করোনা পরিস্থিতি; ফিরতে হবে স্বাস্থ্যবিধিতে
৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৭
চীনে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রনের নতুন উপ-ধরন (বিএফ.৭) এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পরছে। তার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম যখন করোনাভাইরাস পৃথিবীজুড়ে বিস্তার লাভ করে তখন চীন থেকে শুরু হয়ে এভাবেই আমাদের দেশে ছড়িয়েছিল। সুতরাং পূর্ব সতর্কতা অবশ্যই জরুরি। করোনার নতুন এই ধরনটি ওমিক্রনের চেয়ে চারগুণ বেশি সংক্রামক বলে জানা গেছে। বাংলাদেশেও আক্রান্ত থেমে নেই। সবকিছুর ওপর রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। করোনাভাইরাস যাতে না ছড়ায় এজন্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবিধি অবহেলিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই। আমরা সেই লক ডাউনের সময়ে আর ফিরে যেতে চাইনা। এমনিতেই অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা পুষিয়ে উঠতেই সময় লাগছে। করোনা ভাইরাসের শুরুতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বৃদ্ধি পেতে থাকলে লক ডাউন দেওয়া হয়। সেই লকডাউন উঠে গেলে খুব আস্তে আস্তে অর্থনীতি ফের চাঙ্গা হতে থাকে। এখন হাট-বাজার, ভ্রমণ স্পটসহ সর্বত্র স্বাভাবিক জীবন ফিরে এসেছে। কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নূন্যতম আগ্রহও নেই কারো ভেতর। ফলে সামনের বিপদ ঠেকাতে ভ্যাকসিনের সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। করোনার শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বিশ্বজুড়েই। এখনও তাই করা হচ্ছে। কিন্তু এই স্বাস্থ্যবিধি যাদের মেনে চলার কথা সেই সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা একেবারেই কম। এখন তো প্রায় নেই বললেই চলে! অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটা।
করোনা ভাইরাস মানুষের মাঝে যে আতংকের সৃষ্টি করেছে তা থেকে মানুষ স্বাস্থ্যবিধিতে পাকাপাকিভাবে অভ্যস্থ হওয়ার কথা ছিল। যে অভ্যাস মানুষ পালন করতো করোনা ভাইরাস চলে গেলেও। অথচ ঘটছে তার উল্টোটা। বারবার বলা হচ্ছে যে ভ্যাকসিন গ্রহণ করলেও করোনার স্বাস্থ্যবিধি ঠিকঠাক মেনেই চলতে হবে, তা সত্ত্বেও এই অসচেতনতার পরিণতি আমাদের দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, হাত বারবার সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা, হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা বা সংস্পর্শে না আসা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে দেয়া, কাপড় চোপড়সহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত রাখা ইত্যাদি সহ আরো বেশকিছু নিয়ম কানুন। এসব করার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা। তা সত্ত্বেও প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম দফা সংক্রমণ শেষে কোনো দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হয়েছে। যখন মনে হচ্ছে করোনা ভাইরাস বিদায় নিয়েছে তখন নতুন কোনো রোগী পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি এমন একটি বিষয় যা আমাদের প্রতিদিন মেনে চলা উচিত। এটা ছোট থেকে বড় সবার মেনে চলা উচিত। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো নিত্য স্বাস্থ্যবিধি আমাদের এমনিতেই অনুসরণ করা উচিত। এর ফলে আমরা বহু রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। কিন্তু আমরা তা কতজন করি? নিজের সুরক্ষায় করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর প্রথম থেকেই এ কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন হাট বাজারে সবর্ত্র পরিস্থিতি দেখে মনে হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তেমন কোনো আগ্রহ আমাদের মাঝে নেই। মাস্ক ব্যবহারেই চূড়ান্ত অনীহা দেখা যাচ্ছে। এর জন্য জরিমানাও করা হয়েছে। অথচ এটার জন্য কোনো আইনের দরকার ছিল না। সবার নিজের থেকেই মাস্ক পরার উচিত ছিল। তাছাড়া কেবল করোনা থেকে বাঁচতেই মাস্ক ব্যবহার করে না। ধূলাবালি থেকেও মাস্ক আমাদের রক্ষা করে। যা ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সুরক্ষা তো কেবল নিজের নয় বরং এর সাথে পরিবারের সুরক্ষাও জড়িয়ে রয়েছে। তবে আমাদের কারো ভেতর সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। অবশ্য আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে আমাদের উদাসীনতা বরাবরই নিজেদেরই দুর্ভোগের কারণ হয়েছে।
করোনার সময়ে মেনে চলা আবশ্যকীয় স্বাস্থ্যবিধি নিজের জীবনের প্রশ্ন। নিজের সাথে আরো অনেক মানুষের জীবনের প্রশ্ন। কারণ একজন থেকে অনেকে ছড়ায় এই ভাইরাস। অথচ সামান্য একটু অভ্যাস পরিবর্তন করলেই আমরা নিজেদের সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখতে পারি। করোনা মহামারীর শুরুর পর থেকে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা,বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এসব স্বাস্থ্যবিধির অনুশীলন করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এটা করা সম্ভব কেবল স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে। কিন্তু আমাদের সেই চিরাচরিত জীবন যাপন আমরা আজও ছাড়তে পারিনি। এই করোনার সময়েও আমরা প্রায়ই স্বাস্থ্যবিধি মানতে অস্বিকার করছি। করোনা শুরুর পর কিছুটা নিয়মের মধ্যে জীবন যাপন করলেও দিন গড়ানোর সাথে সাথে আমাদের মধ্যে থেকে সেই প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। যা আমাদের দেশের জন্য আশংকাজনক হতে পারে। আমরা নিজেদের দায়িত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। দীর্ঘদিনে আমরা হয়তো করোনা ভাইরাসের বিষয়টিই ভুলতে বসেছি। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এখনো পৃথিবীতে করোনা আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করা আমাদের নিজের জন্য এবং অন্যের জন্য হুমকি হতে পারে। একটি প্রাণও তো মহামূল্যবান। একমাত্র সচেতনাই পারে এর থেকে রক্ষা করতে। আর উদাসীনতা পারে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে। আমাদের করোনার প্রতি এই গা-ছাড়া ভাব থাকলে করোনা নতুন করে সংক্রমণ হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি যেন আর কোনোদিনই আগের মতো না হয় তা বজায় রাখতে হলে সবার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। এটা আমাদের উপলদ্ধি করতে হবে।
লেখক: কলামিষ্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অলোক আচার্য করোনা পরিস্থিতি; ফিরতে হবে স্বাস্থ্যবিধিতে মুক্তমত