রাজনীতি হোক জনকল্যাণমূলক
১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১০
এলিট শ্রেণীই এ দেশের সবকিছু। তারা যেভাবে চায় সেভাবে দেশটি পরিচালিত হয় বা হচ্ছে। রাজনীতি হতে হবে দেশের কল্যাণের জন্য। যেখান থেকে উপকৃত হবে পুরো জাতি। কিন্তু বর্তমান রাজনীতিবিদরা দেশ এবং জাতির কল্যাণের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। তারা রাজনীতিকে বানিয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের পথ। ব্রিটিশরা ২০০ বছরে যা করতে পারেনি, এদেশের স্বার্থান্বেষী, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক রাজনীতিবিদরা ৪৯ বছরেই তা করে ফেলেছে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি হতে হবে উদার-নৈতিক, সংকীর্ণমনা নয়। তবে এমন রাজনীতিবিদ সমাজে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখনকার রাজনীতিকে সবাই মনে করে ক্ষমতা এবং টাকার মহোৎসব। রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারলেই ভুরি ভুরি টাকার মালিক হবে, সবসময় ক্ষমতা নিয়ে চলাফেরা করবে। এমন মানসিকতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের অভাব বর্তমান সমাজে নেই বললেই চলে। বরং অভাব একজন আদর্শিক রাজনীতিবিদের।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন একটি শৃঙ্খলা যা দেশের সরকারের গঠন ও কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দটি প্রায়শই বিপরীত হয় রাজনীতি যা শক্তি বা কর্তৃত্ব অর্জন এবং ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে দেশের প্রশাসনের কার্যক্রমগুলির সাথে।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকারদলের পরিবহণ ধর্মঘট যেন বাংলাদেশের চিরাচরিত রুপ। আবার বিরোধীদল আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরতাল বা অবরোধের মত কর্মসূচি দেয়। এতে জনদূর্ভোগের শেষ থাকে না। একটা গণতান্ত্রিক দেশের জনসাধারণ এমনটা আশা করে না। রাজনীতিবীদদের কাছে আকুল আবেদন রাজনীতি হোক জনকল্যাণমূলক। যেখানে থাকবে না কোনো দূর্ভোগ, কষ্ট, সহিংসতা। এদেশে সুষ্ঠুধারার রাজনীতি কি কখনও ফিরে আসবে না ?
সম্প্রতি বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এতে জনগণকে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অপরদিকে ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে অঘোষিত পরিবহণ ধর্মঘট, লঞ্চ ধর্মঘটেও দূর্ভোগের শেষ ছিল না। শুধু এটাই নয়, বিএনপির বিগত আন্দোলনেও একই অবস্থা ছিল। সব দূর্ভোগ শুধু জনগণের। অথচ জনগণই নাকি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল ক্ষমতার মূল উৎস ? এই উক্তিই যদি সত্য হবে তাহলে কেন জনগণকে দূর্ভোগ পোহাতে হবে ? জনগণকে নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের রাজনীতিবীদ, সরকার, বিরোধীদলকে জনগণ নিয়ে ভাবতে হবে। জনগণের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। তাতে জনসম্পৃক্ততা মিলে। যে দেশের রাজনীতি জনকল্যাণমূলক না, সেই রাজনীতি দিয়ে কি হবে ? টেলিভিশন ও পত্রিকায় চোখ মিললেই দেখা যায়, কর্মসংস্থানে যেতে, রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে সর্বোপরি জরুরি প্রয়োজনে যানবাহনের দূর্ভোগ। এটা খুব কষ্ট ও অসহ্যকর বিষয়।
আমরা এদেশকে একটা সুস্থ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। রক্তমূল্যে পাওয়া এদেশ। তাই দেশপ্রেমিক প্রতিটা রাজনীতিবিদ, সুনাগরিক সুশীল সমাজকে এখন এটা ভাবতে হবে যে আমরা কি চাই? আমরা কি একটা সুস্থ নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই না? কারো ক্ষমতায় থাকা বা কারো ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতে পারেনা। নাগরিক সমাজের সুশীল ব্যক্তিদের দলবাজি ত্যাগ করে দেশের স্বার্থে একটা সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনণের পক্ষে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কথা বলতে হবে। জনগণ চায় শুধুই রাজনীতির জন্য নয়, দেশের জন্যই হোক আমাদের রাজনীতি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা স্নাতক স্তরের পাঠ আরম্ভ করেই রাজনীতির দুটি সংজ্ঞা শেখেন। প্রথমটি হচ্ছে, কে কী পাবে, কখন এবং কীভাবে পাবে, তার পাঠই হলো রাজনীতি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাজনীতি হলো মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দের পাঠ। প্রথম সংজ্ঞাটি হ্যারল্ড লাসওয়েলের, দ্বিতীয়টি ডেভিড ইস্টনের। প্রথম সংজ্ঞায় যা পাওয়ার কথা হচ্ছে, সমাজের চোখে সেগুলো মূল্যবান জিনিস পদ, প্রতিষ্ঠা, সুযোগ ইত্যাদি। আর কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা কী? রাজনীতির দ্বারা যে শাসনতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা-ই ক্ষমতা বা সরকার।
এ দেশে রাজনীতিবিদরা যেন রাজনীতিতে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে। তাতে জনসাধারণ রাজনীতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে অপরদিকে রাজনীতি হবে জনকল্যাণমূলক ও কল্যাণকর। দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন, নচেৎ উন্নয়ন সম্ভব নয়। আবার রাজনীতিবিদদের মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখতেও জনগণের বা জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। কাজেই জনগণ ছাড়া কিন্তু কোনোকিছু ভাবা সম্ভব নয়। রাজনীতি ও জনগণ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাউকে আলাদা করা সম্ভব না। রাজনীতির জন্য যেমন জনগণের দরকার তেমনই জনগণের জন্যেও রাজনীতি দরকার।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাজনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক যে বিষয়টি অধ্যয়ন করেছি বর্তমানে তা বিপরীত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস অথচ এলিটরা জনগণের মাথার উপর কাঁঠাল ভেঙ্গে খায়। তারা জনগণের জন্য ভাবতে চায়না। আসুননা আমরা সকলে জনগণের জন্য, দেশের জন্য, মানবতার জন্য রাজনীতি করি। রাজনীতি হোক জনকল্যাণমূলক, রাজনীতি হোক দেশের জন্য, রাজনীতি হোক মানবতার জন্য।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এজেডএস