরকারিভাবে বিভিন্ন বিদেশি জুয়ার এপ্লিকেশন অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
অতিদ্রুত এই অনলাইন জুয়া নামক বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন না করলে এর শাখা-প্রশাখা গজিয়ে স্থায়ী রূপ লাভ করবে। সরকারের এই বিষয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অনলাইন জুয়া- এক নীরব মহামারির নাম! মুক্তমত মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত